Thank you for trying Sticky AMP!!

তাইজুলকেই দেখাতে হলো 'মুখস্থ' ক্রিকেট

ব্যাটসম্যানদের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলেন তাইজুল। ছবি: প্রথম আলো
>তাইজুল-মোসাদ্দেকের ৪৮ রানের জুটিতেই দ্বিতীয় দিনে অলআউট হওয়া এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে আগামীকাল আবার ব্যাট করতে নামবে বাংলাদেশ

প্রথম দিন বাংলাদেশের সেরা পারফরমার ছিলেন তাইজুল। তা না হলেও হয়তো সংবাদ সম্মেলনে আসতে হতো, দেশের পক্ষে দ্রুততম উইকেটের সেঞ্চুরি করেছেন বলেই। সংবাদ সম্মেলনে এসে অবশ্য নিজের পারফরম্যান্স নয়, দল নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে বেশি। বাংলাদেশকে এগিয়ে রেখে আফগানদের ব্যাটিংয়ের ময়নাতদন্ত করেছেন একটি শব্দে, মুখস্থ। তাঁর ভাষ্য মুখস্থ ক্রিকেট খেলেই নাকি প্রথম দিনটা কাটিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান।

‘মুখস্থ খেলা’ বলতে তাইজুল দুটি জিনিসের কথা বলতে পারেন। এক, উইকেটের ধরন বুঝে ক্রিকেটের বহু পরীক্ষিত নিয়মে খেলেছে আফগানিস্তান। দুই, উইকেট যেমনই হোক, আগে থেকে যেভাবে ব্যাট করবে ভেবেছে আফগানিস্তান, সেভাবেই করেছে। যে অর্থেই বলুন, চট্টগ্রামের উইকেটে যে ওই মুখস্থ ক্রিকেটই কার্যকর সেটা অলআউট হওয়ার আগে ৩৪২ রান করে প্রমাণ দিয়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, সাফল্যের এই সূত্র জেনেও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। তাইজুল নামার আগে অন্তত তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।

তাইজুল অসাধারণ করেছেন, সেটা বলা যাবে না। দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে নবম উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেকের (৪৪) সঙ্গে ৪৮ রান তুলেছেন, সে সঙ্গে নিজের নামের পাশে লিখেছেন ১৪ রান। যেভাবে জুটিটা গড়ে উঠেছে, সেটাও সঠিক পদ্ধতি নয়। টেলএন্ডারদের নিয়ে জুটি গড়ার সেরা উপায় হচ্ছে ওভারের প্রথম ৪/৫ বল খেলে শেষ ২/১টি বল টেলএন্ডারকে দেওয়া, হেডিংলিতে যার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছেন বেন স্টোকস। মোসাদ্দেক হোসেন তা পারেননি, দুজনের ৯৪ বলের জুটিতে তাইজুলকেই খেলতে হয়েছে ৫৫ বল।

এতেই আরও মহিমান্বিত হয়েছে তাইজুলের ব্যাটিং। কত অনায়াসেই না খেলছিলেন রশিদ খান ও কায়েস আহমেদের বোলিং। শেষ পর্যন্ত একমাত্র পেসার ইয়ামিন আহমেদজাইকে ডেকে আনতে হয়েছিল তাঁকে আউট করার জন্য। তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি, তাইজুল দৃঢ়তা দেখিয়ে ঠিকই ব্যাট করে গেছেন। তখনই মনে হচ্ছিল, গতকাল রহমত শাহের ব্যাটিং নিয়ে ভুল কিছু বলেননি তাইজুল, ‘রহমত যে খুব ঝামেলায় (বোলারদের) ফেলেছে তা না। দলকেও খুব পেছনে ফেলে দিইনি। মুখস্থ খেলাটাই খেলে গেছে। উইকেট অনেক কিছু থাকলে এমন খেলতে পারত না।’ উইকেটে যে আসলেই তেমন কিছু নেই সেটা মনে করাচ্ছিলেন রশিদ খানও। বাংলাদেশের স্পিনারদের মাঠের নানা প্রান্তে আছড়ে ফেলে টেস্টে নিজের প্রথম ফিফটি তুলেছেন এক শর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে।

বাংলাদেশের টপ অর্ডার যদিও অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। উইকেটে কিছু নেই, সেটা তাদের ব্যাটিং দেখে বোঝা যাচ্ছিল না। কেউ গুগলিতে উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন, কেউ আবার গুগলি বুঝতে না পেরে। কেউবা ফিঙ্গার স্পিনের গতিতেই বিভ্রান্ত হয়েছেন। একমাত্র যাঁর মাঝে একটু নির্ভরতা খুঁজে নেওয়া হচ্ছিল, সেই মুমিনুলই যেভাবে আউট হলেন সেটা লজ্জার কারণ হয়ে থাকবে বহুদিন। অথচ তাইজুল কাল বলেছিলেন, এই উইকেটের পক্ষে কী করা সম্ভব সেটা বাংলাদেশ দল জানে। তাইজুলের কথায় দ্বিতীয় দিন নিয়ে আশার সুরও তাই পাওয়া যাচ্ছিল, ‘উইকেট এখন মুখস্থ হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে টার্ন বা বাউন্স থাকলে ওরা আরও সাবধানী থাকত। আমাদের আরও উইকেট বেশি হতো। বল একই রকম হচ্ছে। ওরা মুখস্থ খেলছে।’

প্রথমে নিজেদের বোলিং ব্যর্থতার অজুহাত মনে হচ্ছিল সেটা। কিন্তু আজকের ব্যাটিং পারফরম্যান্স দেখে তাইজুলের ভুল আসলে ধরাও যাচ্ছে না। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল তারাও মুখস্থই খেলছে। উইকেটে স্পিন ধরবে ধরে নিয়েই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল। কিন্তু উইকেটে তেমন কোনো জুজুর ছাপ না দেখেও সবাই তাড়াহুড়া করেছেন। অন্যপ্রান্তে উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আবার জুটি গড়ায় মন না দিয়ে দ্রুত বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজেছেন। অন্যপ্রান্তে মোসাদ্দেকের মতো ব্যাটসম্যানকে পেয়েও মুমিনুলের ওভাবে একের পর এক স্লগ করার চেষ্টা কিংবা মেহেদী হাসান মিরাজের ম্যাচের ওই মুহূর্তে অমন সুইপ খেলার আর কী ব্যাখ্যা হতে পারে?

সে তুলনায় তাইজুলের মুখস্থ ক্রিকেটই মন ভরিয়ে দিয়েছে। হতাশার মাঝে পরিস্থিতি বুঝে ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তাইজুল অন্তত বোঝাতে পেরেছেন ‘মুখস্থ খেলা’ বলতে তিনি কী বোঝেন। সমস্যাটা হলো দলের মূল ব্যাটসম্যানরা অন্য কিছুই মুখস্থ করে এসেছিলেন আজ!