Thank you for trying Sticky AMP!!

তামিম ইকবাল

নাম

 তামিম ইকবাল খান

জন্ম

 মার্চ ২০, ১৯৮৯, চট্টগ্রাম

ধরন

 ওপেনিং ব্যাটসম্যান

অভিষেক

 বনাম জিম্বাবুয়ে, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০০৭

উঠে এসেছেন বনেদি এক পরিবার থেকে। এমন এক পরিবার, যেখানে বাবা ইকবাল খান ছিলেন জনপ্রিয় ফুটবল তারকা, চাচা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আইসিসি ট্রফিজয়ী সাবেক অধিনায়ক, ভাই নাফিস ইকবাল খানও খেলেছেন জাতীয় দলে। একটা লম্বা সময় ধরে নাফিসকেই ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। কিন্তু আসল খান সাহেব যে আসছে, এই পদধ্বনি শোনা গিয়েছিল তখনই। খান, তামিম ইকবাল খান।

চারদিকে যখন অনুপ্রেরণার কমতি নেই, ক্রিকেটার হয়ে ওঠাটাই ছিল ভবিতব্য। ছোট্টবেলায় চাচাকে দেখেছেন আইসিসি ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে, দেখেছেন সহোদর নাফিস ইকবালকে টেস্ট ক্যাপ পরতে। হয়তো সেই ছোট্ট থাকতেই চোখে স্বপ্নের মায়াঞ্জন ছুঁয়ে গেছে, দেশের সেরা ব্যাটসম্যান হতে হবে!

ক্রিকেট ছিল তাঁর সহজাত, বাবাও চাইতেন সেটাই। নিজে এক অসুস্থতায় হারিয়েছিলেন পা, তাতে নিজের স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখা হয়নি তামিমের বাবার। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন নিজের সন্তানের মধ্য দিয়ে। আর তাই তামিমও ছুটেছেন বাবার স্বপ্নপূরণে, ছুটে চলেছেন আজও। হয়েছেন সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক, সর্বোচ্চ শতকের অধিকারী। সময়ের প্রয়োজনে নিজের স্বকীয় খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন, হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর শান্ত-ধ্রুপদি অথচ ধারাবাহিক এক ব্যাটসম্যান।

নিজের সামর্থ্য প্রথমবারের মতো সবার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭১ বলে ১১২ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে। চোখে পড়ে গেলেন নির্বাচকদের, ফলে ২০০৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটা খুব সুবিধা করে উঠতে না পারলেও ২০০৭ সালের শুরু নাগাদ সুযোগ পেয়ে গেলেন জাতীয় দলে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরুটা খুব সুবিধার হলো না, প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন মাত্র ৫ রান করেই। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২ বলে ৩০ রানের ছোট্ট একটা ইনিংস খেললেন বটে, তবে তাতে সামর্থ্যের ঝলকানি থাকলেও আশার ঝিলিক খুব একটা ছিল না। মাত্র ২৭ ম্যাচ খেলার পরই শাহরিয়ার নাফীস বাদ পড়েন দুর্দান্ত এক ক্যারিয়ার সূচনার পরও। তামিম বুঝে যান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বড্ড কঠিন জায়গা।

মাত্র দুই ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তামিম ইকবালকে নিয়েই বিশ্বকাপে যাত্রা করল বাংলাদেশ। আর এখানেই তামিমের নিজেকে চেনানোর শুরু। ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই অভিজ্ঞ জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে সপাটে হাঁকিয়ে জানিয়ে দিলেন তাঁর আগমনধ্বনি, করলেন ৫৩ বলে ৫১ রান। অবশ্য পরবর্তী ফিফটি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হলো আরও ১২ ইনিংস। তামিম বুঝতে পারলেন, উন্নতি করা প্রয়োজন।

কোচ সিডন্সের তত্ত্বাবধানে নিজের ফিটনেস, ব্যাটিং টেকনিক, শট সিলেকশন এবং ট্রেনিং পদ্ধতি নিয়ে দারুণ কাজ করেন তামিম। নিজের ব্যাটিংয়ের ধরনে পরিবর্তনের বড় কৃতিত্ব সিডন্সকেই দিয়ে থাকেন।

কঠোর পরিশ্রম অবশেষে সুফল দিতে শুরু করল। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রথম টেস্ট শতক করলেন ‘হীনশক্তি’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, এর এক মাস পর ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম তিন শতাধিক রান সফলভাবে তাড়া করার পথে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৫৪ রান। পরের বছর জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে করলেন ১৫১ রান, আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তো আরেকটু হলে এক সেশনেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলছিলেন!

এরপর এল বহু আকাঙ্ক্ষিত ইংল্যান্ড সফর। সেখানে বলেকয়ে সেঞ্চুরি হাঁকালেন লর্ডসে, নাম তুললেন অনার্স বোর্ডে। সেঞ্চুরির পর সেই বিখ্যাত সেলিব্রেশন তো ঢুকে গেছে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়ই! সেঞ্চুরির চেয়েও বড় ব্যাপার ছিল ব্যাটিংয়ের ধরন, অ্যান্ডারসন-ব্রেসনান-ফিন-সোয়ানকে নিয়ে সাজানো বোলিং অ্যাটাককে রীতিমতো নাচিয়ে ছেড়েছিলেন। পরের ম্যাচেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ভয়াবহ এক পিচে সতীর্থদের ব্যর্থতার মাঝেও ছোটালেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি, হাঁকালেন আরেকটি দাপুটে শতক। সারা বিশ্ব চিনল বাংলাদেশের তরুণ এক ওপেনারকে, যে লর্ডস-ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বলেকয়ে সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারে! জিতলেন ‘উইজডেন টেস্ট ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ খেতাব।

তবে দিনগুলো এভাবেই কাটল না। ২০১১ বিশ্বকাপে নামল ভয়াবহ ধস, গ্রুপ পর্বে বাজেভাবে হারল দল, নিজেরও ব্যাটে রান নেই। বিশ্বকাপ শেষে সাকিব-তামিম দু’জনকেই অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি ২০১২ এশিয়া কাপের আগে তামিমকে দল থেকে বাদও দিয়ে দেওয়া হয়। মতবিরোধ তুঙ্গে ওঠার কারণে আকরাম খান নির্বাচক প্যানেল থেকে পদত্যাগ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আকরাম আর তামিম দু’জনকেই ফিরিয়ে আনা হয়।

আর এখানেই জন্ম নেয় তামিমের আরেকটি বিখ্যাত উদ্‌যাপন। এশিয়া কাপে সুযোগ পেয়েই তামিম টানা চার ম্যাচে চারটি ফিফটি করেন, আর চতুর্থ ফিফটির পর ১-২-৩-৪ ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দেন নিজের সামর্থ্য। তবে পরে তামিম জানান, ইঙ্গিতটি ছিল তাঁর সতীর্থদের দিকে, অন্য কারও দিকে নয়।

তবে এরপর আবারও কিছুটা যেন মিইয়ে গেল তামিমের পারফরম্যান্স। ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি শতক ছাড়া আর তেমন কোনো ভালো ইনিংস এল না তাঁর ব্যাট থেকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে মোটামুটি একটা সিরিজ কাটানোর পরই পড়ে যান হাঁটুর ইনজুরিতে, সুস্থ হতে না হতেই সওয়ার হতে হয় বিশ্বকাপের বিমানে। বিশ্বকাপেও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ৯৫ রানের ইনিংস ছাড়া তেমন কিছু করতে পারলেন না।

বিশ্বকাপের পরপরই পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে টানা তিন ম্যাচে ১৩২, ১১৬ এবং ৬৪ রানের তিন ইনিংস খেলেন তামিম, টেস্টে করে বসেন ডাবল সেঞ্চুরি।

এরপরই ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করে তাঁর ক্যারিয়ার। দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন আরও পরিণত, আরও ধারাবাহিক। নিজেকে তুলে এনেছেন বিশ্বমানে, বাংলাদেশ দলটাকেও বদলে দিয়েছেন খোলনলচে। বর্তমানে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে উচ্চারিত হয় তাঁর নামটিও। সেই ‘আগ্রাসী’ চঞ্চল তামিম ইদানীং দলের ব্যাটিংয়ে হাল ধরার দায়িত্ব পালন করছেন, হয়েছেন ধীর-স্থিতধী।

[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত]