Thank you for trying Sticky AMP!!

বলবয় নয়, উঠতি তারকা রাকিব

টেনিস খেলোয়াড় পরিচয়েই পরিচিত হতে চায় রাকিব। ছবি: প্রথম আলো

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুরস্কার হিসেবে কী আশা করো?

‘সবাই যেন আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। কেউ যেন আর আমাকে বলবয় হিসেবে পরিচয় না করিয়ে দেয়।’
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমন কথা কেউ কি কখনো শুনিয়েছে! কিন্তু এটিএফ অনূর্ধ্ব-১৪ বালক দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আজ সন্ধ্যায় এটাই প্রত্যাশা ছেলেটির। বলবয়ের জীবন থেকে বের হয়ে এসে নতুন একটি জীবন শুরু করতে চায় ১৪ বছর বয়সী রাকিব হাসান। এশিয়ান এই টুর্নামেন্টে বালক এককে রানার্সআপও হয়েছে সে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি দিনটি এখনো পরিষ্কার রাকিবের মনে। অভাবের তাড়নায় পরিবারের মায়া ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দুলাভাই আরিফ হোসেনের হাত ধরে ঢাকায় আসা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবে বয়ের চাকরি নেওয়া। এর তিন মাস পরেই রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে বলবয় হিসেবে প্রবেশ। সবাই খেলত, আর বল কুড়িয়ে আনাই ছিল রাকিবের কাজ। মাঝে মাঝে আফসোস হতো ছোট ছেলেটির, ‘ইশ্ আমিও যদি খেলতে পারতাম।’
এক বছর পেরিয়ে ২০১৪ সালের মধ্যভাগে বল কুড়ানোর সঙ্গে লুকিয়ে র‍্যাকেটও হাতে তুলে নেয় রাকিব। স্থানীয় কোচ মন্টি তার ইচ্ছাশক্তি ও প্রকৃতিগত ফোরহ্যান্ড আর ফোরহ্যান্ড অ্যাপ্রোচ দেখে জুনিয়র ছেলেদের সঙ্গে লুকিয়ে মাঝে মাঝে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। কিন্তু বলবয় তকমাটা গায়ের সঙ্গে লেগে থাকায় ভালো খেলা সত্ত্বেও কোনো টুর্নামেন্টে নাম ওঠে না তার। অবশেষে সুযোগ আসে জব্বার স্মৃতি টুর্নামেন্টে। সেবার সেমিফাইনালে দৌড় থামে রাকিবের। এরপর আরও দুটি স্থানীয় টুর্নামেন্টে রানারআপ। এর পরে রাকিবের নামের পাশে যোগ হয় বলবয়ের সঙ্গে ভালো খেলতে পারার তকমা।

দ্বৈতের সঙ্গী রোমানের সঙ্গে। ছবি: প্রথম আলো

এই তো সাত দিনের ব্যবধানে ফোরহ্যান্ড আর ফোরহ্যান্ড অ্যাপ্রোচে দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট মাতিয়ে দিল ‘বলবয় রাকিব’। এই টুর্নামেন্টের আগে রমনায় একই টুর্নামেন্টে জোবায়েদ উৎসের সঙ্গে জুটি গড়ে বালক দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন ও এককে রানারআপ হয় সে। জোড়া সাফল্যের পরও বড় কোনো স্বপ্ন দেখার সাহস পান না রাকিব, ‘স্বপ্ন তো দেখি বড় খেলোয়াড় হওয়ার। কিন্তু এর জন্য তো অনেক টাকার দরকার। যা আমার নেই। তবে ভবিষ্যতে বড় কোচ হতে চাই।’ স্পষ্টত খেলোয়াড় হতে টাকা লাগবে, তাই ভয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোচ হিসেবে কাজ করা সহজ বলে, ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থাতেই কোচ হওয়ার স্বপ্ন!
রাকিবের বাবা ছিলেন কৃষক। দিনমজুর হিসেবে মানুষের জমিতে কাজ করতেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সে এখন অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। আর মা গৃহিণী। আট ভাইবোনের মধ্যে রাকিব পঞ্চম। বড় ভাইরা নির্মাণশ্রমিক। অভাব নিয়েই রাকিবের বসবাস। যার জন্য তাকে হতে হয়েছে বলবয়। এই পরিচয়ের শিকল ভেঙে তার এখন একটাই চাওয়া, তাকে বলবয় না বলে সবাই যেন টেনিস খেলোয়াড় ভাবে। আন্তর্জাতিক আসরে টানা দুটি সাফল্যের পর রাকিবের এই চাওয়াটা কি খুব বেশি?