Thank you for trying Sticky AMP!!

৭ মার্চ কেন গুরুত্বপূর্ণ

৭ মার্চের যে সভা, তা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমার সৌভাগ্য যে সেদিন আমি মঞ্চে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবেও, এবং একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবেও। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্টও ছিলাম আমি। আমি ঢাকা মহানগরের পুরো নির্বাচনে টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলাম। তিনি দুটো আসন থেকে নির্বাচিত হলেন। ঢাকার পুরোনো শহর ও তেজগাঁও-টঙ্গী। আমাকে তিনি বললেন, আমি তেজগাঁও-টঙ্গী আসনটি ছেড়ে দিলাম। সেখানে আমি তোমাকে মনোনয়ন দিচ্ছি। সেভাবেই আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছি। ৭ মার্চের আগে, বিশেষ করে তাজউদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু একটা লিখিত বক্তব্য দেবেন, সেটা লিখিত আকারে রাখা দরকার প্রেসকে দেওয়ার জন্য। এবং সেদিন রেসকোর্স ময়দানের যে অবস্থা, লাখ লাখ মানুষ চারদিক থেকে এসেছে। আমি একটা বক্তব্য লিখে দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি তো লিখিত বক্তব্য দেব না, আমি আমার মতো বক্তব্য দেব। পয়েন্টসগুলো ফরমুলেট করো।’ তাঁর ভাষণ তো আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। বক্তব্যের জন্য আমরা যে গাইডলাইন পেয়েছিলাম, তা হলো আমরা রক্তপাত এড়ানোর জন্য জানিয়ে দিতে চাইব, যদি সংবিধান তৈরির পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরা স্বাধীনতার পথে যাব।

৫ মার্চ সম্ভবত লিখিত বক্তব্যটি তৈরি করেছিলাম। একটি ইংরেজি ভার্সনও তৈরি করা হলো। তাজউদ্দীন সাহেব মূল দায়িত্বে ছিলেন। আমি তাঁর সহায়ক হয়ে কাজ করেছি। সেই দিন যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটা হলো তাজউদ্দীন ভাই মঞ্চে থাকবেন এবং লিখিত বক্তব্যটা দেখতে থাকবেন, যদি কোনো রকম সংশোধনের প্রয়োজন থাকে, তবে উনি সেটা সংশোধন করে প্রেসকে দেবেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সে কথাগুলো এসেছিল। বঙ্গবন্ধু যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন আমাদের তৈরি করা খসড়াটা বঙ্গবন্ধুর হাতে ছিল কি না, তা মনে করতে পারছি না। তবে তাজউদ্দীন ভাইয়ের হাতে ছিল। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে যাওয়ার আগে সেটা দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু লিখিত ভাষণ দেননি। নিজের মতো করে ভাষণ দিয়েছিলেন। খসড়ায় থাকা কথাগুলোও তাঁর মনে ছিল। তবে তাঁর ভাষণের যে অংশটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’—এটা ওনার কথা। তিনি চমৎকারভাবে কবিতার মতো করে বলেছেন।

এভাবে এটা লেখার বিশেষ কারণ হলো, ওরা যদি বলে আমরা এককভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি, তাহলে গুলি চালাবে। সেদিনকার প্রস্তুতি যদি দেখতেন। সব জায়গায় মেশিনগান ফিট করা। শাহবাগ হোটেলের ছাদেও ছিল মেশিনগান। যেখানেই জনগণের জমায়েত, সেখানেই মেশিনগান। যুদ্ধ-প্রস্তুতির কোনো বাকি রাখে নাই। ওই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিক অর্থে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে গুলি ছাড়া আর পথ নাই।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা অনেক ঐতিহাসিক ভাষণ ছেপেছে। যেমন আব্রাহাম লিংকনের গ্যাটিসবার্গ অ্যাড্রেস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চিলের বক্তৃতা। ওখানে চিহ্নিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটাও সেই পর্যায়ের। যে বক্তৃতাগুলো ইতিহাস সৃষ্টি করে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল সে রকমই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণ।

প্রথম আলো, ২৬ মার্চ ২০১১

কামাল হোসেন: জ্যেষ্ঠ আইনজীবী; বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী