Thank you for trying Sticky AMP!!

এসি ল্যান্ডের মাটির মায়ার গল্প

২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবরের এই িবশেষ প্রতিবেদন ছাপার পর মডেল িহসেবে সরকার এটি গ্রহণ করে

চার বছর আগের কথা। রাজশাহীর একজন স্কুলশিক্ষক আবদুর রোকন মাসুম একটি খবর দিলেন। জেলার পবা ভূমি অফিসের এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) তাঁর বসার জন্য অফিসের নিচে একটি টিনশেড বানিয়েছেন। নাম দিয়েছেন ‘মাটির মায়া’। সকালে এসে সেখানেই বসেন। আগে যেখানে দালালেরা জটলা করত। সেবাগ্রহীতারা ভূমি অফিসে ঢুকতে গেলেই তাঁদের খপ্পরে পড়তেন। এসি ল্যান্ড দালাল তাড়িয়েছেন। দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার জন্য দেড় বছর খেটেখুটে অফিসের সমস্ত নথি ক্রম অনুযায়ী সাজিয়ে ট্যাগ লাগিছেন। এখন সেখানে চাহিবামাত্র সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

পবা ভূমি অফিসের পরিবর্তনের এই খবর শুনে আমি ওই শিক্ষককে সঙ্গে করেই ভূমি অফিসে যাই। তখন বিকেল। পুরোটা দেখার জন্য পরে আবার একদিন যাই। বাইরে লোকজনের কাছে খোঁজ নিয়ে মনে হলো, দেশে মানুষে মানুষে বিরোধের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে ভূমিবিরোধ। ভূমি অফিসের কাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণেও এই বিরোধের নিষ্পত্তি সহজে হয় না। পবা ভূমি অফিস সেই জায়গায় হাত দিয়েছে। এক বছর ঘুরে যে কাজ হয়নি, এক দিনে বা এক সপ্তাহেই তা হয়ে যাচ্ছে। তার জন্য বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে না।

রাজশাহীর পবা উপজেলার ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন শাহাদত হোসেন। দেখলাম অফিসের নিচে টিনশেডে বসে ডাক্তারের মতো একজনকে ডাকছেন আর তাঁর কথা শুনছেন। কাউকে তাৎক্ষণিক সমাধান দিয়ে দিচ্ছেন। জটিল বিষয় হলে তাঁর হাতে একটা টোকেন ধরিয়ে দেখা করার তারিখ লিখে দিচ্ছেন। তাৎক্ষণিক সেই সেবা পেয়ে কোনো কোনো ভুক্তভোগী কেঁদে ফেলছেন।

এই ভূমি অফিসের সেবার দৃষ্টান্ত নিয়ে এসি ল্যান্ডের ‘মাটির মায়া’ শিরোনামে ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম আলোতে শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। এরপর যেন প্রশাসনের চোখ খুলে যায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সারা দেশের সব সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের কপিসহ চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, পবা উপজেলা ভূমি অফিসের আদলে সব ভূমি অফিসে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্যোগ বাস্তবায়নের সময়কালও বেঁধে দেওয়া হয়।

এই মাটির মায়ার উদ্ভাবক শাহাদত হোসেন বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, সারা দেশে শতাধিক সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে এখন মাটির মায়ার আদলে সেবা কার্যক্রম চলছে। পরবর্তী সময়ে এই সেবা আরও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শাহাদত হোসেনের পরবর্তী সহকারী কমিশনার নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ গত বছর এই সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে নতুন একটি অ্যাপ যুক্ত করেছেন, যার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতারা বাড়িতে বসেই আট ধরনের ভূমিসেবা পাচ্ছেন। তাঁদের স্লোগান হচ্ছে ‘এসি ল্যান্ড ইন পিপলস পকেট’ (জনতার পকেটে এসি ল্যান্ড)। এই অ্যাপের মাধ্যমে এই অফিসে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। সেবাগ্রহীতারা বাড়িতে বসেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারছেন। সম্প্রতি নূরুল হাই বদলি হয়ে গেছেন, কিন্তু সেবা চলছে। গত এক বছরে সাড়ে ৯ হাজার ই-নামজারির আবেদন পাওয়া গেছে। সব কটিই নিষ্পত্তি হয়েছে।