Thank you for trying Sticky AMP!!

বটমূলে বর্ষবরণ

রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ছবি: প্রথম আলো

১৯৬৭ সালের দিকে আমরা যখন বটমূলে নববর্ষ উদ্​যাপন করার প্রস্তুতি নিতাম, তখন নানা রকমের বিবেচনা সবার মাথায় ঘোরাফেরা করত। এক ভাবনা ছিল কার্ড তৈরি নিয়ে। হাতে হাতে অল্প কিছু কার্ড লিখে-এঁকে তৈরি করা হতো। সেসব কাদের যে দেওয়া হতো, তা আর মনে পড়ে না। পেয়ারু, এখনকার জাদুঘরের পিআরও, আনোয়ারুল হক তখন আর্ট কলেজের ছাত্র। ওর দলবল নিয়ে এসে রাত জেগে কার্ড তৈরি করত।

ছাত্র ইউনিয়ন কিংবা ওদেরই সংস্কৃতি সংসদের একটা কার্ড দেখেছিলাম—তাতে একটি অশ্বত্থপাতার ভেতরের শিরা-উপশিরার জাল এঁটে দেওয়া হয়েছিল বাঁ ধারের ফাঁকা পৃষ্ঠায়। চোখে লেগেছিল খুব। একবার পেয়ারু একটা মাটির হাঁড়িতে পানি দিয়ে কিছু অশ্বত্থপাতা ভিজিয়ে রাখল, দিন দুই কি তার বেশিও হতে পারে। রাতে এসে সেই হাঁড়ি থেকে পাতা বের করে পচা অংশ খসিয়ে দিব্যি হাড়-পাঁজরা খুলে নিল। খুশি হয়ে দেখি, এই তো সেই জিনিস। সেবার অনেকগুলো কার্ডে ওই অশ্বত্থপাতার কঙ্কাল এঁটে নববর্ষের আমন্ত্রণলিপি তৈরি হলো। আর্ট কলেজের ছেলেরাই ডিজাইন করছে, আবার লেখাগুলো লিখছে। অনেক রাত পর্যন্ত দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে যেতাম। তিনের ই (৩/ই) আজিমপুর কলোনির সরকারি ফ্ল্যাটে চলত এ সমস্ত কাণ্ডকারখানা। বছরের পর বছর কার্ডের, ছায়ানটের অনুষ্ঠানের যাবতীয় সাজসজ্জার দায়িত্ব নিয়েছে আর্ট কলেজের ছেলেরা।

কার্ড তৈরি করার ধুম তো অনুষ্ঠানের তারিখ কাছে এলে তখন শুরু হতো। তার বহু আগে থেকেই চলত গানের মহড়া। তারও আগে গানের নির্বাচন। নতুন দিনে মনের আবরণ সরিয়ে বিকশিত হয়ে ওঠার আবেগটাই সেসব দিনে জাগত বেশি। পাকিস্তান আমলের কথা। ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও/ আপনাকে এই লুকিয়ে রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও’ গান দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে ভালো লাগত। সেই সকাল সাড়ে ছয়টাতে। কোনোবার আলো ফুটত, কোনোবার মেঘের আড়াল থেকে ফুটি-ফুটি করত। আর একখানা গান জাহিদুর রহিম একক কণ্ঠে গেয়েছে একাধিকবার, ‘নব আনন্দে জাগো নবরবিকিরণে/ শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে’। পরে আমরা সম্মেলক কণ্ঠেও এ গান গেয়েছি কতবার।

‘এসো হে বৈশাখ’ গানটিতেও বছরের আবর্জনা দূরে ফেলার কথা, অগ্নিস্নানে শুচি হওয়ার কথা, জরা ঘোচানোর কথা ছিল। কিন্তু বহুব্যবহৃত এই গানখানি আমরা এড়িয়ে যেতাম। যদিও খবরের কাগজগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, প্রতিবছরই লিখে বসত যে প্রতিবছরের মতো এবারেও সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘এসো হে বৈশাখ’ গান দিয়ে বটমূলে নববর্ষকে বরণ করল ছায়ানট। স্বাধীনতার আগে নতুন গান বেছে বের করার আগ্রহটা ছিল প্রবল।

‘সুন্দরের বন্ধন ছেঁড়ার আন্দোলন’, প্রথম আলো, ১৪ এপ্রিল ১৯৯৯