Thank you for trying Sticky AMP!!

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন: সংস্কারের প্রস্তাব

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘হিন্দু উত্তরাধিকার আইন: সংস্কারের প্রস্তাব’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৩০ মার্চ ২০২১। আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

অংশগ্রহণকারীরা

স্বপন ভট্টাচার্য

প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

আরমা দত্ত

সংসদ সদস্য

নিমচন্দ্র ভৌমিক

সভাপতি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

ছায়া ভট্টাচার্য

নারীবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সিনিয়র ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

শাহীন আনাম

নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)

অমিতা দে

সদস্য, নারীপক্ষ

নিনা গোস্বামী

পরিচালক (প্রোগ্রাম),আইন ও সালিশ কেন্দ্র

সুভাস ঘোষ

চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েটেড বিল্ডার্স করপোরেশন লি. (এবিসি)

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য

সভাপতি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মহিলা ঐক্য পরিষদ

রিনা রায়

পরিচালক (প্রোগ্রাম), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালক

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের আলোচনাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতে অনেক আগেই এ আইন হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আইনের সংস্কার করতে হয়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে এই আইনের সংস্কার প্রয়োজন। এটা সম্পত্তির অধিকারের বিষয়। কেউ বলবে ঠিক আছে, কেউ হয়তো দ্বিমত পোষণ করবে।

কিন্তু এমন একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। পরিবারের সবাই যেন তার ন্যায্য অধিকার পায়। কেউ যেন তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটা নিশ্চিত হোক—আমরা এটাই চাই। অনেক বিশেষজ্ঞ আলোচক আছেন। তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। সবার আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই এ আইনের সংস্কারের গ্রহণযোগ্য দিক বেরিয়ে আসবে।

শাহীন আনাম

শাহীন আনাম

হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনে একটি জনমত সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যখন আন্দোলন করেছি, তখন সব নারীর অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছি। আমাদের সংবিধানে নারীর সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। নারীর অধিকার, সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি আমরা বড় করে দেখছি। একজন মেয়ে জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে থাকে পরিবারে তার ভাইয়ের থেকে তার গুরুত্ব কম। প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এটা আছে।

বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের সম্পত্তি দেওয়া হয় না। এই রীতি চলে আসছে। কিন্তু যতটুকু জেনেছি সেটা হলো, আইনে ও ধর্মে হিন্দু নারীদের সম্পত্তি দিতে কোনো বাধা নেই। আমরা জানি, কয়েকটি সংগঠন অনেক বছর ধরে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নারীপক্ষ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন এ বিষয়ে কাজ করছে। আমাদের কাজ ছিল জনমত সৃষ্টি করা। সমাজের তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু আমরা কোথাও তেমন দ্বিমত দেখিনি। তাহলে আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রাষ্ট্রের কাছে কেন এই দাবি করব না।

পারিবারিক ও অন্য ক্ষেত্রে কেন নারীরা সমান অধিকার পাবে না? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেন একজন মেয়ের তার ভাইয়ের মতো অধিকার থাকবে না। হিন্দু পূর্ণাঙ্গ বিবাহ আইনের জন্য এক লাখ নারীর সই সংগ্রহ করেছিলাম। তারপরও শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন করতে পারিনি। তবে হিন্দু বিবাহের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছি। এটাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা চেষ্টা করেই যাব হিন্দু পূর্ণাঙ্গ বিবাহ আইন পাস করতে। এখন বাংলাদেশের সব নারীর দাবি, মা–বাবার সম্পত্তির ওপর তঁাদের সমান অধিকার থাকবে।

রিনা রায়

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন আইনের খসড়া প্রণয়নে সহায়তা করে আসছে। বিবাহ নিবন্ধন, বিবাহবিচ্ছেদ ও ভরণপোষণ—এই আইনগুলোতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার দাবি মূলত আসে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হিন্দু নারীদের কাছ থেকে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনগুলো গ্রাম পর্যায়ে যখন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নারীদের সঙ্গে পারিবারিক আইন অনুসারে নারীর অধিকার বিষয়টি আলোচনা করে, তখন প্রশ্ন ওঠে হিন্দু নারীদের আইন অনুযায়ী কী অধিকার রয়েছে।

