Thank you for trying Sticky AMP!!

এ যেন বাগানে ঢুকে পড়া দৈত্য

ত্রিদেশীয় সিরিজে ছুটির দিনটাও শঙ্কায় কাটাতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। ছবি: টুইটার

খবরটা তামিম ইকবালই দিলেন। সাংবাদিকেরা তখনো জানতেন না বলে ভর্ৎসনা করলেন, ‘দেশের খবরই রাখেন না!’ খবরটা ঠিক দেশের নয়, তবে দেশ জড়িয়ে আছে ভালোমতোই। লন্ডনে তারাবিহর নামাজ চলার সময় মুখোশধারী এক সন্ত্রাসী ঢুকে পড়েছিল অস্ত্র হাতে। তামিমের মুখে কথাটা শোনার পরই বুকটা ধড়াস করে উঠল। আবার! তামিম স্বস্তি ফেরালেন, ‘ভাগ্য ভালো এবার কেউ ইনজুরড হয় নাই।’ আনমনে বলে উঠলেন, ‘পৃথিবীটা দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে বলেন তো!’

সন্ত্রাসবাদের নখের আঁচড় পৃথিবীর জন্য নতুন নয়। কিন্তু দিন দিন এর ধরন আর মাত্রা বদলাচ্ছে। যেন একটা দৈত্য ঢুকে পড়েছে সাজানো ফুলবাগানে। রূপকথার সেই দৈত্যটার মতো।

ডাবলিন থেকে লন্ডনের দূরত্ব এক ঘণ্টার বিমানের উড়াল। কদিন পর বাংলাদেশের ঠিকানাও হতে চলেছে যুক্তরাজ্য। সর্বশেষ এ ঘটনা যেবার ঘটেছিল, বাংলাদেশ দল নিতান্তই ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছে। ওপরে কেউ একজন তাঁদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন বলেই বিশ্বাস ক্রিকেটারদের। টিম বাস ঠিকমতো ছাড়লে যে ক্রাইস্টচার্চের ওই মসজিদে ততক্ষণে ঢুকেই যেতেন ক্রিকেটাররা।

লন্ডনে গেলে ক্রিকেটাররাও সেভেন কিংস মসজিদেও নামাজ পড়তেন। সেখানেই এই ঘটনা। ৩০ মে যুক্তরাজ্যে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ। ডাবলিন থেকে ১৮ মের টিকিট কেটেছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ৯ ম্যাচের তিনটিই লন্ডনে।

এমনিতে বাংলাদেশ দলের বিদেশ সফর আর আগের মতো নেই। ছবিটা অনেকটাই বদলে গেছে। নিজ গরজে বাংলাদেশ দল নিরাপত্তার আয়োজন করে রেখেছে। দলের ম্যানেজার হিসেবে এই সফরে আসা মিনহাজুল আবেদিন জানালেন, আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন নিরাপত্তার আয়োজন করে দিয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট থেকে চারজন নিরাপত্তাকর্মী যুক্ত হয়েছেন দলের সঙ্গে। হোটেল থেকে মাঠ—এই নিরাপত্তাকর্মীরা সব সময়ই দলের ছায়াসঙ্গী।

কাল বাংলাদেশ দল অনুশীলন করল ছবির মতো সাজানো এক ঘুম-ঘুম গ্রামে। গ্রাম মানে আদতে শহরই। স্যান্ডিমাউন্ট, সমুদ্রের কোল ঘেঁষে। বালিয়াড়ির বুকের মধ্যে গড়ে ওঠা বলেই এমন নাম। কিন্তু এত সুন্দর নৈসর্গও উপভোগ করার জো নেই ক্রিকেটারদের। তাঁদেরও কি আর সব সময় ঘেরাটোপে ঢুকে থাকতে ভালো লাগে? দুই খেলার মাঝখানে চার দিনের বিরতিও তাই উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারছে না। আজ দলের সবার ছুটি দিয়েছেন কোচ। ছুটিটা কী করে কাটবে, সেটাই এখন উল্টো দুশ্চিন্তার। খেলা-অনুশীলনে থাকলে তবু সময় কেটে যায়। এমনিতে খেলা না থাকলে দলের সবাই রোজা রাখেন। এখানে ইফতার হয় রাত ৯টার কিছুর পরে। রোজার এই দীর্ঘ এই সময় কাটানোও তো কঠিন।

কিন্তু বাস্তবতাও মেনে নিয়েছেন সবাই। গতকাল ছিল শুক্রবার। ক্রাইস্টচার্চের সেই ঘটনার পর এই প্রথম বিদেশ সফরে দ্বিতীয় শুক্রবার। অন্য কোনো সময় হলে বাংলাদেশ দল জুমার নামাজ স্থানীয় কোনো মসজিদে গিয়ে পড়ত। সেটাই অলিখিত নিয়ম ছিল দলের মধ্যে। কিন্তু ‘ক্রাইস্টচার্চ’ বদলে দিয়েছে সেটাও। ক্যাসলনক হোটেলের একটা হল ঘরকেই মসজিদ বানিয়ে নিয়েছেন। এখানে দলের তারাবিহর নামাজও চলছে। তারাবিহ পড়াচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ।

ক্যাসলনকের খাবারের মেন্যু তো আর দেশি নয়। সাহ্‌রি ও ইফতারি আনানো হচ্ছে বাইরে থেকে। ঘরের খাবারের স্বাদ পেতে সেটা বানানো হচ্ছে প্রবাসী কোনো না কোনো পরিবারের রান্নাঘরেই। কেবল সাকিব আল হাসানই ডাবলিনে পরিবার নিয়ে এসেছেন। মেয়ের আবদার মেটাতে তাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে হচ্ছে। হোটেলটা শহর থেকে অনেক দূরে বলে কেউ কেউ বেড়ানোর উৎসাহও পাচ্ছেন না।
ক্রাইস্টচার্চের ঘটনা সবচেয়ে বেশি মানসিক ধাক্কা দিয়েছে তামিমকে। কাল বলছিলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। আগে বিদেশে গেলে এসব নিয়ে ভাবতাম না। এখন বিদেশে এলে, কোনো একটা রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে সব সময়ই টেনশন থাকে—কিছু একটা হয় নাকি।’

‘এটাই জীবন, এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে’—তামিমের এই দীর্ঘশ্বাস হয়তো এখন পৃথিবীবাসীরই। যে অসুখে আক্রান্ত হয়েছে পৃথিবী, শিগগিরই যে এর মুক্তি নেই!