Thank you for trying Sticky AMP!!

ইমরুল জানেন তিনি কী পারেন, কী পারেন না

ইমরুল কায়েস
>

পরদিন সকালে মাঠে নামার কথা ছিল খুলনায়, নামলেন আরব আমিরাতে। খেলার কথা ছিল লংগার ভার্সনের প্রস্তুতি ম্যাচ, খেললেন ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। নামার কথা ওপেনারের ভূমিকায়, নামলেন লোয়ার মিডল অর্ডারে...ইমরুল কায়েস অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ জিতেছেন এক ইনিংসেই!

ছিলেন খুলনায়। খেলছিলেন ঘরোয়া প্রস্তুতি ম্যাচ, সেটিও প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি হিসেবে। আকস্মিকভাবে ডাক পেলেন দলে। ব্যাগ-ট্যাগ কিছুই গোছানো ছিল না, সতর্কতা হিসেবে কেবল আগে থেকেই করানো ছিল ভিসা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা থেকে উড়ে গেলেন আরব আমিরাতে। রাতে পৌঁছালেন। পরদিন সকালেই জানলেন, খেলতে হবে একাদশে! ইমরুল কায়েস নামলেন দলের কঠিন পরিস্থিতিতে। একেবারে অচেনা ভূমিকায়, ওপেনার থেকে লোয়ার মিডল অর্ডারে! পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে গেল উইকেটে তিনি থাকতেই। এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান মুশফিক রানআউট হয়ে গেলেন তাঁর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে।

১৪ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ হুট করে হয়ে গেল ৫ উইকেটে ৮৭। সেখান থেকেই ১২৮ রানের জুটি গড়লেন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে! বাংলাদেশের এশিয়া কাপ আফগানিস্তান ম্যাচের ৭৫ ওভার বাকি থাকতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল একরকম। সেই বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে ফাইনাল খেলার। এ কি সত্যি, নাকি সিনেমার কোনো গল্প? সবার বিস্ময় এখনো কাটছে না। কীভাবে এত দ্রুত প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিলেন ইমরুল, যেখানে দলের সঙ্গে অনেক দিন থেকেও খাবি খাচ্ছেন বাকিরা!

ইমরুল নিজেও মানলেন, যতটা ভেবেছিলেন, কন্ডিশন তার চেয়েও কঠিন ছিল, ‘আমি ভাবিনি গরমটা এত হবে। খুলনাতে খেলছিলাম ৩৩-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এখানে তো প্রায় ৪২। অবশ্যই কঠিন কন্ডিশন। ব্যাটিংয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। যখন সেট হয়ে গিয়েছিলাম, তখন কষ্টটা আর কষ্ট লাগেনি।’

তবে ইমরুল আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। সুযোগ পেলে সেটি কাজে লাগবেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন বলে মনে করেন তিনি, ‘জাতীয় দলে অনেক দিন ধরে খেললে আপনি একটা জিনিস মানিয়ে নিতে পারবেন। আমি কী পারি আর কী করতে পারি না, এটা বুঝতে পারা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমার ভেতরে এটাই কাজ করছিল। আমি অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি। অনেক রকম অবস্থানে ব্যাটিং করেছি। সেদিন আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি যদি আজ অনেকগুলো ডট বল খেলেও শুরু করতে পারি, হয়তো পরে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারব। এই ভাবনাটা সব সময় আমার মাথায় কাজ করছিল। হয়তো এ জন্যই সফল হতে পেরেছি।’

মুশফিকের বিশেষ সহযোগিতা পেয়েছিলেন এশিয়া কাপে আসার আগেই। দেশে থাকতেই তাঁর সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন কেমন হতে পারে কন্ডিশন। সেটাও জানালেন ইমরুল, ‘আমাকে সবাই সমর্থন করেছে। বিশেষ করে মুশফিক আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। আসার পর থেকে তো বটেই, যখন দেশে ছিলাম, ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কী করলে ভালো হয় আমার জন্য। ও আমাকে ভালো ভালো অনেক পরামর্শ দিয়েছিল। সেটা আমার জন্য অনেক কাজে দিয়েছে। এখানে আসার পরও ও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি পারফর্ম করার পরও আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে। এটা সতীর্থ হিসেবে অনেক বড় পাওয়া।’

কিন্তু তিনি উইকেটে থাকতে থাকতেই তো মুশফিক ফিরে গেলেন তাঁর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতেই। তাতে ইমরুলের দায় সামান্যই। তবু একটা আফসোস কাজ করছে তাঁর মধ্যে, ‘এটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল আসলে। খুব টাইট কল ছিল এটা। আমি শট খেলার পর কল দেওয়ার আগেই দেখি মুশফিক অর্ধেকটা পেরিয়ে চলে এসেছে। ও আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই। আর আমি দৌড় দিলে আমিও রানআউট হতাম। আসলে একটা দুর্ঘটনা হয়ে গেছে। আমি যাওয়ার পরই প্রথমে বলেছিলাম, আমরা একটা কলেই খেলব। হয়তো আমার কলটা ও শুনতে পায়নি। যার কারণে সমস্যাটা হয়েছে।’

সত্যি বলতে কি, সংবাদমাধ্যমও দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি ইতিবাচকভাবে নেয়নি। সংবাদমাধ্যম সরাসরি ইমরুলকে নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য কখনোই তোলেনি। তুলেছে যে প্রক্রিয়ায় ইমরুল ও সৌম্য দরকারকে দলে নেওয়া হলো, তা নিয়ে। নির্বাচকদের একরকম পাশ কাটিয়ে, খোদ অধিনায়ককে না জানিয়ে স্কোয়াডের বাইরে থেকে দুজনকে উড়িয়ে নিয়ে আসা...এসব নিয়ে বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলেছিল সংবাদমাধ্যম। নৈতিক দিক দিয়ে এখনো এই প্রক্রিয়া অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ।

ইমরুলের জন্য এটাও তো একধরনের চাপ ছিল। কোনো কিছুই পক্ষে ছিল না তাঁর জন্য। না ফর্ম, না পরিস্থিতি, না প্রস্তুতি। তবু ইমরুল পেরেছেন। এই পারাটাকে তাই অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বাহবা দিতেই হচ্ছে।