Thank you for trying Sticky AMP!!

লড়াইটা তাঁদের দুজনেরও

সাকিব আল হাসান ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস

যুদ্ধের মধ্যেও ছোট ছোট অনেক লড়াই থাকে। আজ এমসিজিতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও যেমন আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় লড়াইটির নাম কি সাকিব আল হাসান বনাম অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস?
দুই দলের সেরা দুই অলরাউন্ডার—দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। এতে আরেকটু মাত্রা যোগ করছে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিং। অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে ২ নম্বর এই বিশ্বকাপে নেই। মোহাম্মদ হাফিজ বিশ্বকাপের দর্শক হয়ে গেছেন বলে মাঝখানে শূন্যস্থান—এক অর্থে তাই বিশ্বের সেরা দুই ওয়ানডে অলরাউন্ডার আজ মুখোমুখি। সাকিব এক নম্বরে, ম্যাথুস তিনে। পয়েন্টের পার্থক্যও এমন কিছু নয়। সাকিবের ৪০৩, ম্যাথুসের ৩৯৩। এই বিশ্বকাপে দুজনের পারফরম্যান্সে র্যাঙ্কিংয়ে ওলটপালট হওয়ার সম্ভাবনা তাই যথেষ্টই।
আশির দশকে বিশ্ব ক্রিকেটে যখন চার অলরাউন্ডারের দাপট, একজন আরেকজনের পারফরম্যান্সের দিকে চোখ রাখতেনই। আর মুখোমুখি হলে তো মাঠে বাড়তি ফুলকি ছুটতই। বোথাম-ইমরান-কপিল-হ্যাডলিদের যুগে এসব র্যাঙ্কিং-ফ্যাঙ্কিং কিছুই ছিল না। রান-উইকেট দেখে যে যাঁর মতো বিজয়ী নির্ধারণ করে নিতেন। সাকিব আল হাসান অবশ্য বরাবরই র্যাঙ্কিংয়ের ব্যাপারটিকে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে দেখে এসেছেন। অথবা এমনও হতে পারে, দেখার ভান করেছেন। নইলে সাকিবের সাকিব হয়ে ওঠার পেছনে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার তকমাটার তো বড় ভূমিকা।
আজকের ম্যাচের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ছোট্ট একটা অধ্যায় হয়ে থাকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত লড়াইয়ের প্রসঙ্গে কথা বলতেই রাজি নন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বীকে তাঁর প্রাপ্যটা দিতে কুণ্ঠা নেই, ‘ওকে আমি সেই ২০০৫ সাল থেকে চিনি। তখনই জানতাম, একদিন বড় কিছু হবে।’ ম্যাথুসেরও সাকিবের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা, ‘তিন ধরনের ক্রিকেটেই ১ নম্বর অলরাউন্ডার তো আর এমনিই হয়নি।’
সেই ২০০৫ সাল থেকে সাকিব-ম্যাথুসের একে অন্যকে চেনার মাধ্যম অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাকিবের খেলা অনূর্ধ্ব-১৯ ছয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্রথম ৫টিতেই প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন ম্যাথুস। ২০০৫-এর শেষ দিকে বিকেএসপিতে ত্রিদেশীয় একটা ওয়ানডে সিরিজ হয়েছিল। তৃতীয় দল ছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ফাইনালটি রূপ নিয়েছিল দুই অলরাউন্ডারেরই লড়াইয়ে। তাতে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে বাংলাদেশকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন সাকিব। বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ঠিক ১০০। ম্যাথুস কোনো উইকেট পাননি, তবে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর (৬৫) ছিল তাঁরই।
এর পর মেঘে মেঘে বেলা ভালোই হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক থেকে শ্রীলঙ্কার মূল দলের অধিনায়ক হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। সাকিব আল হাসান অধিনায়ক হয়েছেন, আবার তা হারিয়েছেনও। সাকিবের প্রায় দুই বছর পর আন্তর্জাতিক অভিষেকের পরও ৯টি ওয়ানডে বেশি খেলে ফেলেছেন। ব্যাটিং গড়ে সাকিবের চেয়ে এগিয়ে, সাকিবের সেঞ্চুরি আবার ৫টি বেশি। বোলিংয়ে অবশ্য সাকিব অনেক অনেক এগিয়ে। ম্যাথুসের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ উইকেট তাঁর (সাকিব ১৮৪, ম্যাথুস ৯৪)। মজার ব্যাপার হলো, ওয়ানডেতে সাকিব কখনো ম্যাথুসের উইকেট পাননি, ম্যাথুসও আউট করতে পারেননি সাকিবকে। তবে ম্যাথুসের বোলিংয়ে একটু বেশিই নির্মম ছিলেন সাকিব। মাত্র ১৩টি বলই খেলেছেন, তা থেকে ৩টি চার ও ২টি ছয়ে রান তুলেছেন ২৮।
ঘটনাচক্রে আজকের ম্যাচের রঙ্গমঞ্চ এমসিজি অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের স্মরণীয়তম কীর্তির সাক্ষী। শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকেরা যেটির নাম দিয়েছে ‘মিরাকল অব এমসিজি।’ তা ২০১০ সালের ৩ নভেম্বর যা ঘটেছিল, সেটিকে অলৌকিক মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। ১০৭ রানে যখন শ্রীলঙ্কার ৮ উইকেট পড়ে গেল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৪০ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কেউ আর কথাই বলছিল না। সেখান থেকেই মালিঙ্গাকে নিয়ে নবম উইকেটে ম্যাথুসের ১৩২ রানের রেকর্ড জুটি। স্কোর সমান হয়ে যাওয়ার পর মালিঙ্গা রানআউট হয়ে গেলেও মুরালিধরন নেমে চার মেরে জিতিয়ে দেন শ্রীলঙ্কাকে। অনেক সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি মহিমান্বিত ম্যাথুসের সেই অপরাজিত ৭৭। সতীর্থরা যে তাঁকে কাঁধে তুলে মাঠ থেকে বের করে এনেছিলেন—এমসিজিতে পা দিয়েই আবার সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেছে ম্যাথুসের।
সাকিব এমসিজিতে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেননি। আবার এক অর্থে এই এমসিজি তাঁর হোমগ্রাউন্ডও। বছরের শুরুতে বিগ ব্যাশে যে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে খেলেছেন। ম্যাথুসের মাপে না হলেও এমসিজিতে সুখস্মৃতি আছে তাঁরও। ব্রিসবেন হিটের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট টি-টোয়েন্টির আলোকে অসাধারণ বোলিংয়ের স্বীকৃতি পেতে বাধ্য।
এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ মাঠে নামতে পেরেছে একবারই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়েছেন সাকিব। ম্যাথুসের অলরাউন্ড সামর্থ্যেরও প্রমাণ পেয়েছে আফগানিস্তান। বোলিংয়ে ৩ উইকেট, ব্যাটিংয়ে ৪৪। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উইকেট না পেলেও রান করেছেন ৪৬।
ম্যাথুসের দলে সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে-মালিঙ্গারা তাঁর চেয়ে বড় তারকা। তাঁদের ছাপিয়ে ২০১৪ সালে এমন দেদীপ্যমান হয়ে জ্বলেছেন যে, ইএসপিএনক্রিকইনফোর বিচারে বর্ষসেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন। যেটিকে মূল্য না দিয়ে উপায় নেই। কারণ পুরো বিচারটাই হয়েছে সংখ্যার বিচারে। বছরে টেস্ট ও ওয়ানডে দুটিতেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ম্যাথুসের। অপরাজিত থাকার অভ্যাসের কারণে ব্যাটিং গড় রীতিমতো অবিশ্বাস্য।
সাকিবের দলে তারকাখ্যাতিতে সাকিব সবার আগে। নিষিদ্ধ থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ মিস করার পরও ইএসপিএনক্রিকইনফোর একটি পুরস্কার সাকিবকে না দিয়ে উপায় থাকেনি—বর্ষসেরা ওয়ানডে বোলার।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তো বটেই, আজ এমসিজিতে সাকিব বনাম ম্যাথুসও!