Thank you for trying Sticky AMP!!

টেস্টের মিরাজ এখন ওয়ানডেরও

আজ ৪ উইকেট নিয়ে মিরাজ ধসিয়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ছবি: শামসুল হক
>২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপের আউট হওয়া প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই তাঁর শিকার, এও বলে দিচ্ছে প্রতিটা উইকেটের মূল্য কত।

‘একটু খেয়ে নিই’—টেস্ট সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী মিরাজের সামনে রাখা কোমল পানীয়তে দেওয়া চুমুক এখন সামাজিক মাধ্যমের মিম হিসেবে ভাইরাল। আজ সংবাদ সম্মেলনে এসেই কথাটা পাড়লেন, ‘কী যে এক ভিডিও ছেড়ে দিয়েছেন...।’ আশ্চর্য সরলতামাখা মিরাজ এরপর বলতে শুরু করলেন। টেস্টে এর আগে দুবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেও আজই প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা হয়ে এলেন সাংবাদিকদের সামনে। মিরাজের উইকেট-তৃষ্ণা এবার টেস্ট থেকে ওয়ানডেতেও!

ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই ১৯ উইকেট! টেস্টে মেহেদী মিরাজের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। সাদা পোশাকে শুরুর সেই প্রতিশ্রুতি ধরে রেখে ১৮ টেস্টে ৮৪ উইকেট হয়ে গেছে তাঁর। কিন্তু রঙিন পোশাকে মিরাজের এমন ঝলমলে বোলিংয়ের দেখা নিয়মিত মিলছিল না। প্রথম ৫ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২১ ওয়ানডেতে উইকেট ছিল ২০টি। আজ মিরাজ সাদা পোশাকের দুর্বোধ্যতা রঙিন পোশাকেও টেনে আনলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্টে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। এবার শেষ ওয়ানডেতেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

মূলত তাঁর বোলিংয়েই খাবি খেতে খেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৮তেই ডুবে গেল। ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপের আউট হওয়া পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই তাঁর শিকার, এও বলে দিচ্ছে প্রতিটা উইকেটের মূল্য কত। এর আগে মাত্র একবারই ৩ উইকেট পেয়েছিলেন ইনিংসে। সেটি ধরে ইনিংসে কমপক্ষে ২ উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র চারবার। এই ওয়ানডের আগে টেস্টের মিরাজের দেখা সেই অর্থে মিলছিল না। এবার মিলে গেল!

সংবাদ সম্মেলনে চনমনে মিরাজ বললেন, ‘খুব ভালো লাগছে। আজ টস জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মাশরাফি ভাই টস জিতে ফিল্ডিং নেন। উইকেটও এমনই ছিল যে, প্রথম দিকে স্পিনাররা সহায়তা পাবে। মাশরাফি ভাই আমাকে এক প্রান্ত দিয়ে টানা আট ওভার বোলিং করিয়েছিলেন। পরে ফিরে দুইটা ব্রেক থ্রু দিতে পেরেছিলাম। খুব ভালো লেগেছে।’

কীভাবে রূপ বদল করলেন, সেটিও জানালেন, ‘টেস্ট শুরুর সময় ভেবেছিলাম এই সংস্করণে কীভাবে খুব ভালো করে ওয়ানডে খেলা যায়। ওয়ানডেতে আমি ধারাবাহিক ছিলাম না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে টানা খেলছি। আমার মনে হয়, ওয়ানডেতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো রান থামানোর জন্য বোলিং করা। যদি রানের চাকা থামাতে পারি, তাহলে কিন্তু দলের অধিনায়ক আমার ওপর আস্থা রাখবেন। আমি সেই চেষ্টা করেছি। আমার যাঁরা সতীর্থ আছেন তাঁরা তো সহায়তা করছেনই। আজকের ম্যাচে শেষে যে দুইটা উইকেট পেলাম, তার আগে মাশরাফি ভাই আর মুশফিক ভাই আলোচনা করছিলেন। তাঁদের মনে হয়েছিল, এই সময়ে মিরাজ যদি বোলিং করে ও ভালো করবে।’

উইকেট পেলে কোন বোলারেরই না ভালো লাগে। আজ তো একবার এমন উদ্‌যাপন করলেন, আম্পায়ার আঙুল তুলে দিতেই ভোঁ দৌড়। তবে মিরাজ জানালেন, উইকেট পাওয়ার চেয়ে তাঁর বেশি লক্ষ্য থাকে রানটা যেন বেশি দিয়ে না ফেলেন। সেটা যে দলের স্বার্থটাকে বড় করে দেখেই, সেটা মিরাজ না বললেও চলত। উদীয়মান এই স্পিনার বলছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে নিয়মিত ওয়ানডে খেলছি। আমাকে মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাই সব সময় বলেন, এই সংস্করণে আঁটসাঁট বোলিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি আঁটসাঁট লাইনে বোলিং করি, ইকোনমি যদি ঠিক থাকে, তাহলে অন্য প্রান্তে উইকেট পড়ার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘ দিন আঁটসাঁট বোলিং করে যাওয়ার কারণেই হয়তো আজকে চারটা উইকেট পেয়েছি। তাঁরা আমাকে সব সময় বলে এসেছেন আঁটসাঁট বোলিং করার জন্য। এটা হতে থাকলে তিন-চার-পাঁচটা উইকেট হয়ে যাবে।’

দলের চাওয়া মেনে ইদানীং নিয়মিতই নতুন বল হাতে তুলে নিতে হচ্ছে। প্রথম পাওয়ার প্লেতে স্পিনারদের ওপর চড়াও হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে ব্যাটসম্যানদের। এই চ্যালেঞ্জ নিয়েও এই সিরিজে মিরাজের ইকোনমি ছিল ৩.৩৮। ক্যারিয়ার ইকোনমিও এখনো সাড়ে চারের নিচে রাখতে পেরেছেন। মিরাজ বলছেন, ‘শুরুতে বোলিং করা একটু কঠিন। মাত্র দুজন ফিল্ডার বাইরে থাকে। ওই খানে কিন্তু একটু এদিক-সেদিক হলে বাউন্ডারির ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে আমার শুরুর দিকে বোলিং করতে ভালো লাগে। এই সময়ে ভালো জায়গায় বোলিং করলে কিন্তু সুযোগও বেশি থাকে উইকেট পাওয়ার। ডট বল খেলানোরও সুযোগ বেশি থাকে। আমাকে যখন নতুন বল দেওয়া হয়, আমি চেষ্টা করি জায়গায় বোলিং করে যাওয়ার, আর বাউন্ডারির সুযোগ যেন না পায়। ওখানে এক রান হোক, কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু বাউন্ডারির সুযোগ পেয়ে গেলে ব্যাটসম্যানের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। চেষ্টা করি যদি আঁটসাঁট লাইনে জায়গায় বোলিং করে যাওয়ার। এক-দুই রান হোক কিন্তু বাউন্ডারিটা যেন না হয়।’

এই হলো মিরাজ। তাঁর মতো তাঁর বোলিং দর্শনও সরল। তবে এই সরলের গরলেই দুর্বোধ্য ধাঁধায় অনেক বাঘা ব্যাটসম্যান। সেটা টেস্টে আগেই ছিল। এখন থেকে ওয়ানডেতেও...।