Thank you for trying Sticky AMP!!

অনেক অপেক্ষার পর টেস্ট ক্যাপ পেলেন ইয়াসির

বডি শেমিং, সড়ক দুর্ঘটনা, অপেক্ষার পর এল টেস্ট ক্যাপ

‘ইয়াসির বল এত জোরে মারে যে ব্যাটিংয়ের সময় ৩০ গজে ফিল্ডিং করা কঠিন।’
জাতীয় দলের এক ক্রিকেটার পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত ইয়াসির আলীর শারীরিক শক্তি ব্যাখ্যা করছিলেন এভাবেই।

‘গায়ে অনেক জোর’— ইয়াসিরের ক্রিকেটীয় দক্ষতা ব্যাখ্যায় এই কথাটাই সব সময়ই ব্যবহৃত হয়। শারীরিকভাবে একটু স্থূল হওয়ায় ‘আনফিট’ বিশেষণটাও প্রায়ই শুনতে হয় তাঁকে। আর স্থূলকায় মানুষ চিরকালই যে কথাটা শুনে আসছে, সেই ‘মোটা’ বিশেষণ তো তাঁর জীবনেরই সঙ্গী।

বডি শেমিং বা শরীর নিয়ে অসম্মানজনক মন্তব্যের যে সামাজিক ব্যাধি আছে, ক্রিকেটও বাইরে নয়। চট্টগ্রামের ছেলে ইয়াসির এই ব্যাধির সরাসরি শিকার।

ইয়াসিরের শারীরিক গঠন নিয়ে যতটা চর্চা হয়, তাঁর ক্রিকেটীয় সামর্থ্যের আলোচনাটা সব সময়ই পেছনের সারিতে থাকে। ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন ইয়াসির। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইয়াসিরের যে ৫৭ ম্যাচে ৯ সেঞ্চুরি আর ২৪ ফিফটি আর ৫০.৩৭ গড়, সেটিও প্রায়ই ভুলে যান অনেকে।

তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় চার হাজার (৩৯৮০) রান, সেটিও ক্রিকেট আড্ডার মূল আলোচনা হয় না। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের আশপাশে থাকা ইয়াসিরকে ওয়ার্ম আপে দৌড়াতে দেখলেই কেউ না কেউ বলে বসেন, ‘এই ছেলে খেলবে কি করে, সে তো ফিট না।’

ইয়াসির আলী

অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে ঘুরেফিরে এই প্রশ্নের উত্তরটা ইয়াসির দিয়ে আসছেন রান করেই। রান করার পথে একের পর এক বাধা এসেছে। ছোটখাটো বাধা নয়, ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা। ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। অনুশীলনের জন্য মাঠে যাচ্ছিলেন রিকশায় করে।

এমন সময় একটি সিএনজি এসে তাঁর রিকশাকে দেয় ধাক্কা। গুরুতর আহত হয়েছিলেন ইয়াসির। চার মাস কেটে যায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই। ওই সময়টায় ক্যারিয়ারের অপমৃত্যু ঘটার দুঃস্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিলেন এই তরুণ।

নিজের জীবনের সেই কালো অধ্যায়ের গল্প নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসির বলেছিলেন, ‘ওই দুর্ঘটনাটা আমার জীবনের একটা কালো অধ্যায় বলতে পারেন। কারণ চার মাস অনেক বড় একটা বিরতি হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি ভেঙে পড়ি, ভাবি কী হবে আসলে। কারণ, ‘এ’ দলের দুটি সফর ছিল। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশে এসেছিল, আয়ারল্যান্ড সফর ছিল। আমি মিস করেছি ওই দুটি সফর। ওই সময় যেহেতু ভালো খেলছিলাম, তাই আশায় ছিলাম যে যাব।’

দুঃসময় থেকে বিপুল উদ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ইয়াসির

সেই দুঃসময় থেকেও বিপুল উদ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পরিবার তাঁকে খুব সাহায্য করেছিল। সেই শক্তি নিয়ে মাঠে ফিরেছেন। জাতীয় লিগ, বিসিএল খেলেছেন। এরপর আসে ২০১৯-২০ মৌসুমের বিপিএল।

ইয়াসিরের জাতীয় দলের সিঁড়িতে পা দেওয়ার সবচেয়ে বড় ধাপ ছিল সেটি। যেখানে তিনি চট্টগ্রাম ভাইকিংসের জার্সিতে ১১ ইনিংসে ১২৪.২৯ স্ট্রাইক রেটে করেন ৩৭০ রান। এরপর প্রিমিয়ার লিগেও ভালো করায় ২০১৯ আয়ারল্যান্ড সফরের দলে জায়গা পেয়ে যান তিনি।

সেই থেকে ইয়াসিরের অপেক্ষা শুরু। যে অপেক্ষাটা দীর্ঘ হয়েছে আড়াই বছর। ২০১৯ সালের সেই আয়ারল্যান্ড সফরের পর ইয়াসির জাতীয় দলে বিভিন্ন সংস্করণে ডাক পেয়েছেন আরও ছয়বার। একবারও অভিষেক হয়নি।

২০২০ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট দিয়ে ইয়াসিরকে প্রথমবারের মতো টেস্টে বিবেচনা করা হয়। চলতি বছর জানুয়ারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও ইয়াসির ছিলেন টেস্ট দলের অংশ। শ্রীলঙ্কা সফর ও জিম্বাবুয়ে সফরের টেস্ট দলেও ইয়াসির ছিলেন।

দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ময়দানে অভিষিক্ত হলেন ইয়াসির

এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পেয়ে যান। কিন্তু ফলাফল একই, সুযোগ মেলেনি এক ম্যাচেও। যথারীতি দলে আছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টের দলে। অবশেষে নিজের ঘরের মাঠেই প্রথম টেস্ট ক্যাপ পরলেন ইয়াসির। চোটের কারণে সাকিব আল হাসান নেই, মাহমুদউল্লাহও টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন— এতেই খুলে যায় ইয়াসিরের কপাল। এই পর্যায়ে আসতে যাকে বডি শেমিং, দুর্ঘটনা ও দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে, সেই ইয়াসির এবার একটু ভাগ্যের সাহায্য চাইতেই পারেন।

ভাগ্যের সহায়তাটা তাঁর প্রাপ্যই!