Thank you for trying Sticky AMP!!

আগের দুই বিশ্বকাপের পাওনা বুঝিয়ে দিল ইংল্যান্ড

সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর সাকিব। তিনি একাই যা একটু লড়েছেন। ছবি: এএফপি
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রানে হারল বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাকিব

জয়ের জন্য সামনে লক্ষ্য ৩৮৭ রানের। অর্থাৎ নিজেদের রান তাড়ার রেকর্ড নতুন করে লিখিয়েই জিততে হতো বাংলাদেশকে। সেটি দেখতে পাওয়ার আশা করেননি হয়তো বাংলাদেশের অনেক সমর্থকই। তবে রান তাড়ার চেষ্টাটুকু অন্তত দেখার ইচ্ছা ছিল অনেকেরই। সেটি আর হলো কোথায়! ম্যাচের দুটি চিত্র দিয়েই তা ব্যাখ্যা করা যায়।

প্রথম ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৪৮। ৩৭তম ওভার শেষে তা ৪ উইকেটে ২০৩। ব্যাট করছিলেন সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া সাকিব, অন্য প্রান্তে দেখেশুনে (!) ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহ। ৩৮তম ওভারে বেন স্টোকসকে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এনেছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক এউইন মরগান। একে তো নতুন বোলার, লাইন-লেংথ ঠিক করতেই কিছুটা সময় লাগার কথা। আর স্ট্রাইকে ছিলেন ‘সেট’ হয়ে যাওয়া সাকিব। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্টোকসের প্রথম ওভারটি মেডেন দিলেন সাকিব! এরপর আর ম্যাচের গতি বুঝে নেওয়ার কিছু থাকে না। তবে যেটি বোধগম্য হয়নি, জয়ের চেষ্টাটুকু অন্তত করা যেত, ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার প্রকাশ দেখা গেল না কেন?

২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম ১০ ওভারের ব্যাটিংয়ে হার আগেই মেনে নিয়ে পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত ছিল। শেষ পর্যন্ত তা-ও হলো না। ২৮০ রানে অলআউট (৪৮.৫ ওভারে) হয়ে ইংল্যান্ডের কাছে ১০৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। মন্দের ভালো হিসেবে মিলেছে শুধু সাকিবের সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সান্ত্বনা—৯৫ বলে যা তুলে নিয়েছেন সাকিব। এ ছাড়া গোটা ম্যাচই বাংলাদেশের জন্য হতাশার পরতে ঠাসা। যার সবশেষ পেরেক হতে পারে দেখেশুনে ব্যাট করেও দলীয় সংগ্রহ তিন শ-তে নিয়ে যেতে না পারার যন্ত্রণা।

যন্ত্রণার শুরুটা করা যায় মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে। ‘ফিনিশার’ হিসেবে তাঁর আলাদা একটা খ্যাতি আছে। কিন্তু এ ম্যাচ সহ সবশেষ দুই ম্যাচে তাকালে কী দেখা যায়? দুটি ইনিংসই ৪১ বলের। আর এই দুই ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ যথাক্রমে ২০ ও ২৮। শুধু স্ট্রাইকরেট পড়ে যাওয়া নয়, ব্যাটিংয়ের ধরনেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছেন এর আগে আইসিসির টুর্নামেন্টে গাদা গাদা রান করা মাহমুদউল্লাহ। ফিনিশার হিসেবে তাঁর ভূমিকা কি এখন প্রশ্নবিদ্ধ? পুরো জবাবটা দেওয়ার সময়টা হয়তো এখনো আসেনি, তবে দুশ্চিন্তাটা উঁকি দিয়েছে তা বলাই যায়।

দুশ্চিন্তার উদ্রেক ঘটেছে বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়েও। প্রায় চার শ ছুঁইছুঁই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা একটু ঝোড়ো হলে মাঝের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপটা কম পড়ে। কিন্তু দুই ওপেনার তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকার কী ভেবেছিলেন কে জানে! শুরুতে রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে জফরা আর্চারের গতি ও বাউন্সের সামনে দুই ব্যাটসম্যানকেই অসহায় লেগেছে। চতুর্থ ওভারে সৌম্য ফিরেছেন আর্চারের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ভীষণ অসহায়ের মতো। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের আশপাশে থাকা বলটি সৌম্যর ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে স্টাম্পের বেলস উড়িয়ে শূন্যে ভেসেই পাড়ি দিয়েছে সীমানা!

৮ বলে ২ রান করে সৌম্য ফেরার পর তামিম ইকবালের ওপর বড় ইনিংস খেলার দায়িত্ব ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বড় ইনিংস খেলতে শুরুতেই খোলসবন্দী হওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করা তামিমের কাছ থেকে আজ একটু আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের প্রত্যাশা সমর্থকদের। বাংলাদেশের এ অভিজ্ঞ ওপেনার সেটি যেন বুঝতে পারলেন ১২তম ওভারের শেষ বলে! প্রথমবারের মতো ডাউন দ্য উইকেট এসে মার্ক উডকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন এক্সট্রা কভার অঞ্চলে। ২৯ বলে ১৯ রান করা তামিমকে ইংলিশ পেসারদের গতির সামনে এতটুকু স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি।

যা একটু স্বচ্ছন্দ ছিলেন শুধু সাকিব। তৃতীয় উইকেটে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে গড়েছেন ১০৬ রানের জুটি। ২৯তম ওভারে মুশফিক ফিরেছেন ৪৪ রান করে। পরের ওভারে মিঠুন (০) ফেরার পরই হারের চোখ রাঙানিটা বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছিল। এখান থেকে তিন শ ছোঁয়ার লড়াইটুকু অন্তত করা যেত। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে সাকিবের ৬০ বলে ৪৯ রানের জুটিতে পুরো ৫০ ওভার খেলা চেষ্টা ছাড়া আর তেমন কিছু ছিল না। ৩৯তম ওভারে ক্রিস ওকসকে তিন চার মেরে একটু আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। স্টোকস তাঁকে তুলে নিয়েছেন পরের ওভারেই। ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১১৯ বলে ১২১ রান সাকিবের এই ইনিংসটুকুই বাংলাদেশের পাল্টা লড়াইয়ের যা একটু প্রতিচ্ছবি।

সাকিবের আউট হওয়ার (৪০তম) ওভার শেষে গড়ে বাংলাদেশের ওভারপ্রতি রান দরকার ছিল ১৬.৩০ করে। হাতে ছিল ৫ উইকেট। এখান থেকেও পুরো ৫০ ওভার খেলা যেত যদি শেষের ব্যাটসম্যানরা আরেকটু দৃঢ়তা দেখাতেন। বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে তাকালেই বোঝা যায় সাকিব বাদে বাকিদের চোয়াল কতটুকু শক্ত ছিল। আর কোনো ফিফটি নেই! দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান মুশফিকের। আর সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট ১৬ বলে ২৬ রান করা মোসাদ্দেক হোসেনের।