Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের কিছুই না হওয়ার দিন

>
ব্যাট হাতে সেই সাকিবই যা একটু খেললেন ৫৪ রানের ইনিংসে। মাশরাফির বিশ্রামের কারণে দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন সাকিব। ছবি: রাজীব হাসান

প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড উলভসের দেওয়া ৩০৮ রানের লক্ষে খেলতে নেমে ৮৮ রানে হারল বাংলাদেশ।

‘হারলে প্র্যাকটিস ম্যাচই হাইরে যাওয়া ভালো। কুফা কেটে যায়।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় মজার ছলে বলে গেলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অন্যরা হাসলেন। কিন্তু অধিনায়কের মুখে হাসি নেই। পরাজয় যে ম্যাচেই হোক, দুশ্চিন্তার। মঙ্গলবার ত্রিদেশীয় সিরিজে নামার আগে ডাবলিনে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে ৮৮ রানে হেরে সেই দুশ্চিন্তা বাড়াল বাংলাদেশ।


ব্যাটে-বলে আজ ছিল কিছু না হওয়ার দিন। প্রথমে বোলাররা রানের চাকা থামাতে পারেননি। ৮ উইকেটে ৩০৭ রান তুলেছে আয়ারল্যান্ড ‘এ’। জবাবে ৪৩ ওভার পুরো শেষ করার আগেই বাংলাদেশ ২১৯ রানে অলআউট। বোলিংয়ে চোট সেরে ফেরা তাসকিন আহমেদের ৩ উইকেটের পাশাপাশি সাকিবের কৃপণ বোলিং ছিল কিছুটা স্বস্তির। ব্যাট হাতে সেই সাকিবই যা একটু খেললেন ৫৪ রানের ইনিংসে। মাশরাফির বিশ্রামের কারণে দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন সাকিব।

মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ করেছেন অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে। মিডল-লোয়ার মিডল অর্ডারে সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির আর মিরাজ থাকার পরও ৫ উইকেটে ১৬৫ থেকে বাংলাদেশ ৬৩ রানে হারিয়েছে শেষ ৫ উইকেট।

সতর্ক ভঙ্গিতে হলেও শুরুটা বাংলাদেশ বেশ ভালোই করেছিল। তামিম-লিটনের উদ্বোধনী জুটিতে ৫৬ রান। কিন্তু সেখান থেকে পথ হারানো শুরু। মাঝখানের বিপর্যয়ের পরও তবু ৫ উইকেটে ১৫৬ রানের স্কোর ধরে রেখেছিল ছুটির দিনে হাজির হওয়া শখানেক প্রবাসী বাঙালি দর্শককে। কিন্তু এরপর একে একে উইকেট পতনের মিছিল প্রায় শূন্য করে দিয়েছে শহর থেকে অনেক দূরের হিলস ক্রিকেট ক্লাবের এই মাঠ।

মাঝখানের বিপর্যয়ের পরও তবু ৫ উইকেটে ১৫৬ রানের স্কোর ধরে রেখেছিল ছুটির দিনে হাজির হওয়া শখানেক প্রবাসী বাঙালি দর্শককে। ছবি: লেখক

দুই দফায় স্কোর অপরিবর্তিত থেকে জোড়া উইকেট হারিয়ে ফেলাই বাংলাদেশের সর্বনাশ করেছে। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে তামিম ইকবালের মাড়িয়ে যাওয়া ঘাসকে আবার সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ না দিয়েই ফিরেছেন লিটন দাস। একইভাবে সাকিবকে অনুসরণ করেছেন সাব্বির।

দুই ওপেনারসহ ৪১ রানের মধ্যে মুশফিক-মিঠুন ফিরে এলে স্কোর এক শতে যাওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৪ উইকেট নেই। ধাক্কা সামলে নেওয়ার চেষ্টা ছিল দলের সবচেয়ে দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ৯৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিতে। কিন্তু ফিফটির পরপরই সাকিবও ফিরে গেলে বাংলাদেশ আর কিছু করতে পারেনি।
১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ১ উইকেট নেওয়া সাকিবের বোলিংয়েই বোঝা গিয়েছিল, পেসার নয়, ঠিকমতো করতে পারলে হন্তারক হয়ে উঠবেন কোনো স্পিনারই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্পিনার সিমি সিং ৫১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তা সত্যি প্রমাণ করেছেন। তার কারণেই মিডল-লোয়ার অর্ডারে সেই ধস।

