Thank you for trying Sticky AMP!!

ডায়েরিতে লিখতাম ক্রিকেট আর করোনার কথা

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো।
করোনাকাল কেমন কাটছে জানালেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

একটা সময় আমি সত্যি সত্যিই টুকটাক ডায়েরি লিখতাম। ২০০৬ সালের দিকে হবে, জাতীয় দলে ঢোকার আগে। প্রায়ই লিখতাম তখন। অনেক সময় খেলা নিয়ে, অনেক সময় অন্য কিছু নিয়ে। পরে আস্তে আস্তে অভ্যাসটা চলে যায়।

ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকলে এখন হয়তো আবার লেখা হতো। আবার উল্টোটাও হতে পারতো। দেখা গেল এই করোনাভাইরাসের সময়ে এসেই আমার ডায়েরি লেখা বন্ধ! আসলে ছেলের অনলাইন স্কুল নিয়ে আমাকে বাসায় এতই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে যে অন্য কিছু নিয়ে ভাবারও সময় পাচ্ছি না। খেলায় থাকলে তো অনেক সময় কিছু ফাঁকা সময় পাই। আড্ডা-গল্প করতে পারি। এখন ওই সময়টাও পাওয়া যাচ্ছে না।

সকালে নাস্তার পর ওর হোমওয়ার্কের জন্য ছেলেকে নিয়ে বসতে হয়। টিচার হোম ওয়ার্ক দিলে সেটা করে ছবি তুলে আবার টিচারকে মেইল করতে হয়। অন লাইনে ক্লাস থাকে একেক দিন একেক সময়ে। সন্ধ্যায় ওকে নিয়ে পড়তে বসতে হয়। সব মিলিয়ে দারুন ব্যস্ততা।

সুতরাং অভ্যাসটা টিকে থাকলেও ডায়েরি লেখাটা কঠিন হয়ে যেত এই সময়ে। তবে লিখলে করোনাভাইরাস নিয়েই বেশি লেখা হতো। এই মহামারীর প্রভাব আমাদের সবার জীবনেই পড়ছে। মনেপ্রানে দোয়া করছি যত দ্রæত সম্ভব আমরা এই দুঃসময়টা কাটিয়ে উঠতে পারি। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রতিটি দেশই মহামারীতে আক্রান্ত। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

সবার এখন সচেতন থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। এটা নিয়ে যদি আমরা তাড়াহুড়া করি, পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার আগেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করি, তখন আরও বেশি বিপর্যয় হবে। সেজন্যই সবার সচেতনভাবে এগোনো উচিত। অনেকে আর্থিক কষ্টে আছে, অনেকের অনেক রকম চাহিদা আছে। তারপরও আমি বলব, প্রত্যেকের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সেটাই হবে সবার জন্য মঙ্গলজনক।

হ্যাঁ, আমার চাহিদা বলতে ক্রিকেট খেলা। সেটা আমি দারুনভাবেই মিস করছি। সেদিন দুঃখ করে আমার স্ত্রীকে বলছিলাম, ইস্, কতদিন যে ক্রিকেট খেলতে পারছি না! বাসায় হয়তো ব্যাট নিয়ে একটু শ্যাডো করি, কিন্তু খেলার আসল মজাটা তো আর পাই না। ফিটনেসের কাজগুলো করছি। জাতীয় দলের ট্রেনার-ফিজিও প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ফিটনেসের জন্য আলাদা আলাদা কাজ দিয়ে দিয়েছে। আমি অবশ্য লকডাউনের শুরু থেকেই ফিটনেস নিয়ে আছি। এখন ওদের রুটিন অনুযায়ী কাজ করছি।

