Thank you for trying Sticky AMP!!

অফলাইনে গোরু!

অলংকরণ: আরাফাত করিম

গরু না, গোরু কিনতে বেরোলেন মোতাব্বির সাহেব, গাবতলী হাটের দিকেই রওনা দিলেন। অনলাইনে কেনায় তিনি ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না, তাই অফলাইনে গরুর হাটের দিকে তাঁর পদযাত্রা। অনলাইনে কেনায় ভরসা না পাওয়ার একটা কারণ অবশ্য আছে। বছর দশেক আগে চাকরিসূত্রে তিনি বিদেশে ছিলেন বেশ কয়েক বছর, এক ইউরোপিয়ান কান্ট্রিতে। ঘটনাচক্রে সেখানেও কোরবানি ঈদ (ইদ?) এসে হাজির! অনলাইনে একটা ছাগল (ছাগোল না তো আবার?) অর্ডার দিলেন। বিদেশ–বিভুঁইয়ে গরুর ঝামেলায় আর গেলেন না। পরদিন ছাগল আসবে, তিনি বাসায় ছুরি–কাঁচি ধার দিচ্ছেন, হাড্ডি কাটার জন্য একটা চায়নিজ মিনি কুড়ালও জোগাড় করে ফেললেন। ঠিকই পরদিন ছাগল এল, তবে প্রমাণ সাইজের বাক্সবন্দী হয়ে। মানে ওরাই জবাই করে চামড়া ছাড়িয়ে মাংস পিস পিস করে কেটে, প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিয়েছে আস্ত ছাগল। এটাই নাকি ওখানকার অনলাইন ছাগল-গরু বিক্রির নিয়ম! 

যাহোক, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গরুর হাটে মোতাব্বির সাহেব একটা গরু পছন্দ করলেন। ছোটখাটোর মধ্যে তরতাজা স্মার্ট গরুই বটে। 

: দাম কত?

: দাম পরে, আগে জিনিস দেখেন, করোনা ফ্রি গরু। এই যে মাস্ক পরায়া রাখছি।

: আহা, দামটা শুনি।

: যান, বউনির কাস্টমার, আপনের লাইগা একদাম ৬৫ হাজার। 

মোতাব্বির সাহেব আতকে উঠলেন। তিনি শুনেছেন করোনার সময় গরুর দাম নাকি সস্তা যাচ্ছে। এই গরু ৬৫ হাজার চাচ্ছে!

: ৪০ হাজারে দেবে? 

ভয়ে ভয়ে বললেন তিনি। 

: আপনে কাস্টমার, যা ইচ্ছা দাম কইতে পারেন। তয় একটা কথা কই, এই গরু সাজাইতেই খরচা গেছে ১০ হাজার। মাস্কের দামই তো দুই হাজার ট্যাকা, অর্ডার দিয়া বানাইতে হইছে, গরুর মুখ কত বড় দেখছেন? লগে রিজেন্টের সার্টিফিকেট আছে...।

: মানে?

: ক্যান, টিভিতে দেখেন নাই? শাহেদ আঙ্কেলের রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা কইরা দিছে। সিলগালা করার আগের দিন এই গরুর কাগজ বাইর করছি...এই গরু করোনা ফ্রি! লয়া যান। আইচ্ছা যান, আপনের লাইগা দুই হাজার ট্যাকা মাইনাস। মাস্কের দাম আর নিলাম না।

মোতাব্বির সাহেব আর দাঁড়ালেন না। সোজা বাসায় চলে এলেন। সঙ্গে করে ফ্রি ফ্রি আনলেন ১০২ ডিগ্রি জ্বর! বাসায় সবাই আঁতকে উঠল। নির্ঘাত করোনা বাঁধিয়ে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আলাদা ঘরে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হলো তাঁকে। স্ত্রী সতর্ক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন...

: গন্ধ পাচ্ছ নাকে?

: পাচ্ছি।

: কিসের গন্ধ?

: গোবরের।

: যাক। 

স্ত্রী নিশ্চিত হলেন। গন্ধ যখন পাচ্ছে তার মানে করোনা না, এমনি জ্বর। মুখে বললেন...

: গোবরের গন্ধ তো পাবেই, গরুর হাট থেকে এসেছ বলে না, ওটা আসছে তোমার মাথা থেকে।

: মানে? 

: মানে মাথায় গোবর না থাকলে এই সময় লকডাউন না মেনে কেউ গরুর হাটে যায়? সরকার অনলাইনে গরু-ছাগল কিনতে বলেছে, আর তুমি কিনা... 

ব্লা ব্লা ব্লা...স্ত্রীরা রেগে গেলে যা যা বলে সবই ঝেড়ে তিনি দিলেন। তবে এরপরও স্ত্রী রিস্ক নিলেন না। হোম সার্ভিস করোনা টেস্ট করালেন। অনেক টাকা গেল। তা যাক, পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া দরকার যে কোভিড–১৯-এর ভাইরাসে ধরেনি।

শিগগিরই জানা গেল কোভিড-১৯-এর টেস্ট নেগেটিভ। তবে ডেঙ্গু পজিটিভ। মর জ্বালা। বাসার সবাই বিরক্ত হলো, বিশেষ করে অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েরা। কোনো মানে আছে? করোনার সময় ডেঙ্গু, ফ্যামিলিতে মান-ইজ্জত আর কিছু রইল না। মোতাব্বির সাহেবও যেন এবার শরমিন্দায় পড়লেন! 

অবশ্য দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। কোরবানির টাকা পুরোটাই ‘করোনা ত্রাণ তহবিলে’ দান করলেন। বেঁচে থাকলে সামনে আরও কোরবানি দেওয়া যাবে। এক বছর গরুর মাংস না খেলে কী হয়? এবার না হয় গোরুই চলুক। 

মোতাব্বির সাহেব খেয়াল করলেন, তাঁর ফাইভে পড়া নাতনিটা গভীর মনোযোগে ছোটদের ঈশপের গল্প (ইশপের গল্প?) পড়ছে। কে জানে হয়তো ‘আঙুর ফল টক’ সেই গল্পটাই পড়ছে বেছে বেছে, দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মোতাব্বির সাহেব।