Thank you for trying Sticky AMP!!

হতাশামাখা এক সিরিজ শেষ হলো বাংলাদেশের।

ধবলধোলাই হওয়ার পথে যত রেকর্ড বাংলাদেশের

নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয়েছে বাংলাদেশের। তিন ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার হতাশার মাঝেও একটু স্বস্তি পাচ্ছে দল—যাক, সিরিজ তো শেষ হলো! তিন ম্যাচে ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং মিলিয়ে যে অদক্ষতার নজির দেখিয়েছে দল, তাতে দলের শক্তিমত্তা নিয়ে ভালোভাবেই প্রশ্ন উঠে গেছে। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল দাবি করেছেন, যেমন খেলেছেন, তার চেয়ে অনেক ভালো দল তারা। কিন্তু এভাবে খেলা চালিয়ে গেলে, দল হিসেবে কোথাও যেতে পারবে না বাংলাদেশ।

সিরিজ শেষের পরিসংখ্যানও সেটাই বলছে। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৪ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ৩১৯ রানের লক্ষ্যে নেমে ভয়ংকর এক ব্যাটিং বিপর্যয়ের স্বাদ পাওয়া দলটির সুবাদে অনেক পুরোনো সব রেকর্ড ঘেঁটে দেখারও সুযোগ মিলেছে। ধবলধোলাই হওয়ার পথে বেশ কিছু রেকর্ড নতুন করে লিখেছে বাংলাদেশ। আবার পুরোনো কিছু রেকর্ডের সম্ভাবনা জাগিয়ে সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে লজ্জার ইতিহাসগুলো।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই হারের কীর্তি। সেটা আজও বদলায়নি। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডে দেশটির বিপক্ষে সব ধরনের ক্রিকেটে ৩০টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপের একটা বাদ দিলে বাকি ২৯ ম্যাচ ১২টি সিরিজ মিলিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। এই ১২টি সিরিজের ২৯ ম্যাচেই ফল একদিকে ছিল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এবারও তাই হলো। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা ১২টি সিরিজ হার ও ২৯ ম্যাচ হারার রেকর্ড গড়ে এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজের অপেক্ষায় থাকছে বাংলাদেশ। ২৮ মার্চ শুরু হওয়া সে সিরিজের আগেই দেখে নেওয়া যাক আজ কী কী রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।

অধিনায়কের মতো ব্যর্থ হয়েছে পুরো দল।

আজ বাংলাদেশ এক শর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল। দলকে এই অবস্থা থেকে টেনে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথমে তাসকিনকে নিয়ে ২০ রান যোগ করে ১০০ পার করিয়েছেন। আর ৭৩ বলে ৭৬ রান তোলার পথে নবম উইকেট জুটিতে রুবেল হোসেনকে নিয়ে যোগ করেছেন ৫২ রান। ৫৮ বলের এই জুটিতে ২৮ বলে ৪ রানের অবদান রুবেলের। গুরুত্বপূর্ণ এই জুটিতে একটি রেকর্ডের জন্ম হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নবম উইকেট জুটিতে এটাই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

এর আগের রেকর্ডটি ছিল নাইম ইসলাম ও শাহাদাত হোসেনের। ২০০৮ সালে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ২৫০ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৪৪ রানে অষ্টম উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। নাইম ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন ইনিংসের বাকি ৪ ওভার কাটিয়ে দিয়ে দলকে অলআউট হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। সেই সঙ্গে ২৬ রানও এনে দিয়েছিলেন। সে রেকর্ডটা আজ দখলে নিয়ে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল। সেই ম্যাচের মাত্র দুজন ক্রিকেটার আজকের ম্যাচে ছিলেন। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম সেদিন তবু ৫০ রান এনে দিয়েছিলেন। আজ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার মিলিয়ে দলের স্কোরে ২২ রান অবদান রেখেছেন।

মাহমুদউল্লাহকে আরেকটি কারণে ধন্যবাদ দিতে পারে বাংলাদেশ। তাঁর কারণেই যে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সবচেয়ে বড় হারের লজ্জা এড়িয়েছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ও রুবেলের জুটির সুবাদে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে রানের ব্যবধান ১৬৪-তে নেমে এসেছে। আর এতেই দেশটির বিপক্ষে সবচেয়ে বড় পরাজয়ের লজ্জা এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কায় হওয়া সে টুর্নামেন্টে বোলাররা নিউজিল্যান্ডকে ২৪৪ রানে আটকে দিয়েছিলেন। সে তৃপ্তি উবে গিয়েছিল ব্যাটিং নামতে না নামতেই। শেন বন্ড ও জ্যাকব ওরাম মিলে ১৯ রানে ৫ উইকেট ফেলে দিয়েছিলেন। বোলাররাই সে–যাত্রা বাংলাদেশকে পঞ্চাশের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। সেদিন ৭৭ রানে অলআউট হয়ে ১৬৭ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। আজ তিন রানের জন্য সে লজ্জার হাত থেকে বেঁচেছে বাংলাদেশ।

ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ওয়ানডেতে ৮০ রানের বেশি দিলেন মোস্তাফিজ।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে সবচেয়ে বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনীর পডিয়ামেও এবারের সিরিজটি জায়গা করে নিয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে ১৩১ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচে ১৫৪ রানে গুটিয়ে গেছে। মাঝে শুধু ক্রাইস্টচার্চে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ এ সিরিজে উইকেটপ্রতি মাত্র ২১.৩৮ রান তুলেছেন তামিম-মুশফিকেরা। এর চেয়ে বাজে গড় আর মাত্র দুটি সিরিজে ছিল। ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ক্রমোন্নতির এক ধারা দেখেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৮৬ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ পরের ম্যাচে ১৪৬ রান তুলেছিল। তৃতীয় ম্যাচে আর অলআউট হয়নি দল। ৭ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ১৬৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। সে সিরিজে বাংলাদেশ উইকেটপ্রতি ১৪.৭৭ রান তুলেছিল। এ ছাড়া ২০০৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফর করতে গিয়ে তিন ওয়ানডেতে উইকেটপ্রতি ১৮.২৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ।

ব্যাটসম্যানরা বাজে পারফরম্যান্সের দিক থেকে শীর্ষ তিনে ঢুকে পড়েছেন, বোলাররাও বাদ যাবেন কেন? তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মাত্র ১৩ উইকেট নিতে পেরেছেন মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের এর চেয়ে কম উইকেট নেওয়ার ঘটনা মাত্র দুবার। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ড সফর করতে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের মতো বোলাররাও চরম ব্যর্থতা দেখিয়েছিলেন। তিন ম্যাচে মাত্র ৯ উইকেট পেয়েছিলেন বোলাররা। গত নিউজিল্যান্ড সফরেই কেবল সে ব্যর্থতার কাছাকাছি কিছু দেখিয়েছিল দল। ২০১৯ সালে তিন ম্যাচে মাত্র ১০ উইকেট পেয়েছিল বাংলাদেশ। সে সিরিজে বোলারদের এক উইকেট পেতে গড়ে ৭৯.২০ রান খরচ করতে হয়েছিল। এবার সে তুলনায় একটু ভালোই করেছেন তাসকিনরা। এবার ১৩ উইকেটের প্রতিটি ৫৫.৭৬ রান খরচায় এসেছে। এর মাঝে আছে ২০০৭ সালের সেই সিরিজ। সেবার উইকেটপ্রতি ৭০.৩৩ রান খরচ করেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা।