Thank you for trying Sticky AMP!!

কোহলিদের নিয়ে গত বছর আইপিএল সফলভাবে আয়োজন করেছে ভারত।

পিএসএল নয়, আইপিএলকেই ‘মডেল’ মানবে আইসিসি

গত বছর একবার আইপিএল হয়েছে। তবে সেটা ভারতে নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে। যা-ই হোক, সেখানে টুর্নামেন্টটা শেষ হয়েছে এবং সেটি হতে পেরেছে টুর্নামেন্টজুড়ে জৈব সুরক্ষা বলয়ের নিয়মকানুন ঠিকভাবে পালন করায়। করোনাকালে বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে দ্বিপক্ষীয় সিরিজও হয়েছে, যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জৈব সুরক্ষা বলয় ঠিকভাবে পালন করা হয়েছে। মনে হচ্ছিল, নতুন স্বাভাবিকে মানিয়ে নিচ্ছে ক্রিকেট।

কিন্তু পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) এবার স্থগিত হওয়ার পর থেকে আবার নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে। এর আগে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলও জৈব সুরক্ষা বলয় সুরক্ষিত না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে এসেছে, কিন্তু সেটি ছিল দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। অনেক দেশের খেলোয়াড় কোনো এক জায়গায় টুর্নামেন্টে এসেছে, এরপর জৈব সুরক্ষা বলয় ঠিক না থাকায় টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়ে গেছে, এমনটা পিএসএলেই প্রথম হলো।

সে কারণেই নড়েচড়ে বসছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। এ বছর ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার কথা, যেখানে ১৬ দেশের খেলোয়াড়েরা এক হবেন। সেখানে জৈব সুরক্ষা বলয় কীভাবে মানতে হবে, সে ব্যাপারে নতুন ভাবনা শুরু করেছে আইসিসি। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর দিকে চোখ রাখছে তারা।

আর এ ক্ষেত্রে পিএসএলের ব্যর্থতা আইসিসির কাছে শিক্ষা বলে জানাচ্ছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী মানু সাহনি। আর আইসিসি এখন তাকিয়ে আছে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠেয় এবারের আইপিএলে। সেখানে কীভাবে জৈব সুরক্ষা বলয় মানা হয়, সেটিকেই হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘মডেল’ বানাবে আইসিসি।  

আগামী অক্টোবরে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কথা, ফাইনাল ১৪ নভেম্বর। সে ক্ষেত্রে কী কী প্রটোকল থাকবে, সে ভাবনায় পিএসএলকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী সাহনি। বলা বাহুল্য, পিএসএলের অভিজ্ঞতাটা শেখাবে কী কী করা যাবে না, সেটি!

পিএসএল স্থগিত হয়ে গেছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য।

চার দিনের মধ্যে একাধিক দলে ছয়জন ক্রিকেটারসহ সাতজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত পরশু পিএসএলের এবারের মৌসুম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেয় পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড। গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া পিএসএলে ম্যাচ হতে পেরেছিল মাত্র ১৪টি।

যতটুকু হয়েছে, তার মধ্যেই জৈব সুরক্ষা বলয় ভাঙার অভিযোগ শোনা গেছে। পিসিবির সঙ্গে সভায় গতকাল পিএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা অভিযোগ করেন, পিসিবি টুর্নামেন্ট গান বানাতে, ভিডিও তৈরিতে যা খরচ করেছে, সে তুলনায় জৈব সুরক্ষা বলয় মানা, একই হোটেলে সব দলকে রাখার ব্যাপারে অত গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি খেলোয়াড়দের হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

এর মধ্যে গত পরশু ‘গ্লোবাল স্পোর্টস সামিট স্কোরকার্ড ২০২১’ নামের এক ভার্চ্যুয়াল সভায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন সাহনি। পিএসএলের ব্যর্থতা থেকে আইসিসি কী শিখেছে, এ প্রশ্নে সাহনির উত্তর, ‘সবার এটা বুঝতে পারা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ঝুঁকি কমানোর ব্যাপারটা সরলরেখায় চলে না। ধরুন, একটা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, দুই দল খেলছে সেখানে। এর বিপরীতে একটা বিশ্বকাপ, যেখানে ১৬টি দেশ ১৬টি ভিন্ন দল থেকে একটা দেশে আসবে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক অনেক বেশি, অনেক ভিন্ন। এই জটিল দিকগুলো নিয়েই আমরা সবাই এখন ভাবছি, কী করতে হবে, সে ব্যাপারে প্রতিদিনই আগের দিনের চেয়ে আরেকটু বেশি শিখছি।’

এবারের আইপিএলের ভেন্যু ও তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। টুর্নামেন্ট এবার ভারতেই হতে পারে। এপ্রিলের মাঝামাঝিতে টুর্নামেন্টটা শুরু হতে পারে বলে গুঞ্জন।

এ ক্ষেত্রে ভারতের জৈব সুরক্ষা বলয় মানার প্রশংসাও করেছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে কী হচ্ছে, সেটা থেকে শেখা জরুরি। ভারত এই মুহূর্তে যা করছে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে), সেটা থেকে শেখা...বিসিসিআই (ভারতের ক্রিকেট বোর্ড) দারুণ কাজ করেছে! এরপর আইপিএল আছে। এ বছরের শেষ দিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রোটোকল কী হবে, সে ব্যাপারে আইপিএল থেকে আমরা শিখতে পারব।’

এবারের আইপিএলের ভেন্যু ও তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। টুর্নামেন্ট এবার ভারতেই হবে, সে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিসিসিআই। এপ্রিলের মাঝামাঝিতে টুর্নামেন্টটা শুরু হতে পারে বলে গুঞ্জন ভারতের সংবাদমাধ্যমে।

সৌরভ গাঙ্গুলীর পাশে আইসিসির প্রধান নির্বাহী মানু সাহনি।

তবে এই মুহূর্তে করোনা–আক্রান্তের হারে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়। অক্টোবরে কী অবস্থা থাকে, সে শঙ্কা মাথায় রেখে আইসিসি বিশ্বকাপের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে ঠিক করে রেখেছে। অবশ্য ভারত এরই মধ্যে একাধিক করোনার টিকার অনুমোদন দেওয়ায় বিশ্বকাপ নিয়ে আশা আরও বেড়েছে। আইপিএলের সফল আয়োজন বিশ্বকাপের আয়োজনের পরিকল্পনার বড় অংশজুড়েই আছে।

তবে বিশ্বকাপে সুরক্ষা বলয় মানার জন্য সব দলের সব খেলোয়াড়সহ সব পক্ষকেই একটা ‘দল’ হয়ে খেলতে হবে বলে জানালেন সাহনি, ‘ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে ১৬টা ভিন্ন দলকে আনা, তাদের ভিন্ন ভিন্ন কোয়ারেন্টিন প্রোটোকল, তাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঝুঁকি...এদের সবাইকে একটা দেশে নিয়ে আসা, তারপর নিশ্চিত করা যে টুর্নামেন্টটা ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে, খেলোয়াড়েরা নিরাপদে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে...এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জে সবাইকে একত্র হতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে যে সবকিছু এখানে পরিকল্পনামতো না হওয়ারও বড় ঝুঁকি আছে। এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে সব কাজ ঠিকঠাকভাবে করার জন্য সবাই নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।’