Thank you for trying Sticky AMP!!

উৎসবের নতুন উপলক্ষ

প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরির পর প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মুশফিক। কালও তামিমের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পর মুশফিকই এলেন সতীর্থকে আলিঙ্গনে বাঁধতে l শামসুল হক

দৃশ্যটা পুরোনো, তবে উপলক্ষ নতুন। মাঠে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রাউন্ডসম্যানরা। মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর প্রত্যেকের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। যেন ভাগ দিতে চাইলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের আনন্দের।
একটু আগে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বক্স থেকে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে হাত নেড়ে তার আগেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ছেড়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত মাঠে আসেন, কিন্তু কাল তাঁর আসার কথা ছিল না। তবু ছুটে এলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয় দেখতে। দৃশ্যটা পুরোনো হলেও উপলক্ষ এখানেও নতুন।
বাংলাদেশের জয়ে প্রধানমন্ত্রী কতটা রোমাঞ্চিত, তা বোঝা গেল তাঁর সঙ্গে খেলা দেখা বিসিবি পরিচালক ও সাংসদ নাঈমুর রহমানের কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী খুবই আনন্দিত। বারবার বলছিলেন, ‘‘বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২ ওভার বাকি থাকতে জিতে যাচ্ছে, এ তো ভাবাই যায় না!”’
বিশ্বকাপ থেকে বুকভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। এই সিরিজে যেন সেটাই ঠিকরে বের হচ্ছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী কেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ আগে সিরিজ জয়ের উৎসব হবে, কে-ইবা তা ভেবেছিল! তবে খেলোয়াড়দের মনে স্বপ্নটা ঠিকই লুকিয়ে ছিল। কাল পাকিস্তানকে ২৩৯ রানে আটকে দেওয়ার পর আরও ঔজ্জ্বল্য পেল সেটি। সাফল্যের রাতে চোখেমুখে আনন্দের দীপ্তি ছড়িয়ে নাসির হোসেন বলছিলেন, ‘প্রথম ইনিংস শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরেই আমরা বলাবলি করছিলাম, যা করার আজই (গতকাল) করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস ছিল এটা সম্ভব।’ একটু পর সংবাদ সম্মেলনে একই কথা বলেছেন অধিনায়ক মাশরাফিও, ‘এই উইকেটে ২৪০ রান তাড়া করা কঠিন কিছু ছিল না। ড্রেসিংরুমে সবাই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম উইকেট না হারালে এটা আমরা সহজেই পার করতে পারব।’
তবে বিশ্বকাপের পর ক্রিকেটারদের নিয়ে দেশের মানুষের উন্মাদনা একটু নাকি অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছিল মাশরাফিকে। মানুষ যে তাদের এত গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো! মনে মনে একটা সংকল্প করেছেন তখনই, ‘মনে হচ্ছিল মানুষের আনন্দ ধরে রাখার জন্য হলেও এই সিরিজটা গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে হবে।’ সিরিজ জয় সেই ভালো কিছুর মধ্যেই পড়ে। তবে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সর্বোচ্চ মিলন অবশ্যই নয়। মাশরাফির কথা শুনে মনে হলো, পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ দিতে পারলেই কেবল সেই তৃপ্তিটা পাওয়া যাবে, ‘এখন তো সে রকম (৩-০) সমীকরণ এসেই গেছে। শেষ ম্যাচে সেরাটা খেলার চেষ্টা করব।’
সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ প্রকাশ্যেই নিজেদের ফেবারিট বলেছেন। ড্রেসিংরুমেও সিরিজ শুরুর আগে থেকেই হাওয়া-পাকিস্তানকে এবার ধরা হবে, মাশরাফির ভাষায়, ‘ধরে দিবানি...।’ তবে কাল সিরিজ জয়ের পর অধিনায়ক অনেক সংযত। নইলে কেন মনে করিয়ে দেবেন, ‘ওদের বোলিংয়ের দিকে দেখেন, এটা কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ।’ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়টাকে দেখতে চান বড় প্রাপ্তি হিসেবেও, ‘ছেলেদের গর্ব অনুভব করা উচিত। কারণ, আমরা খুব ভালোভাবে জিতেছি। আর সবাই হার-জিত দিয়েই সবকিছু হিসাব করে। জয় উদ্যাপন না করলে জয় কাছে আসতে চায় না। যাদের সঙ্গেই হোক না কেন, জয় উদ্যাপন করা উচিত।’
ড্রেসিংরুমে সেটা ভালোভাবেই হলো। প্রথম ওয়ানডের পর প্রথা মেনে ‘আমরা করব জয়...’ গানটা গায়নি ক্রিকেটাররা। যেন সবাই অপেক্ষায় ছিল সিরিজ জয়ের। কাল রাতে সেটাও হয়ে যাওয়ার পর আবারও জমে উঠল ড্রেসিংরুম। ‘আমরা করব জয়...’ গানের সঙ্গে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে হলো উন্মাদনায় ভরা এক উদ্যাপন। সেটি হবে না-ইবা কেন? ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সামনে বাংলাদেশ এত ছোট দল, তবু বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের পর তারা কি কম উৎসব করে? মাশরাফিও মনে করিয়ে দিলেন, ‘বিশ্বকাপে ভালো করার পরপর সবার সঙ্গে আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল সিরিজ জয়ের। এরপর যে সিরিজগুলো খেলব, সেগুলোতেও একই প্রত্যাশা থাকবে। উল্লাস-উদ্যাপনও হবে। অস্ট্রেলিয়া যখন আমাদের সঙ্গে জেতে. তারাও ড্রেসিংরুমে অনেক উল্লাস করে।’
অন্য সব জয়ের চেয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে এবারের দুটি জয় একটু আলাদাও। প্রথম জয়টি ছিল ১৬ বছর পর তাদের বিপক্ষে প্রথম। আর কালকের জয় দিয়ে তো এল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ই! তবে এই দুই জয়ের চেয়ে মাশরাফি এগিয়ে রাখছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের জয়টাকেই, ‘১৯৯৯-র জয়টা বেশি আনন্দদায়ক ছিল। তখন আমরা মাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছি। মনে আছে, তখন অনেক উৎসব করেছিলাম। ওই জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল।’
১৬ বছর পর সেই উৎসবই যেন ফিরে এল নতুন উপলক্ষ নিয়ে, আরও রঙিন হয়ে।

১৫০
মোহাম্মদ আশরাফুল (১৭৭) ও আবদুর রাজ্জাকের (১৫৩) পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ১৫০ ওয়ানডে খেললেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ওয়ানডেতে ১৫০ ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারের সংখ্যা ১৩২ জন।


সাদ নাসিম ও ওয়াহাব রিয়াজের হাফ সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে একই ম্যাচে প্রতিপক্ষের ৭ ও ৮ নম্বর ব্যাটসম্যানের প্রথম ফিফটি।

২৩৯/৬
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। সর্বনিম্ন ২৩৬ রানের ইনিংসটা ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে।