Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের দিনে খেলার খুশি

২০১৯ বিশ্বকাপের সময় লন্ডনে ঈদের নামাজ শেষে মাহমুদউল্লাহর সেলফিতে একসঙ্গে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার ও কর্মকর্তারা।

২০১৯ সাল, ইংল্যান্ডে তখন বিশ্বকাপ চলছে। ক্রিকেটের মহাযজ্ঞের মধ্যেই রোজার ঈদ পড়ল। আমার মতো বিশ্বকাপ কাভার করতে যাঁরা তখন লন্ডনে, তাঁদের কাছে নিজেদের ঈদের চেয়েও বড় হয়ে উঠল ক্রিকেটারদের ঈদ। দেশের বাইরে ক্রিকেটারদের সেমাই-পায়েসবিহীন ঈদটা কেমন হবে, এ নিয়ে বিস্তর জল্পনাকল্পনা আর কৌতূহল।

ঈদের দিন সকালে টিম হোটেলের সামনে সাংবাদিকদের ভিড়। পার্ক প্লাজা রিভার ব্যাংক হোটেলটি তারকাখচিত, ভেতরে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। তবে কার পোর্চের সামনে সোফা বিছিয়ে আরাম করে বসার ব্যবস্থা আছে। হোটেলের সামনে দিয়ে চলে গেছে আলবার্ট অ্যামব্যাংকমেন্ট সড়ক। রাস্তার ওপারেই টেমস নদী। পারিপার্শ্বিক আবহে ফুরফুরে একটা বাতাস সার্বক্ষণিক প্রবহমান। বিদেশবিভুঁইয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জটলায় ঈদের সকালের ঠান্ডা ঠান্ডা আনন্দ উপভোগে এটুকুই যথেষ্ট মনে হচ্ছিল।

সে অপেক্ষার মধ্যেই ক্রমে তীব্র হয়ে উঠছিল ক্রিকেটারদের ঈদের আমেজ দেখার আগ্রহ। সকালে রিজেন্ট পার্কের সেন্ট্রাল মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়ে এসেছেন ক্রিকেটাররা। এরপরও নিশ্চয়ই কেউ কেউ ঈদের ঘোরাঘুরি করতে বের হবেন।

অপেক্ষা তাঁদের জন্য। সে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটু পর সপরিবার হোটেল থেকে বের হয়ে এলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। না, তাঁদের চলন-বলনে ঈদ ঈদ ভাবটা পাওয়া গেল না। ঈদের বেড়ানো তো নয়, যেন আলস্য কাটাতে ঘর থেকে দু-পা ফেলা!

মাশরাফির মতো দু-একজনের সঙ্গে তবু বিদেশের ঈদে কখনো-সখনো পরিবার ছিল, থাকে। বেশির ভাগ ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা মোটেই সে রকম নয়। বিদেশের ঈদ মানে তাঁদের কাছে প্রিয়জনকে ‘মিস’ করার দিন। দলের মধ্যে ঈদের আবহ আনতে হয়তো বিশেষ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে টিম ম্যানেজমেন্ট, কিন্তু তাতে ‘আসল’ ঈদের আনন্দ কোথায়! ঈদ মানে খুশি আর আনন্দ—এসব ভুলে বিদেশের ঈদের দিনটা হয়ে দাঁড়ায় শুধুই একটা ‘পার করে দেওয়া’র ব্যাপার। সকালে নামাজ পড়তে যাওয়া, খাওয়াদাওয়া। তারপর সারা দিন রুমেই গান শোনা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকে দেশের ঈদের আমেজ নেওয়া। ‘ঈদ মোবারক’ বার্তায় সয়লাব ইনবক্সটাকে নেড়েচেড়ে দেখা।

এবার বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পর বিদেশের ঈদ নিয়ে কথা হচ্ছিল তামিম ইকবালের সঙ্গে। তামিমদের পরিবারে ঈদ কিন্তু একটা ঐতিহ্য। চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ির বাড়িতে সেই ছোটবেলা থেকে তামিমরা ঈদের যে উৎসবমুখর রূপ দেখে এসেছেন, তা নিয়ে গল্পগাথা কম হয়নি। আরও হরেক রকম আনন্দ-ফুর্তির মধ্যে ওই বাড়িতে ঈদের দিনের বিশেষ আকর্ষণ—ছেলে-বুড়ো সবার ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠা।

