Thank you for trying Sticky AMP!!

বৈশাখী শোভাযাত্রা

মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢাকার আগেই শুরু হয়েছিল যশোরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে পাস করে যশোর ফিরে গিয়ে মাহবুব জামাল শামীম, হিরণ্ময় চন্দ শুরু করেছিলেন চারুপীঠ নামের আর্টের স্কুল। ঢাকার মতো রাজধানী শহরেও এমন একটা আয়োজন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি আমরা। ১৯৮৯ সালে চারুশিল্পী সংসদে বসে ঢাকায় পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণের শোভাযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমি তখন চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি। চারুকলা থেকে পাস করা শিল্পীরা চারুশিল্পী সংসদের সদস্য ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তত্কালীন ছাত্ররাও যুক্ত হন এই আয়োজনে। আমাদের সঙ্গে যুক্ত করলাম সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ফয়েজ আহমদকে। ফয়েজ আহমদের সঙ্গে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ছিল। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু অর্থ জোগাড় করে দিলেন।

এই আয়োজনের পুরো পরিকল্পনা ছিল শিল্পী ইমদাদ হোসেনের। প্রথমে কিন্তু এর নামকরণের কথা ছিল বৈশাখী শোভাযাত্রা। আলাপ-আলোচনার পর আমরা যশোরের মঙ্গল শোভাযাত্রা নামটিই ঠিক রাখলাম। 

যত দূর মনে পড়ে, তখন চারুকলার অধ্যক্ষ ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। সেই সময়টা তো খুব কার্যকরী দায়িত্ব পালন করেছিল সাইদুল হক জুইস, তরুণ ঘোষ, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য্য।

মনে পড়ে, প্রথম প্রথম আমরা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিয়ে আসতাম। মনে আছে তখন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আমি টোকাই করি। বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীর কাছ থেকে জোর করে টাকা নিয়ে এসেছিলাম। টাকা দিয়েছিলেন নিউ এজ সম্পাদক শহীদুল্লাহ খানও। ফতেহ আলী চৌধুরীও কিছু টাকার জোগান দেন। তখন আলাউদ্দিনের মিষ্টির কার্টন করি আমি, গিয়ে ধরেছিলাম তাদেরও। মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম (বীর প্রতীক) আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন আমাদের। শুরুতে না হলেও আমাদের এই মঙ্গলচেতনার সঙ্গে যুক্ত হন অনেকেই। সবাই সবার জায়গা থেকে বিপুল উদ্দীপনায় সাধ্যমতো কাজ করত। কাজটা করতে হবে, এটাই ছিল তখনকার মূল ব্যাপার।

প্রথম বছর শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা হয় ১০টি ছোট ঘোড়া আর বিশাল হাতি। ৫০টি মুখোশ তৈরি করা হয়েছিল। তখন দেশে অগণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চলছিল। আমরা চেয়েছিলাম, সেখানে একটা আঘাত করতে। আর তাই শোভাযাত্রায় রাক্ষসকে স্বৈরশাসকের প্রতিরূপ হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার মাথায় রাখতে হয়েছে আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি কি না, সেটাও। শোভাযাত্রার শুরুতে লোকসমাগম কম ছিল। কিন্তু অল্প পরেই সেটা একটা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

আমাদের এই শোভাযাত্রা বিশ্বের বিস্ময়। ১৯৮৯ সালে বিশ্ববিখ্যাত নায়িকা অড্রে হেপবার্ন ঢাকায় আসেন। বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার ঠিক কয়েক দিন পর। তখনো চারুকলার সর্বত্র শোভাযাত্রায় বহন করা জিনিস সাজানো ছিল। সেগুলো দেখে তিনি পাগল হয়ে যান।

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে। আমরা আমাদের আনন্দকে সবখানে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম।


‘মঙ্গল শোভাযাত্রা যেভাবে শুরু হলো’, প্রথম আলো, ১৪ এপ্রিল ২০১২