২০০৭ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায় গঠন করা হয় ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি কোয়ালিশন। শুরু থেকেই এই কোয়ালিশনের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। গ্রাম পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই কোয়ালিশন একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইনের (বিবাহ নিবন্ধন, বিবাহবিচ্ছেদ ও ভরণপোষণ) খসড়া প্রণয়ন করে। কিন্তু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সংসদে ২০১২ সালে শুধু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করা হয়। এরপর থেকে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা সারা দেশে মানুষকে বিবাহ নিবন্ধন সম্পর্কে সচেতন করা, বিবাহ রেজিস্ট্রারদের নিয়ে সভা ও বিবাহিত দম্পতি ও তঁার পরিবারের সদস্যদের বিবাহ নিবন্ধন করতে সহায়তা করা ও আগ্রহী করে তোলার কাজ করছি।

পরবর্তী সময়ে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধিকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল আইন সহায়তা দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন যে তিনি উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করতে চান, যদিও তিনি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের কথা উল্লেখ করেননি।

আমরা অর্থাৎ ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ২০১৮ সাল থেকেই হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। আইনটি প্রণয়নের লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন দেশের উত্তরাধিকার আইন পর্যালোচনা করি এবং এখানে ভারতীয় উত্তরাধিকার আইনটিকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কোয়ালিশনের সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘ দুই বছর আলোচনার মাধ্যমে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়।

খসড়া উত্তরাধিকার আইনটি নিয়ে ৭টি বিভাগে কর্মশালার আয়োজন করা হয়, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের আইনজীবীরা, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা, স্থানীয় পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিন্দু নেতারা অংশগ্রহণ করেন। এ আইন নিয়ে আমরা কমিউনিটিতে আলোচনা করেছি। হিন্দু নারী-পুরুষ এর পক্ষে মত দিয়েছেন। সবার মূল্যবান মতামত খসড়া আইনটিতে যুক্ত করা হয়।

বিভাগীয় পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে খসড়া আইনটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হয়। পরে এই খসড়া আইনটি পর্যালোচনা করে মতামত প্রদানের জন্য সম্মানিত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিনহাকে প্রদান করা হয় এবং তঁাদের মতামত খসড়া আইনটিতে যুক্ত করা হয়।

খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে সব উত্তরাধিকারীর মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে সম–অধিকারের নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। কারণ, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা ও সিডও দলিলের নীতির ভিত্তিতেই বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা পরিষদ নব্বইয়ের দশক থেকেই ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড প্রণয়নের জন্য দাবি জানিয়ে এসেছে, যেখানে পারিবারিক আইনে সব ধর্মের সব নারীর কথাই বলা হয়েছে। যেহেতু এই আইনের প্রস্তাবটি এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি, তাই হিন্দু নারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই কোয়ালিশন হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের পরিবর্তন এবং নারীর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে।

নারীর উত্তরাধিকার শুধুই সম্পত্তির অধিকার বা অর্থনৈতিক অধিকার নয়। উত্তরাধিকার নারীর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করে। এখানে সম্পত্তির পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমানে পরিবারে নারীর প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ নেই, আমরা প্রত্যাশা করি এই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত হবে। আজকের আলোচনায় হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করা হলো

নিমচন্দ্র ভৌমিক

নিমচন্দ্র ভৌমিক

সবাই হিন্দু আইন সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন, এ জন্য আমি আনন্দিত। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের খসড়া নিয়ে রিনা রায় তাঁর আলোচনায় বিস্তারিত বলেছেন। এটা আইন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে। কয়েক দশক ধরে এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার অগ্রগতিও হয়েছে। একটা আধুনিক রাষ্ট্রে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হবে, এটাই নিয়ম। আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে তা–ই হয়েছে। একসময় নারীর ভোটাধিকার ছিল না। সেটি অর্জিত হয়েছে। আমাদেরও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে।

ভারতে প্রবর্তিত ১৯৫৬ সালের আইন ২০০৭ সালে আরও বিকশিত হয়েছে। ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপি এটাকে শুধু মেনে নিয়েছে এমন নয়, এটাকে কার্যকর করার চেষ্টা করছে। নেপালে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি। সেখানকার প্রেসিডেন্ট নারী। নেপালে নারীর অধিকার থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সন্তানের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের বিষয় এসেছে, তখন বলা হয়েছে যে যিনি সম্পত্তির মালিক, তাঁর ওপর নির্ভর করবে তিনি কীভাবে সম্পত্তি বণ্টন করবেন। কিন্তু এমন এক সময় ছিল যখন নেপালে এগুলো আলোচনা করা যেত না।

