Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা কিনা আমাদের হাত ধোয়া শেখাল!

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো:
ছেলের সঙ্গে ছাদে ক্রিকেট খেলছেন শাহরিয়ার নাফীস। ছবি: সৌজন্য ছবি

এই এক-দেড় মাস কীভাবে যেন কেটে গেল! একদমই নজিরবিহীন সময় এবং সবার জন্যই কঠিন সময়। একটা দমবন্ধ অবস্থা। আমরা যারা সচ্ছল আছি, আমাদের হয়তো এই মুহূর্তে আয়-রোজগারের কথা চিন্তা করতে হচ্ছে না। কিন্তু যারা দিনে আনে দিনে খায়, তাদের তো খুব কষ্ট হচ্ছে। তাদের জন্য খারাপ লাগে। পৃথিবী কী ছিল আর কী হয়ে গেল!


সবার মতো আমার স্বাভাবিক জীবনেও ব্যাঘাত ঘটেছে। সব স্বাভাবিক থাকলে হয়তো খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। আর এখন পরিবারের সঙ্গে এটা সেটা করেই কেটে যাচ্ছে সময়। আজকাল খুব সকালেই উঠে যেতে হচ্ছে। রোজা চলছে তবু। কোনো দিন সাড়ে ছয়টা, কোনো দিন সাতটা। ১৩ মাসের বাচ্চাকে সকালে সময় দিতে হয়। আমার স্ত্রী সারা রাতে জেগে থাকে ওকে নিয়ে। সকালের সময়টা বাচ্চার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার। ৯টা বাজলে একটু ঘুমোতে যাই। দিনের ওই সময়টাই বিশ্রাম নেওয়া হয়। এরপর কখনো টিভি দেখে, কখনো বই পড়ে সময় চলে যায়।


বাসায় আজকাল ইফতারি বানানোসহ অন্যান্য কাজেও সাহায্য করছি। বাচ্চাদের জন্য টুকটাক রান্না করা হয়। রাতের দিকে ফিটনেস ট্রেনিং। আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গে থাকে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লেই সুযোগ মেলে ফিটনেসের কাজ করার। একদিক থেকে ভালো, আমরা এমন সময় খুব একটা পাই না। যতটুক সম্ভব স্ত্রী-সন্তানদের সময়টা দেওয়ার চেষ্টা করছি।


দিনের বড় একটা সময় কাটে ছেলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। আগে সুযোগ পেলেই ওর সঙ্গে খেলা হতো। গত এক-দেড় বছর ছেলেকে খুব বেশি সময় দেওয়া হয়নি। পড়াশোনা নিয়ে সে অনেক ব্যস্ত। আমারও ব্যস্ততা থাকে। এখন সেটা নেই। ছেলের সঙ্গে খেলাটাকেই তাই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, খেলা তো একদমই হচ্ছে না আমাদের। তাই অন্তত ব্যাট ধরা, ব্যাক লিফট ঠিক রাখা, সোজা ব্যাটে খেলা, বলের সঙ্গে ব্যাটের সংযোগ, ওর সঙ্গে খেলাতেও এসব তো মাথায় থাকে। ছোটবেলায় ভাইয়েরা মিলে খেলতাম। এখন ছেলের সঙ্গে খেলছি। খুব উপভোগ করছি এই খেলাটা। আমার ছেলের বয়স ১২। খেলা ও ভালোই বোঝে। সব সময় বাবাকে হারাতে চায়।


আমরা এখন যা-ই করছি, সবই উজ্জ্বল আগামীর আশায়। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, এ জন্যই তো এত সতর্কতা। আশা করি খুব দ্রুতই সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ জন্যই নিজেকে ফিট রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। খেলা কবে শুরু হবে, আমরা কেউই জানি না। তারপরও কিছুটা হলেও তো খেলার সঙ্গে আছি। বলতে পারেন খেলার সঙ্গে থাকা আর ছেলের সঙ্গে থাকা, দুটোই একসঙ্গে হয়ে যাচ্ছে।


এর মধ্যেই সেদিন ভাবছিলাম, করোনার প্রভাব কেটে গেলে কী হবে? করোনা-পূর্ববর্তী সময় ও পরবর্তী সময় মনে হয় না এক হবে। এখন হয়তো আমরা আমাদের জীবন আর পরিবারকে আরও গুরুত্ব দেব। আমরা যদি সচেতন হই, তাহলে জীবনে অনেক ভালো পরিবর্তন আসবে।


দূরত্ব বজায় রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, খুবই মৌলিক জিনিস। এগুলো আমাদের জীবনে আরও অনেক আগে থেকেই থাকা উচিত ছিল। হাঁচি দিলে একটু সচেতন হয়ে দেওয়া, এসব তো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও বোকার মতো কাজ করি। এখন করোনা কিনা আমাদের হাত ধোয়া শেখাল! পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখাচ্ছে! অথচ এগুলো তো স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে থাকার কথা। আমরা মানুষেরা নিজেদের প্রতি অবহেলা আর উদাসীনতায় আজ এমন একটা অবস্থায় চলে গেছি, যেখানে নিজেদের সৃষ্টির সেরা জীব দাবি করার আর সুযোগ নেই।


আর একটা বিষয়। আমি মনে করি দ্রুতই সবাইকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে দেওয়া উচিত। অনেকেই আমার কথার বিরোধিতা করতে পারেন। কিন্তু আমার ধারণা, আমরা যত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরব, ততই এই রোগ থেকে আমাদের মুক্তি মেলার সুযোগ তৈরি হবে।


লকডাউনের মধ্যেও কিন্তু সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন। বিশেষ করে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগের প্রভাব আমাদের ওপর ওতটা পড়ে না, যতটা উন্নত দেশে পড়ছে। আমরা যদি সচেতন হয়ে স্বাভাবিক জীবন শুরু করি, আমার বিশ্বাস আমাদের মধ্য থেকে এই রোগটা দ্রুতই চলে যাবে। আমার মনে হয় সবার সব ধরনের কাজে ফেরা উচিত। দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করেও সব স্বাভাবিক করে দেওয়া উচিত। তবে আবারও বলি, এটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মতামত।