Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার পড়াশোনার 'টেস্টে'

আল আমিন

মাঠ থেকে হোটেলে ফিরে নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছেন বাকিরা। তিনি তখন ছুটছেন আবাহনী ক্লাবের দিকে। সারতে হবে কিছু জরুরি কাজ। রাতেই ওঠার কথা রাজশাহীর বাসে। ক্রিকেট ‘টেস্ট’ তো খেলে ফেললেন, ওদিকে চলছে আরেক টেস্ট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন লোকপ্রশাসন বিভাগে, চলছে থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। একটি পরীক্ষা আছে আজই। পরীক্ষা দিয়েই আবার উঠে পড়তে হবে ঢাকার বাসে। কালই যে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর ম্যাচ!
এত ব্যস্ততা সামনে। হোটেল থেকে আবাহনী ক্লাবে যাওয়ার পথে তার পরও একটি ব্যাপারই খেলা করছিল আল আমিন হোসেনের মাথায়, ‘সত্যিই টেস্ট খেলে ফেললাম!’
প্রথম টেস্টের একাদশে ছিলেন না। দ্বিতীয় টেস্টেও খেলার আশা তাঁর নিজের খুব বেশি ছিল না। টেস্টের আগের দিন যখন একাদশ ঘোষণায় যখন শুনতে পেলেন নিজের নাম, বিশ্বাস হচ্ছিল না তখনো। রোমাঞ্চ-উত্তেজনায় রাতে বিছানায় কাটল অস্থির সময়। মনে ভর করছিল কিছু ভয়ও। ম্যাচের দিন সকালে ওয়ার্মআপের সময়ও চোট পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন কতজন! গা-গরমের সময় তাই ছিলেন দারুণ সাবধানী। টস হওয়ার পরই কেবল কমল অস্থিরতা, মনে এল স্বস্তি। খেলা শুরু হওয়ার পর অবশ্য উত্তেজনা সব ভুলে গিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে ফিরে এসেছে রোমাঞ্চ। টের পাওয়া যাচ্ছিল তাঁর কণ্ঠের কাঁপুনিতেও, ‘ওয়ার্মআপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভেতরে একটি অস্থিরতা ছিল। কোচ টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেওয়ার পর দারুণ একটা শিহরণ বয়ে যায় শরীরে। ওই সময়ের অনুভূতি বলে বোঝানোর নয়। খেলা শুরু হওয়ার পর অবশ্য সেসব মাথায় ছিল না। খেলা শেষে এখন আবার মনে হচ্ছে, তাহলে টেস্ট খেলেই ফেললাম, স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেল! আমি এখন টেস্ট ক্রিকেটার, ভাবতেই অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছে মনে।’
অভিষেকের উত্তেজনায় স্নায়ুর চাপ যে পেয়ে বসেনি, প্রমাণ দিয়েছেন প্রথম বলেই। নতুন বলে দলের ইনিংস শুরু করেছেন। প্রথমটি ছিল তাঁর ট্রেডমার্ক বল, অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেংথ থেকে অনেকটা লাফিয়ে ওঠা বল। অভিষেক টেস্টের একমাত্র ইনিংসে ১৬ ওভারে ৫৮ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট। বাংলাদেশের উইকেটে বাংলাদেশের পেসারদের কাছে প্রত্যাশা উঁচু তারে বাঁধা থাকে না কখনোই। সেটা যৌক্তিক কারণেই। বাস্তবতাটা জানেন বলেই নিজের পারফরম্যান্সে অখুশি নন আল আমিন। স্বপ্নের টেস্ট অভিষেকে নিজের কাছে প্রত্যাশায়ও তাই ছিল না কোনো আকাশকুসুম কল্পনা, ‘পারফরম্যান্সে আমি খুব খুশি নই, অখুশিও নই। আমাদের এখানে পেসারদের মূল কাজ স্পিনারদের সহায়তা করা। আমার ধারণা, আমি সেটি ভালোই করতে পেরেছি। উইকেট আরও বেশি পেলে ভালো লাগত, কিন্তু যা হয়েছে সেটাও খারাপ নয়। আমার বিশ্বাস, দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে পারলে আরও ভালো করতাম।’
আল আমিনের প্রথম টেস্ট উইকেট দলের জন্য ছিল বড় একটা স্বস্তি। আউট করেছিলেন সেঞ্চুরিয়ান কোরি অ্যান্ডারসনকে। আল আমিনের কাছে উইকেটটি বড় একটা স্বস্তি ছিল আরেকটা কারণেও, ‘কতজন আছে, প্রথম উইকেটের দেখা পেতে অনেক সময় লাগে। আমি তো অনেক দ্রুতই পেয়েছি। একটা ভারও নেমে গেছে।’

টেস্ট ক্রিকেটারকে আপাতত কিছুদিন ব্যস্ত থাকতে হবে পড়াশোনার ‘টেস্ট’ আর সাদা বলের ‘টেস্ট’ নিয়ে। পরীক্ষা আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে নিয়মিতই দৌড়াদৌড়ি করতে হবে ঢাকা-রাজশাহী। তবে ছুটোছুটি করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই এসব নয়, ভাবনা তাঁর দূর আকাশে। তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান দীর্ঘদিন। হতে চান লম্বা দৌড়ের ঘোড়া!