অন্য সম্প্রদায়কে টেনে এনে বিভেদ সৃষ্টি করার দরকার নেই। গণতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে এই শিক্ষাই গ্রহণ করতে হবে যে গণতন্ত্রকেই আমাদের বিকশিত করতে হবে। আমি বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করি। বাংলাদেশে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি ছিলাম। সংগঠনে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। রিনা রায় বলেছেন, নিঃসন্তান দম্পতির ক্ষেত্রে একজন মারা গেলে আরেকজনের ওপর অধিকার জন্মাবে। এটা তো স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। দুজনে মারা গেলে তঁাদের সন্তানেরা কীভাবে পাবে, সেটাই আলোচনা।

একটা বিষয় এসেছে ধর্মান্তরিত হলে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও পরিবারে যুক্ত হবে। নতুন ঝামেলা হবে। এটা নিজেদের মধ্যেও হতে পারে। আমি মনে করি, জনমত গঠনের বিষয়টি চালিয়ে যেতে হবে। ভারতের পশ্চিম বাংলায় নারী পুরোহিত আছেন। এ বিষয়গুলো আরও বেশি করে সমানে আনতে হবে।

২০১৮ সালে আমার স্ত্রী মারা যায়। আমার মেয়ে মুখাগ্নি করতে গেলে কেউ কেউ নিষেধ করার চেষ্টা করেছেন। তখন আমি বললাম, ভারত ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও সুজাতা কৈরালের বাবা মারা গেলে তঁারাই তো মুখাগ্নি করেন। শ্রাদ্ধ করেন। তখন তঁারা আর কিছু বলেননি। হিন্দু বিয়েতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও এটা সমাজে প্রভাব ফেলছে।

আমরা মুখে যেটা বলি, সেটা বিশ্বাস করে আমাদের কাজ করতে হবে। আন্দোলনটা চালিয়ে যেতে হবে। নিশ্চয়ই অচিরেই সফলতা আসবে। ভারত যদি সম–অধিকারের আইন করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য করতে অসুবিধা কোথায়? এ বিষয়ে আমার ফোরামগুলো থেকে যেন ইতিবাচক মত দেয়, সে জন্য চেষ্টা করব।

সুভাস ঘোষ

সুভাস ঘোষ

কয়েক দশক ধরে এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সম্পত্তির সম–অধিকারের বিষয়টিতে কারও দ্বিমত আছে বলে আমার মনে হয় না। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের খসড়া আমি আমার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু কারও মধ্যে সম্পত্তি সমবণ্টনের বিষয়ে বিরোধ দেখিনি।

একটা বিষয় অনেকের মধ্যে কাজ করছে, সেটা হলো ধর্মান্তরিত হওয়ার ভয়। সামাজিকভাবে সংখ্যালঘুরা কিছুটা সমস্যার মধ্যে থাকে। আমি মনে করি, আইনে এমন একটি ধারা রাখতে হবে যে ছেলে বা মেয়ে কেউ যদি ধর্মান্তরিত হয়, তাহলে সে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। খসড়া উপস্থাপনায় সব সুন্দরভাবে এসেছে। এটা আইনে পরিণত হওয়া উচিত।

স্বপন ভট্টাচার্য

স্বপন ভট্টাচার্য

আমি জনাব সুভাষ ঘোষের সঙ্গে একমত যে কোনো ছেলে বা মেয়ে যদি ধর্মান্তরিত হয়, তাহলে সে তার মা–বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। আইনগতভাবে উত্তরাধিকার সম্পত্তির ওপর তাদের কোনো অধিকার থাকবে না। তাহলে মনে হয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের মধ্যে যে ভীতি রয়েছে, সেটা দূর হবে।

আমি দশম সংসদে বিষয়টি তুলেছিলাম। একই মায়ের গর্ভজাত ছেলেসন্তান সম্পত্তির অধিকার পাচ্ছে, মেয়েসন্তান পাচ্ছে না। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েরা মা–বাবা, স্বামী, সন্তান কারও সম্পত্তির অধিকার পাচ্ছে না। এই অমানবিক বিষয় দূর করা উচিত। আমি মনে করি, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের সমান অধিকার থাকতে হবে। আইনের সংশোধন করে সন্তানদের সম–অধিকার দেওয়া হোক।

আমি মনে করি, আপনারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। শতাব্দী ধরে একটি জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, এটা হতে পারে না।

আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের যুক্তি হলো, এই আইন করা হলে ধর্মান্তরিত সন্তানের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। এভাবে তাদের সম্পত্তি বেহাত হতে পারে। এ ধারণা অমূলক। আমার মনে হয়েছে, বিষয়টি আইন দিয়ে রোধ করা সম্ভব। আমি সংসদে এটি নিয়ে বিল আনার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি।

দেশে আজ বিভিন্নভাবে নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। সম্পত্তির অধিকার না থাকায় হিন্দু নারীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভর করে জীবন কাটাতে হয়। এ জন্য অনেক সময় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়ে। তাই হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করা উচিত। সম–অধিকার দেওয়া উচিত। তবে আইনে এমন একটি বন্ধন থাকবে, কোনো কারণে যদি কোনো সন্তান ধর্মান্তরিত হয়, তাহলে সে তার উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। উত্তরাধিকার হিসেবে সে কোনো সম্পত্তির অধিকার পাবে না। হিন্দু আইন সংস্কারের প্রতি আমার সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।

অমিতা দে

অমিতা দে

হিন্দু আইন সংস্কারের বিষয়টি ১৯৮৩ সালে আমাদের কাছে খুব জোরালোভাবে আসে। অন্যান্য সম্প্রদায়ের নারীর অধিকার কী আছে, আমরা অনেকেই সেটা জানতাম না। সব সময় একটা বিষয় শুনে এসেছি যে হিন্দু প্রভাবশালীদের জন্য এ বিষয়টা আলোচনা করা সম্ভব হয় না। সে বাধা এত দিনে আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি। আমাদের ভাবতে হবে, সত্যি যদি আমরা নারীর অধিকার চাই, তাহলে আমাদের এ আইন করতে হবে।

আজকের উপস্থাপনার সঙ্গে আমরা নারীপক্ষ গভীরভাবে জড়িত। উপস্থাপনায় এসেছে, একজন অভিভাবক সর্বোচ্চ তাঁর অর্ধেক সম্পত্তি উইল করতে পারবেন। কিন্তু কেউ যদি সম্পূর্ণ সম্পত্তি উইল করতে চান, তখন একটা জটিলতা হতে পারে। এ বিষয় ভাবা প্রয়োজন। কোনো উত্তরাধিকারী যদি দেশান্তরি হন, সে ক্ষেত্রে কী হবে। এসব বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা জরুরি।

সারা দেশে নারীপক্ষের ৫৫০টি নেটওয়ার্ক আছে। তাদের মাধ্যমে আমরা কাজ করছি। তারা এ বিষয়ে সচেতন। আমাদের হিন্দু নেতাদের আরও জোরালো ভূমিকা আশা করছি। তাঁরা যেন এ বিষয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।

প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে আমাদের দ্রুত আইনমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এ আইন কখন থেকে কার্যকর হবে, সেটাও ভাবতে হবে। আশা রাখি, এ আইন অবশ্যই বাস্তবায়িত হতে হবে।

নিনা গোস্বামী

নিনা গোস্বামী

আমার একটা প্রশ্ন, ধর্মান্তরিত কি শুধু মেয়েরাই হবে, ছেলেরাও হতে পারে। ধর্মান্তরিত ছেলেরা কি উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাচ্ছে? তাই হিন্দু আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে ধর্মই একমাত্র কারণ হতে পারে না। শুধু নারীর জন্য ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টা আসা ঠিক নয়। এ সমস্যা নারী-পুরুষ সবার জন্য। তাই সবাইকে চিন্তাভাবনা করে এখানে একটা মতামত দিতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রে এসে একজন নারী জানান, তাঁরা পরিবারে অমতে বিয়ে করেন। তাঁদের সংসার ভালো চলছিল। কিন্তু হঠাৎ তাঁর স্বামী মারা যান। এই নারী তখন উপায়হীন হয়ে পড়েন। তাঁর স্বামী তাঁর শ্বশুরের কাছ থেকে থাকার জায়গা পেয়েছিলেন। মেয়েটি যখন তাঁর স্বামীর বাড়িতে যান, তখন তাঁকে সেখানে উঠতে দেওয়া হয়নি। মেয়েটি যখন তাঁর বাবার বাড়ি যান, সেখানে ভাইয়েরা তাঁকে জায়গা দেননি। মেয়েটির মা–বাবা ছিল না। তখন নিরুপায় হয়ে তিনি আমাদের কাছে আসেন। আমরা তাঁকে একটা ব্যবস্থা করে দিই।

একজন মানুষের জন্মের সঙ্গে তার মানবাধিকার সৃষ্টি হয়। মৃত্যু পর্যন্ত এটা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। তাঁর ভাই পুরো বাড়িতে বাস করছেন। তাঁকে থাকতে দিলেন না। এটা কতটা অমানবিক, সেটা ভাবা যায় না।

আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের দেখতে হচ্ছে, সমাজের একজন নারীর কোথাও দাঁড়ানোর ঠাঁই নেই। এই নারী এ সমাজের
প্রতীকী। এমন হাজার হাজার নারী রয়েছেন, সমাজে যাঁদের দাঁড়ানোর জায়গা নেই। আজকের আয়োজন এসব নারীর ঠিকানা দেওয়ার জন্যই।

২০০৭ সাল থেকে শুরু করে আজও আমরা বলে যাচ্ছি। আইনের একটা খসড়া করেছি। জানি না কবে পাস হবে। আমি চাই, আমাদের কন্যারা জন্ম থেকেই সেই অধিকার পাবে, যে অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। শুধু ধর্মের নাম দিয়ে নারীর অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নারী যদি সম্পত্তির সম–অধিকার পায়, এটা হবে তার জন্য সবচেয়ে বড় অধিকার। সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই জায়গাগুলো অবশ্যই সমানে আনতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিষয়টি আমার কাছে খুবই সংবেদনশীল। আজ থেকে সাড়ে তিন দশক আগে আমার পিতা বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য এ নিয়ে লেখালেখি করতেন। সে সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ভীষণভাবে ধাক্কা এসেছিল। পরবর্তী সময়ে আমার মা চিত্রা ভট্টাচার্য, সাবেক সাংসদ, মহিলা পরিষদের সহসভানেত্রী এ বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তাই এ বিষয় আমার খুব কাছের ও জানা। আজ যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে একটা খসড়া আইনের পর্যায়ে এসেছে। প্রভাবশালী নেতারা এ আইনের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। এটা আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে। আমরা হয়তো বহুদিনের একটা সমস্যা সমাধানের দিকে এগোচ্ছি।

আমি কতগুলো বাস্তব বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। কতটুকু উইল করতে বা দান করতে পারবে, আবার উইল ও দানের অর্থ এক কি না, সেটা দেখতে হবে। সম্পত্তির অধিকারের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের সমাধান করার বিষয়টি। হিন্দু নারীদের দত্তক ও অভিভাবকত্ব নেওয়ার অধিকার নেই। এখানেও বৈষম্য রয়েছে। হিন্দু নারীরা দুর্বল সম্প্রদায়ের নারী এবং নারী হিসেবে তাঁরা শোষণের মধ্যে আছেন। আমি মনে করি, হিন্দু নারীরা আরও বিভিন্ন ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ আইনের সঙ্গে সেগুলোকেও সামনে আনতে হবে। ভারতে এটা হয়েছে সিভিল কোর্টের মাধ্যমে। আমাদের দেশেও এভাবে সমাধান হতে হবে। অন্য সব সমস্যার সঙ্গে সর্বজনীনভাবে সমাধানের দিকে এগোলে বিষয়টি টেকসই হবে বলে মনে করি।

ছায়া ভট্টাচার্য

ছায়া ভট্টাচার্য

হিন্দুপ্রথা অনুসারে মা–বাবা মারা গেলে বাবার সম্পত্তি শুধুই ভাইয়েরা পায়। দেশে প্রায় সব সম্প্রদায়ের নারীরা কোনো না কোনোভাবে বঞ্চিত হন। কিন্তু হিন্দু নারীরা জন্ম থেকেই বঞ্চিত হতে থাকেন। সমাজে কোথাও তাঁর দাঁড়ানোর যেন জায়গা থাকে না। বাংলাদেশে আমরা সমমর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো সম–অধিকার তো দূরের কথা, আমরা হিন্দু নারীরা সাধারণ অধিকারটুকু পাই না।

আমি আশা করব, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন থেকে যে খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা যেমন বসবাস করছি, তেমনি আমরা যেন বাবা ও স্বামীর বাড়ি অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারি। আমি ব্যক্তিগতভাবে হিন্দু আইন সংস্কারের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা খসড়াটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করবেন বলে আশা করি।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য

কিছুদিন আগে আমরা বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ একটা সভা করেছিলাম। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, সাংসদ আরমা দত্ত উপস্থিত ছিলেন। আরও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়সহ কতগুলো বিষয় ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছে। আমি মনে করি, একটা আইন হলে পরে সেটা পরিবির্তন করা অনেক কঠিন। তাই শুরুতেই আইনের সব বিষয় ভালোভাবে দেখা প্রয়োজন। যেন কোনো ভুল না থাকে। তাহলে পরবর্তী সময়ে সবাই এ আইনের দ্বারা উপকৃত হবে।

হিন্দু নারীদের ঠিকানা নেই। সত্যিকার অর্থে তঁাদের একটা ঠিকানা দরকার। আমরা যেকোনো ধরনের সহযোগিতা আপনাদের করতে রাজি আছি।

ধরা যাক, এক পরিবারে দুই ছেলে। তাদের একজনের মেয়ে আছে। অন্যজনের ছেলে আছে। মেয়ের বাবার মৃত্যু হলে ওই মেয়ে কিছু পাচ্ছে না। তাহলে এই মেয়েটি কোথায় যাবে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ রাখবেন, যেন সবার গ্রহণযোগ্য একটি আইন আমরা পেতে পারি।

আরমা দত্ত

আরমা দত্ত

আজকের এই দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ও চিত্রা ভাট্টাচার্যকে। কারণ, তঁারা এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। আজ এ বিষয়টি একটি আইনের খসড়া পর্যায়ে এসেছে। আমাদের অনেক সমস্যা আছে, সব আমরা একসঙ্গে সমাধান করতে পারব না। আমাদের একটা একটা করে কাজ করতে হবে। মানবসভ্যতায় কখনো একসঙ্গে সব সমস্যার সামাধান হয়নি। ধাপে ধাপে হয়েছে।

বাংলাদেশে নারীরা কিছুই পায় না। আমরা শূন্যে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা আমাদের সব অধিকারের কথা বলব। কিন্তু কোথা থেকে বলব। আমার তো আগে দাঁড়াতে হবে। পায়ের নিচে মাটি থাকবে হবে। তারপর বিয়ের নিবন্ধন, বিবাহবিচ্ছেদ,অধিকার-মানবাধিকার—সবই আসবে। আমরা প্রত্যন্ত গ্রামের লাখ লাখ নারীর কথা কি শুনেছি? অনেক কথা বলা যায়। সব কথা এ আলোচনায় বলার দরকার নেই।

আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কারে একমত। অধিকার আদায়ে নিজের দায়িত্বে দাঁড়াতে হবে। আমাদের বাবা-ভাইদের নিয়ে এগোতে হবে। তঁাদের বলতে হবে, আপনার সন্তানকে, আপনার বোনকে এত অসহায় করে যাবেন না। আজকের আলোচনার একটাই মূলকথা, সেটা হলো, হিন্দু আইন সংস্কার করে নারীদের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ফিরোজ চৌধুরী

বাংলাদেশে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সংস্কার সময়ের দাবী। এ আইন সংস্কারের বিষয়ে আলোচকেরা গুরুত্ব দিয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

সুপারিশ

  • হিন্দু নারীরা সম্পত্তি পান না। এই রীতি চলে আসছে। কিন্তু আইনে ও ধর্মে হিন্দু নারীদের সম্পত্তি দিতে কোনো বাধা নেই।

  • আন্দোলনটা চালিয়ে যেতে হবে। নিশ্চয়ই দ্রুতই সফলতা আসবে।

  • কোনো হিন্দু নারী যদি ধর্মান্তরিত হন, তাহলে সম্পত্তিপ্রাপ্তির বিষয়টি কীভাবে চূড়ান্ত হবে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।

  • হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েরা মা–বাবা, স্বামী, সন্তান কারও সম্পত্তির অধিকার পাচ্ছেন না। এই অমানবিক বিষয়টি দূর করা উচিত।

  • একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার যেমন হিন্দু নারীরা পান, তেমনি বাবা-মা ও স্বামীর বাড়িতে যেন তাঁরা অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারেন রাষ্ট্রের এ বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

  • প্রভাবশালী হিন্দু নেতাদের আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তাঁরা যেন এ বিষয়টিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।

  • আইন সংস্কার করে হিন্দু নারীদের প্রথমে ভূমির অধিকার দিতে হবে। তাহলে তঁারা অন্য অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারবেন।