Thank you for trying Sticky AMP!!

'স্যালাইন ও ওষুধ তৈরি করে রেখেছিলেন স্যার'

লেখক হাসান হামিদ।

মানুষের জীবনে সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ ‘মা’ ও ‘বাবা’। আর তৃতীয় শক্তিশালী শব্দটি হলো ‘শিক্ষক’। আমার ক্ষুদ্র জীবনে, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আমি যে কয়জন মানুষের সাহচর্য ও স্নেহ পেয়েছি, শিক্ষা গ্রহণে যাদের দেখে বারবার মুগ্ধ হয়েছি; তাঁদের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া কঠিন। তবে একজন আমার প্রিয় বলে, বাকিরা অপ্রিয় তা কিন্তু নয়। কাউকে বাদ দিয়ে আসলে প্রিয়-অপ্রিয়র বিচার হয় না। আমি যার কথা আজ বলব, তিনি আমাদের নাসির উদ্দীন স্যার।

আমার খুব গর্ব হয়, আমি স্কুল জীবনে তাঁর মতো সৎ ও মেধাবী পরামর্শদাতা পেয়েছিলাম। আমার মনে আছে স্যার আমাদের সামাজিক বিজ্ঞান, কখনো কখনো বাংলা ব্যাকরণ এবং নিয়মিত ইসলাম শিক্ষা পড়াতেন। আমি মোটামুটি সব নোট করতাম, লিখে পড়তাম। আমার সেই সব নোট, দিস্তা দিস্তা লেখা স্যার খুব যত্ন করে পড়ে দিতেন, সম্পাদনা করে দিতেন। কোনটি দরকার, কোনটি দরকার নেই—তা বুঝিয়ে দিতেন। সেসব নোটের কিছু কিছু এখনো আছে আমার কাছে। অসংখ্য রচনায় এখনো স্যারের কলমের আঁচড় আমাকে পুরোনো দিনে নিয়ে যায়। আসলে তিনি ছিলেন এক অনুপম ব্যক্তিত্ব। তাঁর পরামর্শ ও স্নেহ আমি অনুভব করি সব সময়।

শিক্ষক নাসির উদ্দিন।

আমি যে স্কুলে পড়েছি, সেটি সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের একটি সরকারি স্কুল। নাম তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের লাগোয়া টিনশেড একটি ঘরে থাকতেন আমাদের কয়েকজন শিক্ষক। নাসির স্যারও সেখানে থাকতেন। আমাদের অবাধ বিচরণ ছিল স্যারদের কক্ষে। যখন-তখন যেতাম। পরামর্শ, শিক্ষা, স্নেহ—কি না পেয়েছি! নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। নাসির স্যারের কক্ষের টেবিলে জমানো থাকত আমার নোট। ক্লাসের বাইরে স্যার সেগুলো পড়ে দিতেন। তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি। কতখানি সার্থক শিক্ষক হলে এ কাজ করা যায়। আমার মনে আছে স্যার আমার ৮৫টি ভাব সম্প্রসারণ পড়ে দিয়েছিলেন। এই একটি উদাহরণেই বোঝা যাচ্ছে, বাকি বিষয়ের যাবতীয় নোট কি পরিমাণ ছিল! স্যার অনেক সময় দিয়েছেন, এমন শিক্ষক এখন বিরল। জানি না, কোন ভাগ্যবানেরা এখন স্যারের সাহচর্য পেয়ে স্বপ্ন দেখছে বড় হওয়ার।

তাহিরপুরের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কর্মরত ছিলেন নাসির উদ্দিন।

অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার সময় আমার জ্বর ও ডায়রিয়া হয়েছিল। স্যার সেই সময় স্যালাইন ও ওষুধ তৈরি করে রেখেছিলেন। ভাবা যায়? তাঁদের স্বপ্ন ও পরিশ্রমের ফসলেই আমি অসুস্থ হয়েও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম সেসময়। আমার পরবর্তী সাফল্যগুলোও স্যারের উৎসাহের কারণেই এসেছে। হেনরি অ্যাডামসের একটি কথা এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হবে। তিনি বলেছেন, একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেন। কেউ বলতে পারে না তাঁর প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়। বাট্রান্ড রাসেল আরও এক পা এগিয়ে এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, মানুষের সুখী হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার বুদ্ধির এবং শিক্ষার মাধ্যমে এর বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব। ঠিক সেই কাজটিই করেন একজন শিক্ষক। আমার প্রিয় শিক্ষক আমার জন্য পরিশ্রম করে গেছেন নিরলস।

শিক্ষকতার মহান পেশায় স্যারের শিক্ষাদান দীর্ঘদিন ধরে চলুক স্বমহিমায়। আমি স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। আজকের দিনে আমার একটাই প্রার্থনা, পৃথিবীর সকল শিক্ষক ভালো থাকুন।

লেখক: বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত