Thank you for trying Sticky AMP!!

যে জয়ে শুরু স্বপ্ন দেখা

১৯৯৮ সালের ১৭ মে। ২৩ বছর আগে কেনিয়ার বিপক্ষে আজকের এই দিনেই বাংলাদেশ দল পেয়েছিল আন্তর্জাতিক ওয়ানেডেতে প্রথম জয়।

ভারতের হায়দরাবাদে কেনিয়াকে হারিয়ে ১৯৯৮ সালের আজকের এই দিনেই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ দল। আতহার আলী খান ও মোহাম্মদ রফিকের ১৩৭ রানের ওপেনিং জুটির বড় অবদান ছিল সেই জয়ে

ক্রিকেটের তিন সংস্করণের মধ্যে ওয়ানডেটাই এখন সবচেয়ে ভালো খেলে বাংলাদেশ দল। সব দলের বিপক্ষে ম্যাচেই লক্ষ্য থাকে জয়। ২৩ মে থেকে শুরু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও জয়েই চোখ তামিম ইকবালদের। অথচ আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে প্রথম জয়ের দেখা পেতে তামিমদের পূর্বসূরিদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় এক যুগের মত। ১৯৮৬ সালে প্রথম ওয়ানডে খেলার পর অবশেষে আরাধ্য প্রথম জয়টি আসে ১৯৯৮ সালের আজকের দিনে, টানা ২২ ম্যাচ হারার পর।

দীর্ঘ ২৩ বছর পর প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে আকরাম খানের সেই দলের ক্রিকেটারদের কণ্ঠে রোমাঞ্চ। ১৯৯৮ সালের ১৭ মে দিনটির কথা মনে করিয়ে দিতেই গলার স্বর পাল্টে গেল সেদিন আতহার আলী খানের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে নামা মোহাম্মদ রফিকের, ‘ওহ, ১৭ মে! আমাদের প্রথম ওয়ানডে জয়ের দিন...।’ এরপর যেন স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলেন রফিক। শোনালেন ১৯৯৮ সালের এই দিনে হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কোকাকোলা তিন জাতি টুর্নামেন্টে কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের গল্প।

বাঁহাতি স্পিনে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ওপেন করতে নেমে ৭৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলা রফিকই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক। সেই স্মৃতি মনে করে মুঠোফোনে রফিক বলছিলেন, ‘দিনটা আমার ছিল। ব্যাটিং-বোলিং দুটোই ভালো হওয়াতে ম্যাচসেরা হয়েছিলাম। বাকিটা ইতিহাস। দুনিয়ায় একদিন হয়তো রফিক থাকবে না, কিন্তু বাংলাদেশ যত দিন ক্রিকেট খেলবে, তত দিন রফিকের নাম থাকবে।’

দিবা-রাত্রির ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কেনিয়ার অধিনায়ক আসিফ করিম। বাংলাদেশের সামনে তারা লক্ষ্য দেয় ২৩৭ রানের। রফিক ৫৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন খালেদ মাহমুদ এবং এনামুল হক। কিন্তু ফ্লাডলাইটে খেলার অভিজ্ঞতা তখন একটু কমই ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। দলের ম্যানেজার গাজী আশরাফ হোসেন পরিকল্পনা করলেন ‘পিঞ্চ হিটার’ হিসেবে রফিককে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে যদি দ্রুত কিছু রান তোলা যায়। কোচ গর্ডন গ্রিনিজ এবং অধিনায়ক আকরাম খানও রাজি হয়ে যান তাতে। আকরাম খান বলছিলেন, ‘রফিক তো দারুণ ক্রিকেটার ছিল! ম্যাচটা সে–ই জিতিয়েছে। তাকে ওপেনিংয়ে নামানোর পরিকল্পনাটা ছিল মূলত লিপু ভাইয়ের (গাজী আশরাফ হোসেন)। কোচ এবং আমিও রাজি হই।’

গাজী আশরাফ হোসেন যা চেয়েছিলেন, তাই করে দেখান রফিক। অভিজ্ঞ আতহার আলীর সঙ্গে ১৩৭ রানের জুটিতে খেলেন ৭৭ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস। ৮৭ বল খেলে মেরেছিলেন ১১টি চার ও ১টি ছক্কা। আতহারের ব্যাট থেকে আসে ৪৭ রান। ৫১ বলে ৩৯ রান করেন আকরাম খান। আমিনুল ইসলাম–নাঈমুর রহমান অবিচ্ছিন্ন থেকে ১২ বল বাকি থাকতেই ছিনিয়ে আনেন ৬ উইকেটের জয়।

রফিকের সঙ্গে আতহারের ম্যাচ জেতানো জুটিটাতে প্রভাব ছিল মাঠের বাইরে দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও। আতহারই বলছিলেন, ‘রফিকের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। সেই জুটিতে দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্কটাই ফুটে উঠেছিল। আমি রফিককে বলেছিলাম তার সহজাত ব্যাটিং করতে।’

আগের বছর আকরাম খানের অধিনায়কত্বেই কেনিয়াকে আইসিসি ট্রফির ফাইনালে হারায় বাংলাদেশ। হায়দরাবাদের ম্যাচেও দল ভালো কিছু করবে বলে বিশ্বাস ছিল তাঁর। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এই প্রথমের অংশ হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন বর্তমানে বিসিবির পরিচালক আকরাম খান, ‘ওই সময় খেলে আমরা হয়তো আর্থিকভাবে তেমন লাভবান হইনি। কিন্তু এত বড় অর্জনের অংশ ছিলাম, এটা ভাবলেই গর্ব হয়।’

দলের আরেক ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন বর্তমানে বিসিবির প্রধান নির্বাচক। কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারানো ঐতিহাসিক ম্যাচটাকে একটু বৃহৎ বড় দৃষ্টিকোণই থেকে দেখেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক, ‘ওই জয়টা আমাদের জন্য একটা বিরাট অর্জন ছিল। ভারতের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়! এই সাফল্য আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমাদের ক্রিকেটের সামনে যেন একটা প্রশস্ত রাস্তা খুলে দিয়েছিল সেই জয়।’

সে রাস্তায় হেঁটেই ৩৮২টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশের জয় সংখ্যা এখন ১৩১টি। প্রায় দুই যুগ পর প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে জয়ের আরেকটি উদ্‌যাপন চাইলে হতে পারে এ মাসেই। আকরামেরই ভ্রাতুষ্পুত্র বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের হাত ধরে শুধু জিততে হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটা।