Thank you for trying Sticky AMP!!

সংগীতে জাগিয়ে তোলা

আব্বাসউদ্দীন

শিল্পী আব্বাসউদ্দীন কী মাপের শিল্পী ছিলেন, কতটা জনপ্রিয় ছিলেন, কত হাজার গান রেকর্ড করেছেন, মানুষের হৃদয়কে তাঁর কণ্ঠ ও গান দিয়ে আজও ছুঁতে পেরেছে কি না বা সফল হয়েছিলেন কি না, তিনি নিছকই একজন গায়ক ছিলেন, নাকি তাঁর অসংখ্য গান দিয়ে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন, সত্যিকার অর্থে বাঙালিদের, বিশেষ করে নজরুলের সঙ্গে মুসলমান বাঙালিদের, তাঁদের সংগীত দিয়ে জাগাতে পেরেছিলেন কি না—এগুলো সব মূল্যায়ন করবেন আব্বাসউদ্দীনের শ্রোতারা, দেশের আপামর জনসাধারণ, যাঁরা এখনো তাঁর গান শুনলে মুগ্ধ হন—তাঁরা।

আমি বলছি আমার আব্বা, আব্বাসউদ্দীনের কথা। শুধু তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি, তাঁর অশেষ স্নেহ-মমতা পেয়েছি, প্রতিটি কাজে তাঁর সাহচর্য ও সাহায্য তো একজন সন্তানের বেশি প্রয়োজন, সবচেয়ে বেশি বন্ধুত্ব, সেইটে দিয়েছেন আব্বা, অন্তত যত দিন তিনি বেঁচেছিলেন। হ্যাঁ, আরও বন্ধুবান্ধব যে ছিল না আমার, তা নয়; কিন্তু আব্বার সঙ্গে সব-সব-সব কথা অকপটে বলতে পারতাম, আর আমার আব্বা? সবচেয়ে ভালো বন্ধুর মতো মন দিয়ে শুনতেন এবং মজার মজার মন্তব্য করতেন; মন খারাপ থাকলে ভালো করে দিতেন।

আব্বা সিনেমা দেখতে খুব ভালোবাসতেন। আমাদের হয়তো বলে গেছেন, ‘মা গো, তোমরা পড়াশোনা করো, আমরা একটা সিনেমা দেখে আসি।’ পরদিন হয়তো আমাকে আর আব্বাসী ভাইকে পয়সা দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন সেই সিনেমা দেখতে। ছবিতে গান ভালো হলে সেই ছবি আব্বা তিনবার, চারবার দেখতেন। আমাকেও সঙ্গে নিতেন। আমাদের ছোটবেলায় সুচিত্রা-উত্তম ছিলেন নামকরা নায়ক-নায়িকা আর সন্ধ্যা মুখার্জির গান ছিল আব্বার ভীষণ প্রিয়। তাঁর রেকর্ড বাজারে বেরোলেই কিনে নিয়ে এসে আমাকে সেই গান শিখে ফেলতে বলতেন। পরে আবার তাঁকে সেই গান গেয়ে শোনাতে হতো। হুবহু না তুললে আবার দেখে নিতে বলতেন।

শিল্পীরা যে ভীষণ আত্মকেন্দ্রিক হন—এটা আমরা সবাই জানি। তাঁরা নিজের সাফল্য ছাড়া আর কারও কথা ভাবেন না। কে কাকে টেক্কা দেবেন, এটাই সবার ভাবনা। আব্বার দেখতাম উল্টোটা। নিজে তো বিরাট শিল্পী। প্রথমে আধুনিক শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ—তারপর নজরুলের বিভিন্ন ধরনের গান, বিশেষ করে ইসলামি গান, যা সব দেশের ঘুমন্ত মুসলমানকে জাগিয়ে তুলল। তারপর পল্লিসংগীত, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, চটকা, জারি-সারি, মুর্শিদি—সব ধরনের গান তিনি গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে এনে শহরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিলেন এবং শ্রোতারা তা ভীষণভাবে গ্রহণ করল। কিন্তু তিনি একা গেয়েই ক্ষান্ত হননি। গ্রাম থেকে আরও প্রতিভাবান শিল্পীদের কলকাতায় এনে তাঁদের কণ্ঠে সেসব গান রেকর্ড করালেন। কারও মধ্যে সামান্যতম প্রতিভা দেখলেই তাঁকে উত্সাহে ভরিয়ে দিতেন। এসব কথায় প্রখ্যাত শিল্পীরা, যেমন সোহরাব হোসেন, বেদারউদ্দীন, আবদুল আলীম, আবদুল লতিফ আর এই রকম বহু শিল্পীর নাম করা যেতে পারে, যাঁরা আব্বার কাছে উত্সাহ পেয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।


‘আমার আব্বা’, প্রথম আলো, ১৪ এপ্রিল ২০১১