Thank you for trying Sticky AMP!!

এমন প্রত্যাবর্তন চায়নি কেউ

ফ্লাইট নামার কথা বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই জনা পঞ্চাশেক সংবাদকর্মী পায়চারি করছিলেন ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে। না কোনো ভক্ত না কোনো সমর্থকগোষ্ঠী, কোথাও কেউ নেই! বাংলাদেশ বিদেশ সফর থেকে আসবে আর বিমানবন্দরে তিল ঠাঁই থাকবে, এমন দৃশ্যের দেখা মেলে খুব কমই। আর এটা তো বিশ্বকাপ, পারফরম্যান্স যাই হোক, সমর্থকদের বরণ করে নেওয়ার প্রথার তো হেরফের ঘটার কথা না! কিন্তু এবার তাই ঘটল।

সেমিফাইনালে ওঠার আশায় বিশ্বকাপে যাওয়া। ফিরতে হচ্ছে টেবিলের অষ্টম দল হিসেবে। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাকটা আকাশ-পাতাল। সমর্থকদের অভিমানটুকু প্রকৃতির ভাষায় অনূদিত করে দিল বৃষ্টি। গুমোট আবহাওয়ায় নামছিল থেমে থেমে। এর মধ্যে ব্যাঘ্র-শাবক হাজির! আপাদমস্তক বাঘের ডোরাকাটা পোশাক পরনে এক সমর্থক। ওখানে হাজির হওয়া একমাত্র সমর্থক? আগপাছ না দেখে তা বলাই যায়। কিন্তু যে কথাটা তিনি বলতে পারলেন না, দল ভালো না খেলায় মন ভালো নেই। শুধু বললেন, ‘বৃষ্টিতে সব ধুইয়্যা যাইব।’

কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজার মুখ দেখে মনে হলো কোনো কিছুই ধুয়ে মুছে যায়নি। ইংল্যান্ড থেকে বিমানপথে ভ্রমণের ক্লান্তি লেগে ছিল চোখেমুখে। তার মধ্যে মন খারাপের চাহনিটুকুও ঠিকই পড়ে নেওয়া গেল। সংবাদকর্মীদের তাতে থোড়াই কেয়ার। ততক্ষণে শ খানেক সংবাদকর্মী প্রস্তুত ছিলেন দেশে বিমানবন্দরের বাইরে অধিনায়ক পা রাখা মাত্র তাঁর কাছ থেকে বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সের ভেতরের কথা-কারণগুলো শোনার। প্রথম প্রশ্নটা ছিল, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল কতটুকু?

বাংলাদেশ অধিনায়ক কখনো মাথা নিচু কখনো উঁচু করে অনেকটা কৈফিয়তের সুরেই বললেন,‌ ‘যে প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলাম সে জায়গা থেকে অবশ্যই হতাশ। তবে কিছু ব্যাপার পক্ষে থাকলে আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারতাম। আমার মনে হয় যে খেলার ধরন বা সবকিছু যেমন ছিল তা অনেক ইতিবাচক। কিন্তু যেহেতু দলের প্রত্যাশা ছিল অন্যরকম সে জায়গা থেকে তাই এটা হতাশার।’

স্বাভাবিকভাবেই পরের প্রশ্নটা আসে, তাহলে আমরা পারলাম না কেন? বিশ্বকাপের আগে গুঞ্জন ছিল এই দলটা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলার ইতিহাসে সেরা না হলেও অন্যতম সেরা তো বটেই। দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় কোনো সুযোগ না দিয়েই হারিয়ে শুরুটাও ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু তারপর থেকে কী যেন হয়ে গেল! ভালো পারফরম্যান্স অনেকটাই হয়ে পড়ল লোডশেডিংয়ের মতো, এই আসছে তো এই যাচ্ছে! ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলেও দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আর কোনো বড় দলকে হারানো যায়নি। কেন?

দলের প্রত্যাশা পূরণ না হতে পারার হতাশা পোড়াচ্ছে মাশরাফিকে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

মাশরাফির ব্যাখ্যা,‌ ‘যেটা বললাম ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেমিতে ওঠার অফিশিয়ালি সুযোগ ছিল। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত যদি-কিন্তুর কথা যেগুলো বললাম অবশ্যই পারফরম্যান্স ওঠানামা করেছে। ধারাবাহিকতা সাকিব-মুশফিক ছাড়া সবার সমান ছিল না। এ ছাড়াও ভাগ্য সহায় হওয়ার দরকার ছিল যেটা করেনি। এ ছাড়াও একটা সপ্তাহ গিয়েছে যেখানে বৃষ্টির জন্য শুধু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইনি। অন্য দলগুলোও লাভবান হয়েছে। এসব মিলিয়েই আরকি।’

সাকিব আল হাসানের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স ছাড়া ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে বলার মতো তেমন কিছু নেই? মুশফিক ও লিটনের একটি করে ইনিংস আছে। কিন্তু দল হিসেবে বাংলাদেশের নামের পাশে তো তিন জয় আর অষ্টম স্থানই লেখা থাকবে। তাহলে এ বিশ্বকাপ কি দলীয় পারফরম্যান্সের নয় ব্যক্তিগতই থেকে গেল? সব মিলিয়ে এ বিশ্বকাপ কি সফল, এ প্রশ্নের জবাবে অধিনায়ক সোজাসাপ্টাই বললেন,‌ ‘এর আগেও একবার বললাম। সাকিব ও মোস্তাফিজ, মুশফিক, সাইফউদ্দিন দারুণ খেলেছে। আর বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সের কথা আগেও বলেছি, আপনি যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী দেখেন তাহলে অবশ্যই হয়নি। কিন্তু এখান থেকে ইতিবাচক কিছু নেওয়ার অনেক কিছুই আছে।’

সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই অনেকটা অগোচরেই বাসায় ফেরার গাড়িতে উঠেছেন তামিম ইকবাল। মাশরাফি সংবাদ সম্মেলন শেষ করার পর মিঠুন-রুবেলরা বের হয়েছেন প্রধান ফটক দিয়েই। দলের বাকিদের দেখা গেল না। সাকিব, লিটন, মিরাজ ও সাব্বির ব্যক্তিগত কারণে দলের সঙ্গে ফেরেননি। যাঁদের চোখে পড়েছে কারও মুখেই হাসি দেখা গেল না। বোঝা গেল আজ বৃষ্টির দিন, আজ মন খারাপের দিন।

বাংলাদেশ ভালো খেললে এই দিনটাই আসত আর কয়েকটা দিন পরে। প্রচুর সমর্থক থাকত দলকে বরণ করে নিতে। তখন দিনটা অন্যরকমও হতে পারত। এই না হওয়ার দায় মাশরাফি যে মেনে নিলেন তা বোঝা গেল তাঁর চোখের ভাষায়। ছাইচাপা আগুন বৃষ্টিতে ভিজলে যেমন হয় আরকি!