তবু আমার হাত বলেন, মস্তিস্ক বলেন...ক্রিকেট খেলাটাকে মিস করছেই। করোনার অপ্রত্যাশিত ছুটিতে ডায়েরি লিখলে ক্রিকেট মিস করাটাও নিশ্চয়ই বড় অংশ হতো সেটার। টানা খেলার মধ্যে থাকলে আমরা অনেক সময় বলি, দুই-তিন দিন যদি একটু বিরতি পেতাম! কিন্তু দুই-তিন দিন পর ঠিকই আবার মাঠে যেতে ইচ্ছে করে। আর এখন তো এই লম্বা বিরতিতে আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে পারছি, রক্তের সঙ্গে ক্রিকেট আসলে কতটা মিশে গেছে।
বাসায় ছেলেকে পড়ানোর পাশাপাশি টেলিভিশনে খবর দেখি। খবর ছাড়া টিভি খুব একটা দেখা হয় না আমার। মাঝে মাঝে পুরোনো খেলা দেখি। কিছুদিন আগে সম্ভবত গাজী টিভিতে বাংলাদেশের আগের কয়েকটা ম্যাচ দেখিয়েছিল। সেগুলো কিছু কিছু দেখেছি। এর বাইরে কিছু ধর্মীয় বই পড়ার চেষ্টা করি, কুরআন শরীফ পড়ি। আব্বু-আম্মু আছেন, ওনাদের সঙ্গে গল্প করি। সব মিলিয়ে সময় কাটাতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।

এর মধ্যে আবার টুকটাক রান্নাও করেছি। ছেলে একদিন বায়না ধরল নান রুটি খাবে। সেটা বানালাম, তার আগে একদিন পিৎজা বানালাম। জীবনে এই প্রথম, তাও ইউটিউব দেখে। তবে আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলে খেয়ে খুব খুশি। অনেক প্রশংসা করেছে আমার বানানো খাবারের।

তামিম, মাশরাফি ভাই, সাকিব, মুশফিক-ওদের সঙ্গে টুকটাক কথা হয় ফোনে। হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট আদানপ্রদান তো আছেই। সাকিবের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ওরা আমেরিকায়। ওখানকার অবস্থাও নাজুক। দোয়া করি যেন সব ঠিকঠাকভাবে হয়। ওর পরিবার যেন নিরাপদে থাকে।

মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন কথা হচ্ছিল না। সেদিন অনেক কথা হলো, দুষ্টামি হলো। দেশের এই পরিস্থিতিতে অনেক দিন প্রানখুলে হাসতে পারছিলাম না। মাশরাফি ভাইর সঙ্গে কথা হয়ে ভালোই হয়েছে। অনেক হাসালেন, মজা করলেন। জানেনই তো ওনার সঙ্গে কথা বললে কি হয়। ভালো কথা, মাশরাফি ভাই কিন্তু তাঁর এলাকায় এখন অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। ভ্রাম্যমান চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন মানুষকে। সেদিন দেখলাম করোনা রোগীদের পরীক্ষার জন্য নড়াইলের ডাক্তারদের বিশেষ কেবিন বানিয়ে দিয়েছেন। এটা দারুণ কাজ হয়েছে।

জনহিতকর কাজ নিয়ে মাশরাফি ভাইর সঙ্গে আগেও আমার কথা হয়েছে। ওনার ভালো ভালো আইডিয়া আছে এ ক্ষেত্রে। সবসময় বলতেন, এসব চিন্তাভাবনা বাস্তবায়ন করতে পারলে মানুষের অনেক উপকার হবে। দেখে ভালো লাগছে যে উনি সেভাবেই কাজ করছেন। নিজের চিন্তা ভাবনার বাস্তবায়ন করছেন।

সাকিবও তাঁর ফাউন্ডেশন নিয়ে এগিয়ে এসেছে, তামিম অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে, মুশফিক ব্যাট নিলামে তুলছে, অন্য ক্রিকেটারেরাও যে যা পারছে করছে- এসব দেখে খুবই ভালো লাগে। সবাই মানুষের উপকার করছে। আমিও আমার সাধ্যের মধ্যে কিছু কাজ করছি। সময়টাই আসলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আর হ্যাঁ, অবশ্যই ধৈর্য ধরারও। আসুন আরেকটু ধৈর্য ধরে আমরা এই খারাপ সময়টা পার করে দেই।