Thank you for trying Sticky AMP!!

আশায় বাঁধি খেলাঘর

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এমন ছবিই প্রত্যাশা নতুন বছরে। সব ঠিক থাকলে ২০২১ সালে ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল।

২০২০। বিশ বিশ। এক জোড়া ২০। দারুণ এক ছন্দোবদ্ধ সংখ্যা। দেখতে সুন্দর। বলতে সুন্দর। লিখতেও আরাম। ক্যালেন্ডারের পাতায়, ডায়েরির কোনায় শুরুতে কী চমৎকার দেখাচ্ছিল বছরটাকে!

কিন্তু ২০২০ সালের এই সংখ্যাগত সৌন্দর্য টিকল মাত্র দেড় থেকে দুই মাস। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকেই ২০২০ উল্টো গলার ফাঁস। একটা পর্যায়ে এসে তো সৃষ্টিকর্তার কৃপা প্রার্থনাই শুরু হয়ে গেল। কবে শেষ হবে অভিশপ্ত ২০২০? আর যে পারা যায় না! ২০২০ সালের করোনাবিষে নীল গোটা দুনিয়া।

মানুষকে ভুগিয়ে, ভয়ে কাঁপিয়ে, শোকে ভাসিয়ে অবশেষে বিদায় নিয়েছে ২০২০। বিদায়ে সাধারণত বেদনার বিউগল বাজে, কিন্তু এই বিদায় দেখাচ্ছে আশার আলো। দেখাচ্ছে নতুন করে বাঁচার সম্ভাবনা, স্বাভাবিক জীবনের হাতছানি। করোনাভাইরাসের টিকা এসে যাচ্ছে বাজারে। এই তো আর কয়টা দিন, তারপর আবার নিশ্চিন্ত জীবন। বাচ্চারা স্কুলে যাবে, খেলোয়াড়েরা মাঠে নামবেন।

করোনাশত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে ঢাল-তলোয়ার সঙ্গে নিয়ে মাঠে অবশ্য খেলোয়াড়েরা এর মধ্যেই নামতে শুরু করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে হয়ে গেল দু-দুটি ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ফুটবলাররা নেপালের সঙ্গে দেশে খেললেন, দোহায় গিয়ে খেললেন কাতারের বিপক্ষে। এখন খেলছেন ঘরোয়া ফুটবল। অন্যান্য খেলাও টুকটাক মাঠে গড়িয়েছে।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ দলের আটটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে হতে পারেনি ভারত, আফগানিস্তান ও ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ তিনটি। ফিফার ‘উইন্ডো’ খুললে আগামী মার্চ থেকে তারিখ পড়ার কথা এই তিন ম্যাচের। র​্যাঙ্কিংয়ে প্রতিপক্ষ তিনটি দলই হয়তো বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, তবু অন্তত ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল

২০২০ যতই বিদায় নিক, খেলাধুলায় ২০২১ সালটা হবে ২০২০ সালের না-মেলা হিসাব মেলানোর বছর। টোকিও অলিম্পিক যেমন; সব আয়োজন শেষ করেও করোনার ধাক্কায় সেটি গেল পিছিয়ে। ২০২১ সালে হবে এখন ২০২০ সালের অলিম্পিক। সেই অলিম্পিকে বাংলাদেশেরও একটা সম্মানজনক প্রতিনিধিত্ব থাকবে। যোগ্যতা অর্জন করেই রোমান সানা টোকিও যাবেন তির-ধনুক কাঁধে নিয়ে। এটাই অনেক বড় বাংলাদেশের জন্য। অলিম্পিকে পদক জয়ের আশা হয়তো অনেক বেশি আকাশকুসুম কল্পনা হয়ে যাবে। কিন্তু এটাও ঠিক, রোমান সানার ইভেন্টের দিন গোপন একটা আশা থাকবে বাংলাদেশের মানুষের মনে। বলা তো যায় না, যদি তাঁর ধনুক থেকে ছুটে যাওয়া তির অলিম্পিকের পদক বিদ্ধ করে ফেলে!

ক্রিকেট খেলাটা অবশ্য এ দেশে সব সময়ই আশার বাতি জ্বালিয়ে রাখে। কখনো সাকিব, কখনো তামিম, কখনো মুশফিক হয়ে ওঠেন আশার মশালচি। করোনার কাঁটায় কণ্টকাকীর্ণ ২০২০ পার করেও ক্রিকেট নিয়ে আশাটা কমেনি।

২০২১ সালেও অনেক ক্রিকেট বাংলাদেশের সামনে। টেস্ট ক্রিকেটের কাঙাল বাংলাদেশ দল ২০২০ সালেই প্রথম এক বছরে ১০টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু করোনা আন্তর্জাতিক সূচির বেশির ভাগটাই খেয়ে নেওয়ায় বাংলাদেশ খেলতে পেরেছে মাত্র দুটি টেস্ট। নতুন বছর সেই অতৃপ্তি ঘোচানোর সুযোগ নিয়েই এসেছে। তবে ক্রিকেটের জন্য বছরটা আসলে টি-টোয়েন্টি রোমাঞ্চের। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

ক্রিকেট আর রোমান সানার শুটিংয়ের বাইরে ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানুষের খেলা নিয়ে মাতামাতি করার আর বেশি সুযোগ নেই। ও হ্যাঁ, ফুটবলের কথা তো বলাই হলো না! নতুন বছরে ফুটবল নিয়ে কিছুটা হলেও আশায় বুক বাঁধা যায়। এ বছর বাংলাদেশ দলের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার কথা এবং সবই দেশের মাটিতে বলেই আশাবাদী হওয়া।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ দলের আটটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে হতে পারেনি ভারত, আফগানিস্তান ও ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ তিনটি। ফিফার ‘উইন্ডো’ খুললে আগামী মার্চ থেকে তারিখ পড়ার কথা এই তিন ম্যাচের। র​্যাঙ্কিংয়ে প্রতিপক্ষ তিনটি দলই হয়তো বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, তবু অন্তত ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।

বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশেই হওয়ার কথা সাফ ফুটবল টুর্নামেন্ট। টুর্নামেন্টের সর্বশেষ চার আসরে বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি। এবার ঘরের মাঠের টুর্নামেন্টে জামাল ভূঁইয়াদের চোখ নিশ্চিতভাবেই থাকবে ফাইনালে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পরিকল্পনা আছে নতুন বছরে ঢাকায় আরও কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের। সেটি সম্ভব হলে এ বছর ফুটবলানন্দে ভাসার উপলক্ষ পেতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রিয় মানুষ।

হকিকে বলা হয় এ দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলা। যদিও অনেক দিন ধরেই মাঠে সেভাবে হকি নেই। আসলে বাংলাদেশে হকি মানেই এখন ‘নেই নেই’-এর হতাশা, ‘আছে’ বলতে মাঠের বাইরের নানা বিতর্ক। সেদিক দিয়ে হকির জন্য ২০২১ সাল সুখের বছর। এ বছর অন্তত দুটি আন্তর্জাতিক আসর বসার কথা মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে। দুটিই অবশ্য ২০২০ সালের বকেয়া। সব ঠিক থাকলে আগামী ১১ থেকে ১৯ মার্চ হওয়ার কথা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এশিয়ার সেরা ছয় দল খেলবে এতে। বাংলাদেশ দল অবশ্য খেলবে এবারই প্রথম। আয়োজনের অভিজ্ঞতা তো প্রথমই হবে। এরপর ১ থেকে ১০ জুলাই হওয়ার কথা জুনিয়র এশিয়া কাপ হকি। করোনামুক্তির আশায় শুরু করা ২০২১ তাই হতে পারে বাংলাদেশের হকির পুনর্জাগরণের বছরও।

করোনামুক্তির শর্ত অবশ্য জুড়ে থাকবে খেলা নিয়ে প্রতিটি আশার সম্ভাবনাতেই। রোমান সানার তির-ধনুক, তামিম-সাকিবের ব্যাট-বল কিংবা জামাল ভূঁইয়াদের ফুটবল—এই সবকিছু আনন্দের উপলক্ষ হতে পারবে তখনই, যখন সূক্ষ্ম এক সুইয়ের গুঁতোয় হারানো যাবে করোনাকে। সেই সুই করোনা থেকে মুক্তির টিকার সুই।


তারেক মাহমুদ: প্রথম আলোর হেড অব স্পোর্টস