Thank you for trying Sticky AMP!!

টানা ১০ হারে শুরুর দ্বৈরথ এত একপেশে?

>জিম্বাবুয়ে একসময় ছিল বাংলাদেশের প্রবল প্রতিপক্ষ। পাশার দান উল্টে বাংলাদেশই এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শক্তিমত্তায় এগিয়ে। দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই যাত্রাটা কেমন ছিল?

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই মোড় ঘুরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। বাংলাদেশ দল এখন প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী দলের মুখোমুখি হতে চায়। সে হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজটা যে ম্যাড়ম্যাড়ে, তা বলা যেতেই পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সিরিজ নিয়ে কোনো উত্তাপ নেই। বাংলাদেশ দলের খেলার সময় সাধারণত যেমনটা থাকে আরকি। পাড়ার চায়ের দোকানেও এই সিরিজ নিয়ে আলোচনার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। ধুর! জিম্বাবুয়ে না হয়ে আয়ারল্যান্ড হলেও ভালো হতো। অন্তত একটা নতুন দলের মুখোমুখি হওয়ার স্বাদ মিলত। এমন ভাবনা অনেকেরই। তার মধ্যে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাই বেশি। তবে আন্তর্জাতিক ময়দানে বাংলাদেশ দলের শুরুটা যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কাছে কিন্তু জিম্বাবুয়ে মানেই ‘নস্টালজিয়া’। একটা সময় এই দলটার বিপক্ষেই যে বাংলাদেশ অনেক ভুগেছে।

২১ বছর আগের কথা। কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রেসিডেন্টস কাপে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। অ্যালিষ্টার ক্যাম্পবেলের সেই দলটার সঙ্গে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার এই দলটার কোনো তুলনাই চলে না। সেই দলে ছিলেন ফ্লাওয়ার আর হুইটাল ভাইয়েরা। ছিলেন পল স্ট্র্যাং, গেভিন রেনি আর ক্রেগ ইভানস। প্রথম লড়াইয়েই ফ্লাওয়ার ভাই ও গাই হুইটালের ফিফটিতে ৪ উইকেটে ৩০৫ রান তুলেছিল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ হারলেও একেবারে ছেড়ে কথা বলেনি। হাবিবুল বাশার ও আকরাম খানের ফিফটিতে রান উঠেছিল ২৫৭। সে ম্যাচের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেই চলছিল।
স্মৃতির পাতা উল্টে দেখুন, ওয়ানডে সংস্করণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ১০ ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ। বেশির ভাগ ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হার— ৪৮ রান, ১৯২ রান, ১২৬ রান, ৩ উইকেট, ৭ উইকেট, ১২৭ রান, ৩৬ রান, ৫ উইকেট, ১৪২ রান, ৭ উইকেট। এর মধ্যে সেই প্রেসিডেন্ট কাপেই ১৯২ রানের হারটা বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে লড়াইয়ের খেরোখাতায় সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। ১৯৯৯ সালে ঢাকায় মেরিল কাপে অবশ্য জিম্বাবুয়েকে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচেই মেহরাব হোসেন অপি বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন। অনভিজ্ঞতার কারণেই হোক আর যেটিই হোক, তীব্র লড়াই শেষে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩ উইকেটে।

এই জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেই একের পর এক আইসিসি ট্রফিতে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের। ১৯৯০ সালে নেদারল্যান্ডসের আইসিসি ট্রফিতেই জিম্বাবুয়েকে সেমিফাইনালে ভালোই বাগে পেয়েছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচটা জিতে ফাইনালে উঠে গেলে ১৯৯২ বিশ্বকাপেই হয়তো খেলতেন নান্নু-বুলবুলরা। ৯ বছর পর সেই স্বপ্ন পূরণ হলেও আন্তর্জাতিক ময়দানে জিম্বাবুয়ে-ক্ষতটা ছিলই। সেটি ১৯৯৭ থেকে ২০০১ পর্যন্ত—এই ৫ বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। অর্থাৎ ১ থেকে ১০—প্রথম ১০ হারই এই ৫ বছরে।

মাসাকাদজার দলের শক্তি যেমনই হোক জিম্বাবুয়ে নামটা অন্তত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনে খুন তৈরি করতেই পারে। তাদের মনে পড়ে যেতে পারে অতীতের দুঃসহ সব স্মৃতির কথা। এখনকার দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একের পর এক ম্যাচ জিতে পূর্বসূরিদের কষ্ট কিছুটা হলেও মেটাতে চান তারা। এখন তো প্রায় প্রতিবছরই জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে থাকে, যার মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই পুরোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ ভালো। এটি আসলে ভদ্রতা করে বলা। পরিসংখ্যান তো ভদ্রতার ধার-ধারে না। সোজা কথাটা সোজা করেই বলতে জানে। আর সেই সোজা কথাটা হলো—২০০৫ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে সাতটি ওয়ানডে সিরিজের একটিতেও জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে।

দিনবদলের হাওয়াটা লাগে ২০০৪ সালে। এর আগে ২০০১ সালে টানা দশম হারের পর মাঝে দুই বছর জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। বৃষ্টি ধুয়ে দেয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ। সঙ্গে টানা হারের খেদও কি? নইলে তৃতীয় ম্যাচেই কেন দেখা মিলবে প্রথম জয়ের! হ্যাঁ, সেই সফরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয়ের মুখ দেখেছিল বাংলাদেশ। হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে গ্রান্ট ফ্লাওয়ার-তাইবু-স্ট্রিকদের জিম্বাবুয়েকে ৮ রানে হারিয়েছিলেন বাশার-সুজনরা।

১৪ বছর আগে পাল্টে যাওয়ার সেই দখিনা হাওয়াটা গত ৪ বছর ধরেই একমুখী। বাংলাদেশ সমর্থকদের জানালায় তা চার বছর ধরেই জয়ের বার্তা নিয়ে এসেছে। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ে দলের সফর থেকে ধরা যায়। পাঁচ ম্যাচের সেই ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। পরের বছর এসে তিন ম্যাচের সিরিজে আবারও ধবলধোলাই। আর এ বছরের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজেও দুইবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়ে জেতেনি জিম্বাবুয়ে। অর্থাৎ, দলটির বিপক্ষে সর্বশেষ ১০ ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। কেমন মজার বিষয়, তাই না? প্রথম ১০ ম্যাচ জিতল জিম্বাবুয়ে আর শেষ ১০ ম্যাচ (এখনো পর্যন্ত) জিতল বাংলাদেশ। ভাবছেন শোধ-বোধ? নাহ, ফারাক তো আছেই। সেটি পালাবদলের ফারাক।

যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক সময় ভালো খেলাই ছিল বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা এখন সেই দলটির মুখোমুখি হওয়ার আগে অধিনায়ক বলেন, জিতলে কিছু না। হারলেই শেষ। শুরুর সেই কঠিন দিনগুলো পার করে আসা ‘নস্টালজিক’ প্রবীণ সমর্থকেরা এ কথায় কী ভাবছেন?