Thank you for trying Sticky AMP!!

তাহলে আফগানিস্তানই এগিয়ে?

দুই অধিনায়ক, এক ট্রফি—শেষ পর্যন্ত কার হাতে উঠবে? ছবি: প্রথম আলো
দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে কাল থেকে। কাল রাতে প্রস্তুতি ম্যাচে জেতার পর থেকে ফুরফুরে ভাবটা কিন্তু আফগানদের শারীরিক ভাষায় ধরা পড়ছে। আজ সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আফগানদের কোচ ফিল সিমন্সকে যতটা চনমনে ও দৃঢ় লাগল, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ কোর্টনি ওয়ালশকে ততটা অবশ্যই নয়। তবে কি এই সিরিজটা এগিয়ে থেকে শুরু করছে আফগানিস্তান?


সাকিব আল হাসান আবহাওয়া নিয়ে ভাবছেন না। কারণ, দেরাদুনের গরম কিংবা হুটহাট বৃষ্টির অনেক কিছু গুবলেট করে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো দেশেও তাঁদের সহ্য করতে হয়। পিচ নিয়েও তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নন। কেননা, এই রকম কিছুটা ‘স্লো অ্যান্ড লো’ উইকেট তাঁরা প্রায়ই পেয়ে থাকেন। তাঁর মনে ঘুরঘুর করছে কয়েকটা ‘স্পেসিফিক এরিয়া’, যেগুলোর দিকে তাঁদের নজর দিতে হবে ও অবশ্যই উন্নতি করতে হবে।

এইটুকু বলে সাকিব চুপ করামাত্রই তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো ‘স্পেসিফিক এরিয়া’র চরিত্র নিয়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি দরকার, জানতে চাওয়ামাত্র সাকিব যা বললেন, তাতে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের তিনটি ক্ষেত্রই এসে গেল। এই তিন ক্ষেত্র বাদে ক্রিকেটে বাকি আর কী কী থাকে জানা নেই, তবে আগের রাতের গা ঘামানো ম্যাচ হেরে ফেরা সাকিব এরপর থেকেই নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নিলেন। পাশে বসা আফগান অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাইয়ের সামনে কী করেই বা নিজেদের দুর্বলতা তুলে ধরা যায়?

দুই অধিনায়কের পাশে ছিলেন দুই দলের দুই কোচ। দুজনই ক্যারিবীয়। ফিল সিমন্সকে যতটা চনমনে ও দৃঢ় লাগল, কোর্টনি ওয়ালশকে ততটা অবশ্যই নয়। সিমন্স শুরুতেই বলে দিলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। আমরা কালকের প্রথম ম্যাচ খেলতে মুখিয়ে রয়েছি।’ ওয়ালশ সেখানে ‘আশাবাদী’ বলা ছাড়া স্পষ্টভাবে আর কিছু জানাতে পারলেন না।
দেরাদুনের এই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কাল রোববারই প্রথম ম্যাচ খেলা হবে। শুক্রবার যা হলো, সেই প্রস্তুতি ম্যাচের পিচের পাশাপাশি তৈরি আরও চার-চারটি উইকেট। সেগুলোর কোনটি রোববার বেছে নেওয়া হবে জানা নেই কারও। ভাষাটা ইংরেজি হলে লেখা যেত ‘ভার্জিন পিচ’! বাংলা ভাষা সেই রকম সাহসী কোনোকালেই হতে পারেনি। শালীনতা বজায় রেখে তাই ‘আনকোরা’ শব্দটি বেছে নেওয়া ঝুঁকিহীন। কিন্তু পিচ যেখানে আনকোরা, বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি সেখানে অনেকটাই চলে আসে। ক্রিকেট পিচের খেয়ালিপনার হদিশ করা এমনিই কঠিন। তার ওপর সেই পিচ যদি হয় সদ্য তৈরি। ভাগ্যের ওপর নির্ভর করা ছাড়া তখন উপায় থাকে না।

