Thank you for trying Sticky AMP!!

আকসুও জানত!

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্ধকার জগৎ

আইসিসির দুর্নীতি ও নিরাপত্তা ইউনিটকে (আকসু) আনা হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) ফিক্সিংমুক্ত রাখতে। অথচ তারাই কিনা হয়ে গেল ‘শর্ষের ভূত’! দ্বিতীয় বিপিএলের আলোচিত ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস বনাম চিটাগং কিংস এবং ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস বনাম বরিশাল বার্নার্সের ম্যাচ দুটিতে যে স্পট ফিক্সিং হবে, সেটা আগে থেকেই জানতেন ওই সময় বাংলাদেশে উপস্থিত আকসু কর্মকর্তারা। অথচ ফিক্সিং বন্ধে তারা কোনো উদ্যোগ তো নেনইনি, উল্টো সবকিছু যেন নির্বিঘ্নে হতে পারে, সে ব্যবস্থাই নাকি করেছেন!
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হয়েছিল বিপিএল স্পট ফিক্সিংয়ের বিচারের সংক্ষিপ্ত রায়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গতকাল রোববার দেওয়া হলো পূর্ণাঙ্গ রায়ও। বিপিএলের স্পট ফিক্সিংয়ে আকুস কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার কথা বলা আছে তাতে। ওই দুটি ম্যাচে যে স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনা ঘটবে সেটা পূর্বনির্ধারিতই ছিল। সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল কাল বিকেলে ই-মেইলে সব পক্ষের আইনজীবীদের কাছে বিস্তারিত রায়ের কপি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন আজমালুল হোসেন কিউসি ও সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাসেম।
বিস্ময়কর হলেও সত্যি, বিস্তারিত রায়ে দোষী এবং নির্দোষদের পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়া রায়ের ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা হয়েছে আইসিসি ও আকসুর ভূমিকা নিয়েও। বিপিএলকে ফিক্সিংমুক্ত রাখতে আকসুর সঙ্গে প্রায় দেড় কোটি টাকার চুক্তি করেছিল বিসিবি। চুক্তি অনুযায়ী আকসুর বিপিএলকে ফিক্সিংমুক্ত রাখার চেষ্টা তো করারই কথা, সে রকম কিছু হতে দেখলে বিসিবিকে সঙ্গে সঙ্গে জানানোও তাদের দায়িত্বের মধ্যে ছিল। অথচ বাংলাদেশে উপস্থিত আকসুর দুই কর্মকর্তা ভারতের ধরমবীর যাদব ও ইংল্যান্ডের পিটার ওশিয়ে সেটা না করে উল্টো নির্বিঘ্নে ম্যাচ দুটিতে ফিক্সিং করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ রায়ে। তাঁদের ভূমিকার কারণে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার পরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি বলে মনে করেন ট্রাইব্যুনাল।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, ফিক্সিং হচ্ছে জেনেও চুপচাপ থাকার কারণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হয়ে অদ্ভুত এক ব্যাখ্যা দেন আকসু কর্মকর্তা পিটার ওশিয়ে। স্পট ফিক্সিং হতে দিয়ে তাঁরা নাকি দেখতে চেয়েছিলেন, কে কে এর সঙ্গে জড়িত। আকসুর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিপিএলে ফিক্সিংয়ের বিষয়টি আগে থেকে জানতেন বলে ওশিয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে স্বীকার করেছেন৷ ওই সময়ে বাংলাদেশে থাকা আকসুর অপর কর্মকর্তা ধরমবীর যাদভ ট্রাইব্যুনালের সামনে আসেননি। এ ছাড়া বিপিএলের ফিক্সিংয়ের তদন্তে আকসুর দুর্বলতার কারণে আকসুর চেয়ারম্যান স্যার রোনাল্ড ফ্ল্যানাগান ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
যাঁদের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছিল তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই শক্ত তথ্যপ্রমাণ আকসু সরবরাহ করেনি বলে বিস্তারিত রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। যেমন, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কোচ ইয়ান পন্টের ব্যাপারে বিশদ তথ্য চেয়েও তারা পায়নি। আকসুর তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযুক্ত ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের সাক্ষাৎকার চারবার নিলেও ট্রাইব্যুনালকে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র একবারের জবানবন্দি।
৬২ পৃষ্ঠার এবং প্রায় আড়াই শ অনুচ্ছেদের বিস্তারিত রায়ের অনেকটা অংশই স্পট ফিক্সিং এবং এর তদন্ত ও বিচারে আকসুর ভূমিকাসংক্রান্ত। বিচারকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে আইসিসি ও আকসুর ভূমিকা আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে, দুঃখ প্রকাশও করা হয়েছে।’ এসব ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল-প্রধান খাদেমুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে টেলিফোনে তিনি বলেছেন, ‘১৮ জুন স্যাংশন হিয়ারিং (শাস্তির শুনানি) হবে। এরপর আপনারা সবই জানতে পারবেন।’
তবে রায় হাতে পাওয়ার পর ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের মালিক সেলিম চৌধুরীর আইনজীবী নওরোজ এম আর চৌধুরী বলেছেন, ‘রায়ে আকসুর ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় আকসুর কর্মকর্তাদের প্রতিও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।’ প্রায় একই রকম কথা বলেছেন ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন ও মাহবুবুল আলমের আইনজীবী নুরুস সাদিক, ‘তাঁদের (আকসু কর্মকর্তা) কাজ ছিল দুর্নীতি থামানো, দুর্নীতি হতে দেওয়া নয়। তাহলে তাঁরা সেটা না থামিয়ে কেন তা হতে দিলেন—এ ধরনের বক্তব্যও আছে পূর্ণাঙ্গ রায়ে।’
দেশের বাইরে থাকায় এসব বিষয়ে কাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের বক্তব্য জানা যায়নি৷ আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘রায়ের কপি আমাদের আইনজীবীরা পেয়েছেন৷ তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব৷’
এখন অপেক্ষা ১৮ জুনের। বিচারে যাঁরা দোষী প্রমাণিত হয়েছেন তাঁদের শুনানি হবে সেদিন। এর পরই শাস্তি ঘোষণা। আর অভিযুক্তদের মধ্যে যাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁরাও সুযোগ পাবেন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বাদীপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করার। এ ছাড়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকছে সবারই৷