Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রিকেটের 'বাদশা' হতে পারতেন ফুটবলেরও

জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা। ফাইল ছবি

‘মহসিন খান এলবিডব্লু ব জাহাঙ্গীর শাহ’

স্কোরকার্ডে লেখা এই একটি বাক্যেই জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা ঢুকে গেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম উইকেটশিকারি। ৩৪ বছর আগে শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় জনপ্লেয়ার এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। মাত্র ৯৪ রানের পুঁজি নিয়ে ডান হাতি মিডিয়াম পেসার জাহাঙ্গীর শাহ সে ম্যাচেই আতঙ্ক ছড়িয়েছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশের সংগ্রহকে যখন ইমরান খানের পাকিস্তান দল হেসে খেলে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই বাদশার সুইং কাবু করল তাদের শক্তিশালী ব্যাটিংকে। মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে তিনি ফিরিয়ে দিলেন দুই তারকা মহসিন খান ও রমিজ রাজাকে। দেশের ক্রিকেটের টেস্ট–পূর্ব যুগের অন্যতম সেরা এই তারকা সম্বন্ধে একটা তথ্য সবাইকে অবাক করতেই পারে। তিনি ক্রিকেটে মন দিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে বারবার উপেক্ষিত হয়েই।

সত্তরের দশকে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলটাও খুব জমিয়ে খেলতেন। খেলেছেন কাজী সালাউদ্দিন, মনোয়ার হোসেন নান্নুদের সতীর্থ হয়ে, আবাহনীর হয়েও। ফুটবলটা যদিও ওয়ারির হয়ে শুরু করেছিলেন। আবাহনীতে যোগ দিয়েই ফুটবল নিয়ে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। অদম্য ইচ্ছা ছিল দেশের জার্সিতে খেলবেন। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশ জাতীয় দলে বড় বড় সব নাম। রক্ষণের খেলোয়াড় বাদশা খেলবেন কার জায়গায়। জাতীয় দলে বারবার ‘স্ট্যান্ডবাই’ হিসেবে নিজের নামটা দেখতে ভালো লাগছিল না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন—ফুটবল নয়, ক্রিকেট দিয়েই প্রতিনিধিত্ব করতে হবে দেশের।

বাদশা যে সময় খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন, সে সময়টা পুরোপুরি ছিল ফুটবলের। বলে লাথি দিলেই টাকা উড়ত সে সময়টায়। হাজার হাজার দর্শক ছুটে আসত প্রিয় দল আর খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে। ফুটবলের গ্ল্যামারটা উপেক্ষা করা কঠিন ছিল। খেলা পাগল যুবাদের পক্ষে তো আরও কঠিন। কিন্তু বাদশা ক্রিকেটকেও সমানভাবেই গুরুত্ব দিতেন। ক্রিকেট সে সময় সারা বছরের খেলা ছিল না বলেই অবশ্য আলাদা মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন। শীতকালীন খেলা ক্রিকেট শুরু হতো ফুটবল মৌসুম শেষ হওয়ার পরেই। জগন্নাথ কলেজের ব্লু ছিলেন। খেলেছেন কলেজের ফুটবল দলে। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলার সুযোগও হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আবাহনী–প্রেম। সেই প্রেম থেকে গিয়েছিল ফুটবল ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্তই।

ঢাকার ফুটবলে লম্বা থ্রো করতেন বাদশা। তাঁর লম্বা থ্রো থেকে সালাউদ্দিন গোল করেছেন, এমন নজিরও আছে। সেই বাদশাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটশিকারী—ভাবা যায়!

২০০০ সালে প্রথম আলোর পাঠকদের রায়ে স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।