Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রথম আলোর চর বিদ্যালয়ে শতভাগ পাস

পাস করার সংবাদে আনন্দ আর ধরে না মুক্তামণির। বিদ্যালয় থেকে দৌড়ে বাড়িতে খুশির সংবাদটা জানিয়ে আবার বিদ্যালয়ে ফিরে আসে। সে কুড়িগ্রামের প্রথম আলোর চর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিএসসি) পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠল। এ সময় সে তার অনুভূতি প্রকাশ করে জানায়, ‘সবাই পাস করেছি, এটাই আনন্দ। যত কষ্ট হউক, আমি লেখাপড়া করব। আমাদের বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী খুলেছে, সেখানেই পড়ব। এ বিদ্যালয় না থাকলে লেখাপড়া হতো না। হয়তো বিয়ে হয়ে যেত।’
এ রকম স্বপ্ন শুধু মুক্তামণির নয়, চরের শত শত দরিদ্র শিক্ষার্থীর। যারা একসময় শিক্ষার কথা ভাবতে পারত না, প্রথম আলো ট্রাস্ট বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তাদের লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের প্রথম আলোর চর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিএসসি) শতভাগ পাস করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ২০১৩ সালে নয়জন পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। এদের সবাই এ, বি গ্রেড পেয়ে পাস করেছে। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়েছে।
মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর চরে উচ্চবিদ্যালয়ের অভাবে শিক্ষার্থীরা ঝরে যেত। এদের কথা চিন্তা করে গতবার ষষ্ঠ শ্রেণী খোলা হয়েছে। এবার সপ্তম শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। আশা করি শিক্ষার্থীরা আগামীতে এখান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। চরের প্রতিটি মানুষ প্রথম আলোর কাছে এমন প্রত্যাশা করে।’
শিক্ষক মাহাফুজ এলাহী জানান, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক কারিকুলাম অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা প্রায় সবাই ভালো ফল করে আসছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীতে ২৫ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৭০, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৬০, তৃতীয় শ্রেণীতে ৫৫, চতুর্থ শ্রেণীতে ৩৬, পঞ্চম শ্রেণীতে ২২, ষষ্ঠ শ্রেণীতে নয়জন, সপ্তম শ্রেণীতে ছয়জনসহ মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৩ জন।
পত্রিকা প্রকাশের পর থেকেই প্রথম আলো এ চরে বন্যার্তদের ত্রাণ দেওয়াসহ নানা সেবামূলক কাজ করে। ২০০৫ সালে এখানকার বাসিন্দরা এ চরের নাম দেয় ‘প্রথম আলোর চর’। এই চরে ২০১০ সালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শিশু শ্রেণী দিয়ে বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এই শিশুরা পরবর্তী বছর প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হলে ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। উল্লেখ্য, চরের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আউয়াল ৩৩ শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক ও একজন আয়া রয়েছেন। পাঠদানের জন্য তিনটি বড় ঘর, টিউবয়েল, শৌচাগার ও শিক্ষকদের বিশ্রামাগার রয়েছে। এতে সামিট গ্রুপ সহায়তা করছে।
অভিভাবক ও জমিদাতা আবদুল আউয়াল, সোবহান মিয়া ও মো. ফজল উদ্দিন বলেন, চরে ১৬টি পরিবার থেকে হয়েছে সাড়ে তিন শ পরিবার। চর বড় হয়েছে আগের থেকে চার গুণ। ফসলে ভরে গেছে। অভাব দূর হয়েছে। বিদ্যালয় না থাকলে আমাদের ছেলেমেয়েরা মূর্খ থেকে যেত। দেশ-বিদেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিদ্যালয়টি দেখে মন্তব্য করেন, এত দুর্গম এলাকায় এমন চমৎকার উদ্যোগের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।