Thank you for trying Sticky AMP!!

আরও একবার মুম্বাইয়ের হাতে শিরোপা।

আইপিএল: কে কোন পুরস্কার পেলেন

৫৩ দিনের ক্রিকেট উৎসব শেষ হয়ে গেল। সেই ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল, অনেক নাটক, উত্থান-পতন আর রোমাঞ্চের শিহরণ ছড়িয়ে অবশেষে গতকাল শেষ হলো আইপিএলের ১৩তম সংস্করণ। আগের ১২ বারের সঙ্গে এবারের আইপিএলের অবশ্য একটা বড় পার্থক্য আছে—এবারের আইপিএল হয়েছে করোনাভাইরাসের চোখ রাঙানির মধ্যে, ভারত থেকে দূরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

শেষ পর্যন্ত আরও একবার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের শিরোপা উৎসবে শেষ হলো এবারের আইপিএল। সবচেয়ে বেশি আইপিএল জেতার রেকর্ড তো আগেই তাদের ছিল, শিরোপার সংখ্যাটাকে এবার পাঁচে নিয়ে গেল মুম্বাইয়ের দলটি।

দলীয় শিরোপার বিচারে শেষ করতালি মুম্বাইয়ের ঘরে গেছে ঠিকই, কিন্তু ব্যক্তিগত অনেক হিসাব-নিকাশও তো জড়িয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি উইকেট, সম্ভাবনাময় তরুণ খেলোয়াড়, সবচেয়ে বেশি ছক্কা...এসবের হিসাব তো আছেই, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারেরও হিসাব আছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেসব।

প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী আসরটা হওয়ার কথা ছিল ২৯ মার্চ, কিন্তু করোনার কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে পরে হলো সেপ্টেম্বরে। ভারতে সম্ভব নয় দেখে টুর্নামেন্টটা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অনেক প্রশ্ন ছিল, কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হতেই অন্য সব চিন্তা একপাশে রেখে ক্রিকেটপ্রেমী মন মজে যায় ব্যাট-বলের লড়াইয়ে। কী ধুন্ধুমার লড়াই-ই না হলো!

সবচেয়ে বেশি রান লোকেশ রাহুলের।

সে লড়াইয়ে ব্যাটে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের লোকেশ রাহুল। পাঞ্জাব গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে, কিন্তু টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহক হতে ওই ১৪ ম্যাচই যথেষ্ট ছিল রাহুলের। টুর্নামেন্টে এবার ৫০০-র বেশি রান করেছেন ৬ জন ব্যাটসম্যান, এর মধ্যে ৬০০-র বেশি রান দেখেছে দুজনের ব্যাট। ৫০০ পেরোনো সেই ছয়জন হলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কুইন্টন ডি কক (৫০৩), ইশান কিশান (৫১৬), শ্রেয়াস আইয়ার (৫১৯), ডেভিড ওয়ার্নার (৫৪৮), শিখর ধাওয়ান (৬১৮) ও লোকেশ রাহুল (৬৭০)।

এর মধ্যে ৫৫.৮৩ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৬৭০ রান করা রাহুলের মাথায়ই উঠেছে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার কমলা টুপি বা অরেঞ্জ ক্যাপ!

আর পার্পল ক্যাপ বা বেগুনি টুপি? সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলারের পুরস্কার সেই টুপি উঠেছে দিল্লি ক্যাপিট্যালসের দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার কাগিসো রাবাদার মাথায়! টুর্নামেন্টে ২০ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে ২৫ বা তার বেশি উইকেট পাওয়া তিন বোলার হলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ট্রেন্ট বোল্ট (২৫), একই দলের যশপ্রীত বুমরা (২৭), আর সবার ওপরে রাবাদা (৩০)।

সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে পার্পল ক্যাপটা পেয়েছেন রাবাদা।

রাবাদার ইকোনমি আহামরি ছিল না ওভারপ্রতি গড়ে রান দিয়েছেন ৮.৩৪ করে। কিন্তু তাঁর ৩০ উইকেটই দিল্লির ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার বড় কারণ।

শুধু উইকেট পেলেই তো হবে না, পাওয়ার প্লেতে, অর্থাৎ প্রথম ছয় ওভারের মধ্যে উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতায় কে এগিয়ে, সেটাও দেখতে চেয়েছে আইপিএল। এবারের আসরে সেদিকে এগিয়ে আছেন ট্রেন্ট বোল্ট। টুর্নামেন্টে ২৫ উইকেটের ১৬টিই মুম্বাইয়ের বাঁহাতি কিউই ফাস্ট বোলার নিয়েছেন ম্যাচের প্রথম ছয় ওভারে, তা দিয়েই তিনি এবারের পাওয়ার প্লেয়ার অব দ্য সিজন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ছক্কার হিসাব হবে না? এবার টুর্নামেন্টে ২০টির বেশি ছক্কা মেরেছেন, এমন ব্যাটসম্যান আছেন ১০ জন! তবে এর মধ্যে ৩০টি ছক্কা শুধু একজনেরই—মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ইশান কিশান। টুর্নামেন্টে ৫১৬ রানের ১৮০-ই কিশান তুলেছেন ছক্কা মেরে।

তবে ক্রিস গেইল বলতে পারেন, তিনি টুর্নামেন্টে পুরোটা থাকলে পুরস্কারটা তাঁরই হতো! ২৩ ছক্কা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কার তালিকায় পাঞ্জাবের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওপেনার আছেন ছয় নম্বরে। কিন্তু তাঁর সেই ২৩ ছক্কা এসেছে মাত্র ৭ ম্যাচে!

সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন ইশান কিশান (বাঁয়ে)।

আর টি-টোয়েন্টি মানে তো যত কম বলে যত দ্রুত রান তোলা যায়, তাই না? সেই হিসাবে, অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটের হিসাবে কে এগিয়ে আছেন? ১৭০-এর বেশি স্ট্রাইক রেট এবার আছে ছয়জন ব্যাটসম্যানের। তবে এর মধ্যে পাঁচজনেরই ১৮০-এর নিচে। যিনি বাকি আছেন, তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৮০ তো বটেই, ১৯০-ও ছাড়িয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নামটা নেহাত অপরিচিত নয়—কাইরন পোলার্ড। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান টুর্নামেন্টে রান করেছেন ২৬৮, কিন্তু সেটি করেছেন ১৯১.৪২ স্ট্রাইক রেটে। ‘সুপারস্ট্রাইকার অব দ্য সিজন’ পুরস্কারটাও তাঁরই।

আইপিএলে ক্রিকেটাররা লড়েছেন মাঠে, আর তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে হয়েছে ফ্যান্টাসি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। কে কত রান করলেন, কত উইকেট পেলেন, ক্যাচ ধরলেন বা রানআউট করলেন, চার-ছক্কা কতটি মারলেন...কত হিসাব নিয়ে হয়েছে ফ্যান্টাসি টুর্নামেন্ট! সেখানে সর্বোচ্চ ৯৭৬ পয়েন্ট এনে দিয়ে ‘গেমচেঞ্জার অব দ্য সিজন’ হয়েছেন লোকেশ রাহুল।

টুর্নামেন্টের শিরোপার পাশাপাশি ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড গেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ঘরে। আর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দেবদূত পাড়িক্কাল। ১৫ ম্যাচে পাঁচটি ফিফটিসহ ৪৭৩ রান তাঁর।

জফরা আর্চার জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

এত সব পুরস্কারের হিসাব দেওয়া হলো, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় কে হয়েছেন? মূলত বিধ্বংসী ফাস্ট বোলার হলেও এবার ব্যাটে-বলে দুই দিকেই ঝড় তুলেছেন তিনি। উইকেট নিয়েছেন ২০টি, ডট বল ১৭৫টি, ক্যাচ ধরেছেন ৫টি, আবার ব্যাট হাতে ছক্কাও মেরেছেন ১০টি! সবদিকে ঝড় তুলে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় বা মোস্ট ভ্যালুড প্লেয়ারের (এমভিপি) পুরস্কার জিতে নিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের ইংলিশ ফাস্ট বোলার জফরা আর্চার!

একনজরে
সেরা খেলোয়াড়: জফরা আর্চার
সেরা উদীয়মান: দেবদূত পাড়িক্কাল
সবচেয়ে বেশি রান: লোকেশ রাহুল
সবচেয়ে বেশি উইকেট: কাগিসো রাবাদা
সবচেয়ে বেশি ছক্কা: ইশান কিশান
সুপার স্ট্রাইকার: কাইরন পোলার্ড
পাওয়ার প্লেয়ার: ট্রেন্ট বোল্ট
গেম চেঞ্জার: লোকেশ রাহুল
ফেয়ার প্লে: মুম্বাই ইন্ডিয়ানস