কিন্তু তা সত্ত্বেও সাকিব বলেন, শুক্রবারের উইকেট তেমন কিছু একটা খারাপ ছিল না। একেবারে নতুন, তাই ঠিকঠাক তৈরি হতে একটু সময় লাগবে। একটু স্লো এবং লো। তবে তা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। মাঠ চমৎকার। একই প্রশ্নের উত্তরে আসগর বললেন, এই মাঠে বেশ কদিন ধরেই তাঁরা গা ঘামাচ্ছেন। তাঁদের ‘হোম অ্যাওয়ে হোম’ ভারত। ঘরের মাঠ হলেও এই ‘হোম’ আফগানিস্তানকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে না। বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রশ্নই আসছে না। তবে আফগানরা খুশি। কারণ, এই শহর ও এই স্টেডিয়াম চত্বরের অদূরের পাহাড় দেখলে তাঁদের দেশের কথা মনে পড়ে যায়। মনে হয় আফগানিস্তানের মাটিতেই তাঁরা রয়েছেন। মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়।

শুক্রবার রাতে প্রস্তুতি ম্যাচে জেতার পর থেকে সেই ফুরফুরে ভাবটা কিন্তু আসগরদের শারীরিক ভাষায় ধরা পড়ছে। সাকিবের প্রশংসা তাঁদের আরও উৎফুল্ল করতে বাধ্য। কোনো ভনিতা না করেই সাকিব বললেন, গত কবছর ধরেই আফগানিস্তান খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে। অনেক দূর তারা এগিয়ে গেছে। কয়েকজন আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়াড় তারা উপহার দিতে পেরেছে। রশিদের নাম বিশেষ করে বললেন সাকিব ও আসগর দুজনই। বোঝাই যাচ্ছে, আইপিএলের সাফল্য তাঁকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। সাকিব বললেন, রশিদের র‍্যাঙ্কিংই বুঝিয়ে দিচ্ছে তিনি কোন মাপের বোলার। আসগর তো বলেই দিলেন, স্পিনিং উইকেট হলে তাঁরা বর্তে যাবেন। তবে তাঁরা বাংলাদেশের বিশেষ কাউকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের কাছে বাংলাদেশের ১১ জনই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে নিয়েই তাঁরা ক্রিকেটীয় ছক কষছেন।

আইপিএল খেলা আফগান ক্রিকেটারদের কাছে একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচনের মতো। আসগরের কথায়, ‘এই টুর্নামেন্ট আমাদের খেলোয়াড়দের কাছে এক নতুন পৃথিবী। অভিজ্ঞতা কত বেড়ে যায়। বিশ্বসেরাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা, তাঁদের কাছ থেকে দেখা, তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা স্বপ্নের মতো। এই অভিজ্ঞতা আফগান ক্রিকেটকেই সমৃদ্ধ করবে।’

নিদহাস ট্রফিতে যে ধাঁচের ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলেছে, দেরাদুনে সেই ধাঁচ কতটা কাছাকাছি আসবে? প্রশ্নটা শোনামাত্র সাকিব বলেন, ‘ধাঁচ একটাই। জেতা। আমরা ভালো খেলতে চাই ও জিততে চাই। সেই প্রস্তুতিই আমরা নিচ্ছি।’ প্রায় একনিঃশ্বাসে সাকিব এরপরেই আসল সত্যটি জানিয়ে দিলেন। ‘নিদহাস ট্রফিতে যেমন খেলেছি, তেমন খেললে জিতব। তবে এক-দুজন ভালো খেললে কিছু হবে না। ভালো খেলতে হবে গোটা দলকেই। ১১ জনকেই। এবং তিনটি বিভাগেই। ওরা (আফগানিস্তান) ভালো দল।’
সাকিবের চিন্তায় কয়েকটা নির্দিষ্ট বিষয় অবশ্যই ছিল। কিন্তু ক্রিকেট যুদ্ধের প্রাক্‌-মুহূর্তে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ্যে কেই-বা কবে চিহ্নিত করেছে?

আরও পড়ুন... 
প্র্যাকটিস ম্যাচেই দেখিয়ে দিল আফগানরা