Thank you for trying Sticky AMP!!

আক্ষেপের গল্প ভুলিয়ে দেবে ইংল্যান্ড

>
ডেরেক প্রিঙ্গল
২৭ বছর পর আরেকটা ফাইনালে ইংল্যান্ড। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বশেষ ফাইনালে খেলা ইংলিশ অলরাউন্ডার ডেরেক প্রিঙ্গল ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান-এ নিজের কলামে স্মৃতিচারণা করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচের।

২৭ বছর হলো ইংল্যান্ড সর্বশেষ কোনো ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। আমি জানি, আমি সেখানে ছিলাম। শহরটা ছিল মেলবোর্ন, মাঠটা ছিল এমসিজি, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। আমাদের—বিশেষ করে গ্রাহাম গুচের মতো কয়েকজনকে—১৩ বছরের মধ্যে তৃতীয়বার রানার্সআপ হয়েই খুশি থাকতে বাধ্য করেছে ওরা। 

সেই ফাইনালে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান ২৪৯ রান করেছিল, কিন্তু দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই জাভেদ মিয়াঁদাদ দুবার এলবিডব্লুর হাত থেকে বেঁচে না গেলে (শেষ পর্যন্ত ৫৮ করেছে) স্কোরটা আরও কম হতো। দুবারই বোলার ছিলাম আমি। জাভেদেরও মনে হয়েছিল এর একটাতে আউট ছিল, ম্যাচ শেষে ইমরান খান আর ওকে অভিনন্দন জানানোর সময় সেটা আমাকে বলেওছিল। বাঁ পায়ে টোকা দিয়ে বলছিল, ‘আল্লাহ আজ আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছেন।’
পাকিস্তানের কাছে ওই হারের হতাশা তো সবারই ছিল, তবে (গ্রাহাম) গুচ ও ইয়ান ‘বিফি’ বোথামকে ওই হারটা অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে। দুজনই ১৯৭৯-এ নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে খেলেছেন। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে কান্নার চেয়েও বেশি কিছুই ছিল! এমন দুজন গ্রেট—অ্যালান ল্যাম্বও আছেন, চূড়ান্ত অর্জনের শেষ সুযোগটাও হারিয়ে ফেলার অনুভূতিটাই তাঁদের বেশি কষ্ট দিচ্ছিল। সেই সুযোগটা ছিনিয়ে নিয়েছেও এমন একটা দল, যাদের গ্রুপ পর্বে মাত্র ৭৪ রানে অলআউট করেছিলাম আমরা, কিন্তু বৃষ্টি ওদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল।

বিফি (বোথাম) জানতেন সেটাই তাঁর শেষ সফর, সে কারণে সে গ্রীষ্মে প্রস্তুতিটাও নিয়েছিলেন ধীরেসুস্থে। দলের অন্য সবাই যেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্ট ও তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়েছে, তিনি বোর্নমাউথে মঞ্চনাটক করছিলেন, ম্যাক্স বয়েসের বিপরীতে ‘জ্যাক অ্যান্ড দ্য বিনস্টকে’ অভিনয় করেছিলেন। (নিউজিল্যান্ড) সফরের দুই-তৃতীয়াংশ শেষে যখন এলেন, তাঁর ওজনও বেড়ে গিয়েছিল। যদিও তা সত্ত্বেও গুচকে রাজি করিয়ে শেষ ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে নামতে কোনো সমস্যা হয়নি তাঁর। দাপুটে আচরণের সঙ্গে মিল রেখে সে ম্যাচেও ৭৩ বলে ৭৯ রান করেছিলেন।

সে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মনোভাবের মিশেলটাও দারুণ ছিল। একদিকে সব সময়ের আক্রমণাত্মক মনোভাবের বিফি বোথাম, এখন (এউইন) মরগান ও তাঁর দল যেরকম ভয়ডরহীন মনোভাব নিয়ে খেলে, সে রকম।
সবকিছু পরিকল্পিত উপায়ে চাইলেও গুচি সব সময়ই বলতেন, আমাদের অবস্থা বুঝে উপস্থিত বুদ্ধিতে কিছু করতে হবে, যেটা ইংলিশ দলগুলো খুব কম সময়ই ভালোভাবে করতে পেরেছে। ওই টুর্নামেন্টেও সেটাই দেখা গেছে। প্রতিপক্ষ আমাদের ‘প্ল্যান এ’ থেকে সরতে বাধ্য করতে না পারলে আমরাই জিততাম। কিন্তু ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ আর ফাইনালে পাকিস্তানের মতো কেউ আমাদের ‘প্ল্যান বি’-তে যেতে বাধ্য করলেই আমরা সব হড়বড় করে ফেলতাম, সেটাই ভোগাত।

ফাইনালে একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল পাকিস্তান ২০০ পর্যন্তও যেতে পারবে না। ইমরান ও জাভেদ তৃতীয় উইকেটে ১৩৯ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা (২৪ রানে ২ উইকেট) সামলে নিলেও, সেটা অনেক ধীরগতিতে হচ্ছিল। কিন্তু ইনজামাম-উল-হক ও ওয়াসিম আকরাম হঠাৎ অনেক রান তোলায় আমাদের লক্ষ্য দাঁড়াল ২৫০ রান। সে লক্ষ্যটাকে অনেক দূর মনে হচ্ছিল, যখন ১০৯ রান দূরে থাকার সময় ওয়াসিম পরপর দুই বলে ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে বোল্ড করল।
আমরা গা এলিয়ে দিয়েছিলাম বলাটা উচিত হবে না। ভেবেছিলাম পাকিস্তান শুরুর চাপে ভেঙে পড়বে, কিন্তু তা হয়নি। ওরা বড় স্কোর করে ফেলায় আমাদের এমন বোলিংয়ের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিং করতে হতো, যারা একেক ব্যাটসম্যানের দিকে একেক রকম প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারে। সেদিন খুব কম প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পেরেছিলাম আমরা।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সব খেলায় ইংল্যান্ড দলে এত টাকা ঢালার পরও আমরা এত দিন আর কোনো ফাইনালে উঠতে পারিনি। এর আগে বিশ্বকাপ সাধারণত স্বাগতিকদের পক্ষে না থাকলেও সর্বশেষ দুবার সেটা বদলে গেছে, স্বাগতিকেরাই ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছে। তৃতীয়বার সেটি হলে অসাধারণ হবে, খুব কাছে গিয়েও আক্ষেপ নিয়ে ফেরার গল্পগুলো ভুলিয়ে দেবে ইংল্যান্ড।