Thank you for trying Sticky AMP!!

বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয়

শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা

বছর ঘুরে ফিরে এল শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। পূর্ণ হলো ২৫৬০ বুদ্ধবর্ষ। মহামতি গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের পর বুদ্ধবর্ষ গণনার শুরু। গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন ৮০ বছর বয়সে। আজ থেকে (২৫৬০+৮০), ২৬৪০ বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। খ্রিষ্টের জন্মের ৬২৩ বছর আগে সিদ্ধার্থের (পরবর্তী সময়ে গৌতম বুদ্ধ) জন্ম হয়। তিনি ৩৫ বছর বয়সে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে বুদ্ধত্ব জ্ঞান বা বোধিজ্ঞান লাভ করেন। আর মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন (৬২৩-৮০) খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে।

.

বুদ্ধপূর্ণিমা বিশ্ব বৌদ্ধদের বৃহত্তম ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। ইদানীং বিশ্বব্যাপী ঘটা করে বুদ্ধপূর্ণিমা পালিত হতে দেখা যায়। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এবারও বুদ্ধপূর্ণিমা উদ্যাপন করা হচ্ছে। সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের মতো মহান ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা এখন সর্বজনীন উৎসব।
সম্প্রতি বাংলাদেশেও সাড়ম্বরে বুদ্ধপূর্ণিমা উদ্যাপিত হচ্ছে। এদিনে সরকারি ছুটি আছে। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধদের একাংশ বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগও পান। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী তাদের সঙ্গে বুদ্ধপূর্ণিমার শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন। কোনো কোনো জাতীয় পত্রিকা বুদ্ধপূর্ণিমার বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং নিবন্ধ প্রকাশ করে। সম্প্রতি কিছু কিছু টিভি চ্যানেলে বুদ্ধপূর্ণিমা-বিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে দেখা যায়। তবে তা সংখ্যায় অতি নগণ্য। অথচ বুদ্ধপূর্ণিমার তাৎপর্য ও গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ এবং গণমাধ্যমে আরও বেশি আলোচনা হওয়া উচিত।
ত্রিপিটকে উল্লেখ আছে, জগৎ অনাচার, পাপাচারে নিমজ্জিত হলে জগতের কল্যাণে এবং মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখাতে জীবের দুঃখমোচনে সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ জাত-পাতের চরম বৈষম্য, ধর্মের নামে প্রাণযজ্ঞ আর হিংসায় মানুষ যখন মেতে উঠল, মানুষকে আলোর পথ দেখাতে বুদ্ধ ধরায় এসেছিলেন। তিনি মানুষকে কেবল মানুষ হিসেবে দেখেছিলেন। তাঁর সাধনা ও সুখ কামনা ছিল সব প্রাণীর জন্য।
মানুষ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র প্রজাতির কীটপতঙ্গ পর্যন্ত সবার সুখ কামনা করার মতো উদার শিক্ষা তিনি দিয়েছেন। ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক’ এ কথা বুদ্ধের সৃষ্টি, আমাদের কারও নয়। বুদ্ধের এই মহান সৃষ্টিকে আমরা আমাদের করে নেওয়ার সাধনায় কতটুকু সফল এবং সার্থক হতে পেরেছি, সেটাই বিবেচ্য।
করণীয় মৈত্রীসূত্রে বলা আছে, ‘যে সকল প্রাণী দৃশ্য বা অদৃশ্য, যারা দূরে বাস করে বা কাছে বাস করে, যারা জন্মেছে বা জন্মিবে অর্থাৎ যারা মাতৃগর্ভে অথবা ডিম্বের ভিতরে আছে যেখান থেকে পরে বহির্গত হবে, তারা সকলে সুখী হউক।’
বুদ্ধ নিজে যা আচরণ করতেন, তা জীবজগৎকে শিক্ষা দিতেন। প্রায়োগিক জীবনে বুদ্ধের সর্বজনীন ও বিশ্বমৈত্রীর এই শিক্ষাকে প্রতিফলন ঘটানোর বিকল্প নেই। ক্ষুধায় কাতর কোনো ব্যক্তিকে সুখী হতে বললে সে সুখী হবে না। কবির ভাষায়, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। ক্ষুধার্তজনের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারলে সে সুখানুভব করতে বাধ্য। রোগগ্রস্ত ব্যক্তির প্রয়োজন চিকিৎসা। তাকে রোগ থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারলে সে অবশ্যই সুখী হবে। আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দিতে হবে। কারও আশ্রয়টুকু ছিনিয়ে নিয়ে তাকে সুখী হতে বললে তার সুখী হতে পারার কথা নয়।
বুদ্ধ সব জীবের সুখ কামনা করার মাধ্যমে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে জীবের সুখ বিনষ্ট হয় এমন কর্ম করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং জীবের সুখ আনয়ন ও বৃদ্ধি হয় এমন প্রশংসনীয় কর্মই করতে হবে। ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক’ কেবল মুখে আওড়ালে ফল পাওয়া যাবে না। তাই বুদ্ধের পঞ্চনীতি অনুশীলনের বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নিজে সুখী হতে এবং অপরকে সুখী করতে হলে পঞ্চনীতিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্রে কিংবা বিশ্বময় আজ যত অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এর সবকিছুর মূলে রয়েছে পঞ্চনীতির লঙ্ঘন। হত্যা, অদত্ত বস্তু গ্রহণ, মিথ্যা কামাচার, মিথ্যাচার, মাদক সেবন ও বাণিজ্য—এসব নৈতিকতাবিরোধী কাজের কারণেই যত অশান্তির জন্ম হচ্ছে। যেখানে অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা, সেখানে সুখ বিরাজ করতে পারে না। তাই প্রাত্যহিক জীবনে কেবল প্রার্থনামুখী না হয়ে আচরণ তথা অনুশীলনমুখী হতে হবে।
শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে দেশবাসী সবাইকে মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি। শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয় ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক’।
প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু: রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহারের আবাসিক পরিচালক।