দেশের বাইরের ঈদের আলোচনায়ও তামিম আগে বললেন দেশের ঈদের কথাই। সে ফিরিস্তি যেন শেষই হতে চায় না, ‘খেলার জন্য বেশ কয়েকটা ঈদই করা হয়েছে দেশের বাইরে। তবে দেশে যখন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করি, সেটা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব হয়ে ওঠে। ঈদের আগের রাতে পরিবারের সদস্যদের কাজে সাহায্য করা বা ঈদের দিন সকালে যে রোমাঞ্চটা থাকে—ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়া, বাসায় এসে নাশতা, বাচ্চাদের ঈদি দেওয়া, যখন ছোট ছিলাম, আমরাই অন্যদের কাছ থেকে ঈদি নিতাম...পুরো ব্যাপারটাই অন্য রকম।’—কথাগুলো বলতে বলতে তামিম যেন ফিরে যাচ্ছিলেন শৈশবে।

অথচ বিদেশে থাকলে এই ঈদটাই হয়ে পড়ে অনুভূতিশূন্য একটা ব্যাপার। তামিমেরই কথা, ‘যখন বিদেশে খেলার মধ্যে থাকি, ঈদের আসল অনুভূতিটা আসে না। বিদেশে অনেকবারই আমরা চেষ্টা করেছি দিনটাকে দেশের মতো আনন্দময় করে তুলতে। একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েছি, সকালে বিশেষ নাশতার আয়োজন করেছি। কিন্তু দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা যে ঈদানন্দ, সেটা কখনো বাইরের ঈদে পাইনি।’

পরিবার, ক্রিকেট আর বন্ধুবান্ধবের বাইরে তামিমের জগৎ খুব বড় নয়। বিদেশের ঈদ নিয়ে তাঁর উপসংহারেও সেই ছবি স্পষ্ট, ‘পরিবারের সদস্যদের ছাড়া ঈদ করতে করাটা আমি অন্তত কখনো উপভোগ করিনি। এটা কোনো ঈদই না।’

তামিম ইকবালের চেয়ে সাকিব আল হাসান অনেক ব্যস্ত মানুষ। দেশের হয়ে খেলা ছাড়াও হিল্লি-দিল্লি করে বেড়ানো লোক। বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর জন্যও বাইরে থাকতে হয়। শ্বশুরবাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে বলে বছরে কয়েকবার সেখানেও যাওয়া-আসা আছে। সেই সাকিবও একবাক্যে বলে দিলেন, ‘বিদেশে ঈদ করা কঠিন।’ তাঁর কাছেও, ‘ঈদ তো পরিবার নিয়ে করার উৎসব। সেটা যখন একা একা করতে হয়, ওই দিনগুলোতে তেমন কিছুই করা হয় না। তবে এটা নিয়ে
এখন আর ভাবি না। কাজের জন্যই তো বাইরে থাকি।’

সেই ‘কাজ’টা মূলত খেলা। ঈদের দিনে যদি খেলা না-ও থাকে, অনুশীলন বা টিম মিটিং থাকে। ধরুন, ঈদের দিন বলে সেসব থেকেও হয়তো ছুটি মিলল, তবু মাথা থেকে কি আর দায়িত্বটা ঝেড়ে ফেলা যায়! তামিম তো বিদেশের ঈদ নিয়ে আফসোস করতে করতে বলেই দিলেন, ‘আসলে তখন তো জাতীয় দায়িত্বে থাকি, ওই দিকেই মনোযোগটা বেশি থাকে।’

দেশের ঈদের জন্য আফসোসটাও তখন কম হয়। খেলার মধ্যেই খুঁজে নেওয়া যায় ঈদের আনন্দ। খেলোয়াড়দের জন্য ঈদের দিনে খেলার খুশিটাও তো বড় এক খুশি!