দিনটা আসলে সিমিরই ছিল। ব্যাট হাতেও ৯১ রানের ইনিংস খেলেছেন। তাঁর কারণেই লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেও আড়ালে চলে যেতে হলো জেমস ম্যাককলামকে। সিমি-ম্যাককলামের তৃতীয় উইকেট জুটির ১২৫ রানই আসলে বাংলাদেশকে প্রথম ধাক্কা দিয়েছিল।


সেই জুটির সৌজন্যে ৪ উইকেটে ২৫৫ রান তোলার পরও সেই অর্থে আয়ারল্যান্ডের ইনিংসটা অনুমিত রেখায় যায়নি। রান তোলার তাড়ায় শেষ দিকে ব্যাটসম্যানরা ভুল শট খেলেছেন। বাংলাদেশি বোলাররাও ডেথ ওভারে যে চেষ্টাটা করেছেন, তা আরেকটু আগে থেকে করলে রানটাও হয়তো এত বেশি হয় না। বাংলাদেশ একটু গা বাঁচিয়ে খেলেছে। বিশ্বকাপের আগে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত চোট বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও ভয় পাইয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে ছিল অনভ্যস্ত কঠিন কন্ডিশন।


তামিম ব্যাখ্যা করছিলেন, ৮-১০ ডিগ্রি তাপমাত্রার কারণে শরীরের পেশিতে একধরনের জড়তা কাজ করছে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আউটের ধরনের তা স্পষ্ট। বাংলাদেশের ৮ ব্যাটসম্যানের ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হওয়া সেই জড়তারই ফল হয়তো।

মাশরাফি-মোস্তাফিজ না থাকার ম্যাচে ৬ বোলার ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। প্রথম আঘাত হানা রুবেল ৯ ওভারে ৬৩ রান দিয়েছেন। আলোচনার জন্ম দিয়ে এই সিরিজে ফিরে আসা তাসকিনকে বাংলাদেশ পুরো সুযোগ দিয়েছে। তাসকিন ৩ উইকেট নিয়ে আত্মবিশ্বাস আরও একটু ফিরে পাবেন নিশ্চয়ই। তবে ১০ ওভারে দিয়েছেন ৬৬ রান। সঙ্গে ৬টি ওয়াইড বল বোঝাচ্ছে, তাসকিনের আরও একটু সময় সত্যিই দরকার।

তাসকিনের মতোই এই দলে যোগ হওয়া অতিরিক্ত চারের একজন ফরহাদ রেজা ১০ ওভারে দিয়েছেন ৬৬। ৪৪ রান দেওয়া মিরাজকে ৪ ওভার বল করানো হয়নি। সাব্বিরকে দিয়ে ৫ ওভার করানো বিশেষ পরিকল্পনার অংশ কি না, তার উত্তর সামনেই বোঝা যাবে। ৬ বোলারের মধ্যে কেবল সাব্বিরই উইকেটশূন্য, ওভারে ৭ রান করে দিয়ে পরিকল্পনাটিকে বিশেষ উৎসাহও জোগাতে পারেননি।


বাংলাদেশ এর মধ্যেই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। ত্রিদেশীয় সিরিজে যেটি দলের অন্যতম লক্ষ্যও। তবে আয়ারল্যান্ডের ‘ছোট দল’–এর কাছে এমন বড় হারের পর কাল যেকোনো মূল্য ম্যাচটা জিততে চাইবে দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড উলভস:
৫০ ওভারে ৩০৭/৮ (ম্যাককলাম ১০২, সিমি সিং ৯১; রুবেল ৯-০-৬৩-২, তাসকিন ১০-০-৬৬-৩, রেজা ১০-০-৬৬-১, সাকিব ১০-১-৩০-১, মিরাজ ৬-০-৪৪-১, সাব্বির ৫-০-৩৫-০)

বাংলাদেশ
৪২.৪ ওভারে অলআউট ২১৯ (তামিম ২১, লিটন ২৬, সাকিব ৫৪, মুশফিক ১১, মিঠুন ১৩, মাহমুদউল্লাহ ৩৭, সাব্বির ০, মিরাজ ৬, ফরহাদ ১৫, তাসকিন ১৪, রুবেল ২; সিমি সিং ৪/৫১, কেন ২/৩৮, চেজ ১/২৯, ইয়াং ১/৩০, গ্যাটকাটে ১/৫৭)

ফল: আয়ারল্যান্ড উলভস ৮৮ রানে জয়ী