আফগান ক্রিকেটে গৃহযুদ্ধ?
ক্রিকেটে আফগানিস্তানের উত্থান অনেকটাই রূপকথার মতো। ২০১৮ এশিয়া কাপে সবাইকে মুগ্ধ করেছিল দলটি। দলে খেলছেন রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীর মতো তারকারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবার বিশ্বকাপে বাজে খেলছেন আফগানরা। আজ ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে পাঁচ ম্যাচেই হেরেছে দলটি। এর পেছনে কি শুধু খেলোয়াড়দের বাজে পারফরম্যান্সই দায়ী? নাকি মাঠের বাইরেও চলছে অন্য কিছু?
গুজব চলছে, ড্রেসিংরুমে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে আফগানিস্তানের। আর তা শুরু হয়েছে বিশ্বকাপের আগ থেকেই। বিশ্বকাপের কিছুদিন আগে হুট করে নিয়মিত ওয়ানডে অধিনায়ক আসগর আফগানকে সরিয়ে নতুন অধিনায়ক বানানো হয় গুলবদিন নইবকে। তখন মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান সহ কয়েক খেলোয়াড় প্রকাশ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের বিরক্তির কথা জানিয়েছিলেন। তা ছাড়া সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে বোর্ডের প্রধান নির্বাচক দৌলত আহমাদজাইয়ের দ্বন্দ্ব আছে।
আহমদজাইয়ের মতে, কোচ দলকে ঠিকঠাক মতো নির্দেশনা দিচ্ছেন না দেখে দল হারছে। অভিযোগ শুনে সিমন্স হুমকি দিয়েছেন, বিশ্বকাপে দলের এমন দুরবস্থার নেপথ্যের সব কারণ ফাঁস করে দেবেন! বুধবার এক টুইটে এমন হুমকি দিয়েছেন সিমন্স। দেশটির সাবেক প্রধান নির্বাচক দৌলত আহমদজাইয়ের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন হুমকি দিয়েছেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। টুইটে বেশি কিছু না বললেও সিমন্স ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিশ্বকাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তিনি। এরপরই দলের এমন বেহাল অবস্থার পেছনের কারণ প্রকাশ্যে আনবেন বলে জানিয়েছেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোচ।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ শুরুর আগেই সিমন্স জানিয়েছিলেন, আসগরকে সরিয়ে গুলবদিনকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাঁকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। গতকাল টুইট করে বলেছেন, ‘আমি এখন বিশ্বকাপের মাঝে আছি এবং দল যেন প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করে সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে আমি আফগানিস্তানের মানুষের কাছে বলে দেব, কীভাবে দৌলত আহমদজাই আমাদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে প্রভাব রেখেছিলেন। আসগর আফগানকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে তার প্রভাবের কথাও বলে দেব।’
এসব কথা সিমন্স হুট করেই বলেননি। গত ১১ জুন মিডিয়ার সামনে আফগানিস্তানের দল নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলেছিলেন দৌলত আহমদজাই। দল নির্বাচনের নীতিমালা পাল্টানো না হলে আফগানিস্তান কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিতবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন আহমদজাই, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল না। আমরা সব সময়ই এক পেসার নিয়ে খেলতাম, সব বোঝা কেবল রশিদ খানের কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু ইংল্যান্ডে রশিদের জন্য উপযোগী কন্ডিশন নেই। ভালো বল করলে হয়তো আমরা জিততে পারি। কিন্তু যদি কেউ ভেবে থাকে এভাবে আমরা শিরোপা জিতে যাব, তাহলে তাদের উদ্দেশে বলে রাখি, এই নীতিতে এগোলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেও এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপের মতো শিরোপা জিতবে না আফগানিস্তান।’
এদিকে কোচ-নির্বাচক দ্বন্দ্বে মুখে কুলুপ এঁটেছেন অধিনায়ক গুলবদিন নইব। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে অধিনায়ককে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো কিছু বলতে চাননি, ‘এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ তা ছাড়া রশিদ খানের সঙ্গে গুলবদিনের বিরোধ দেখা দিয়েছে, এমন কথাও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রশিদ বলেছেন, ‘আমি নইব বা বোর্ডের জন্য খেলি না। আমি খেলি আফগানিস্তানের পতাকার জন্য।’