Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশ দলে তারুণ্য যখন 'বোঝা'

লিটন এশিয়া কাপে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। ছবি: এএফপি
>মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহ—বাংলাদেশের ক্রিকেটে এঁরাই ‘ফ্যাবুলাস ফাইভ’ নামে পরিচিত। দলের সব সাফল্যের মূলেই আছে এই পাঁচজনের কারও না কারও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। কিন্তু এই পাঁচজনের বাইরে তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম।

‘ফ্যাব ফাইভ’-এর একজন প্রথম ম্যাচেই কাটা পড়েছেন। বাকিদের মধ্যে শুধু মুশফিক আছেন চেনা ছন্দে। সেটিও চোটের সঙ্গে লড়াই করে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা একটু পড়তির দিকে মানে মহাবিপৎসংকেত! অন্তত বাংলাদেশ দলের জন্য এটিই বাস্তবতা।

‘তরুণ’ শব্দে বেশ আপত্তি আছে মাশরাফি বিন মুর্তজার। এশিয়া কাপে যাত্রা শুরুর আগেই কথাটা বলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন-চার বছর খেলে ফেললে সে আবার তরুণ হয় কীভাবে! তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ—এই পাঁচ সিনিয়রের বাইরে বাকিরা আসলে ‘ব্যাকআপ’ খেলোয়াড়। কারণ, কেউ দলে থিতু হতে পারেননি। তাঁদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা বরাবরই ওঠা-নামা করে। এশিয়া কাপে এই দুর্নাম ঘোচানোর সুযোগ ছিল তাঁদের। কিন্তু দলের তথাকথিত ‘ব্যাকআপ’ খেলোয়াড়েরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন কবে!

দল এই মুহূর্তে চোটজর্জর। তামিম ইকবাল নেই। সাকিবের আঙুলে চোট, মুশফিকের পাঁজরে। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেও রান নেই। এশিয়া কাপের এই পরিস্থিতিতে দলের জোয়াল কাঁধে তুলে নেওয়ার কথা ছিল লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্তদের। কিন্তু প্রথম ম্যাচে শুধু মিঠুন ছাড়া আর কেউ দলের ভার নিতে পারেননি। অবশ্য তাঁরা দলের ভার সেভাবে নিতে নিতে পারলেনই–বা কবে! গত এক বছরের পরিসংখ্যানটা আমলে নিলেই তো পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার।

শেষের দায়িত্ব নিতে পারছেন না মোসাদ্দেক। ছবি: এএফপি

পাঁচ সিনিয়র ছাড়া দলের বাকি জায়গাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই অনিশ্চিত। সবাইকে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকতে হয়। ‘ব্যাকআপ’ খেলোয়াড়দের পরিস্থিতি যেমন হয় আরকি। তবে পারফরম্যান্স এর অন্যতম কারণ। লিটনকে দিয়ে শুরু করা যায়। গত এক বছরে ৬টি ওয়ানডে খেলেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। মূলত, ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী হিসেবেই তাঁকে ভাবা হয়। গত এক বছরে ৬ ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং গড় ৯! ভুল পড়েননি। ৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে তাঁর রানসংখ্যা ৫৪। মোসাদ্দেককে ভাবা হচ্ছে ‘ফিনিশার’ হিসেবে। গত এক বছরে ৫ ম্যাচে ২৬.৫০ গড়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট ৪৫.২৯। এই হলেন আমাদের ‘ফিনিশার’!

নাজমুল হোসেন শান্তর পারফরম্যান্স ব্যবচ্ছেদ করার সময়টা এখনো আসেনি। এশিয়া কাপে সবে অভিষিক্ত হলেন তিনি। তবে তাঁর ব্যাটিং টেকনিক ও টেম্পারামেন্ট ইতিমধ্যেই ভ্রুকুটির জন্ম দিয়েছে। মিঠুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলের বিপদ সামাল দিলেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন কি? গত ১২ মাসে ৪ ম্যাচ খেলা এই ব্যাটসম্যানের গড় ২১। স্ট্রাইক রেট ৬৯.৪২। মুমিনুল হককে অবশ্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুযোগ নেই। ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ’ তকমা পেয়ে যাওয়া এই ব্যাটসম্যান আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে ফিরেছিলেন প্রায় সাড়ে তিন বছর পর। এই এক বছরে সেটিই তাঁর একমাত্র ওয়ানডে। ওই ম্যাচে তাঁর ৯ রানকে তাই এসব ‘ব্যাকআপ’ খেলোয়াড়ের সঙ্গে বিচারের সুযোগ নেই। কারণ, মুমিনুল সেদিন সুযোগ পেয়েছেন, আবার কবে সুযোগ পাবেন কে জানে!

মিঠুনের ব্যাট ধারাবাহিক নয়। ছবি: এএফপি

বাকিরা মোটামুটি নিয়মিত হলেও দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি। এবারের এশিয়া কাপে সাব্বির রহমানের দলে থাকার কথা ছিল। কিন্তু গত এক বছরে মাঠের ভেতরে-বাইরে দুই জায়গাতেই তাঁর একই রকম পারফরম্যান্স। মাঠের বাইরে ছড়াচ্ছেন বিতর্ক আর ভেতরে আউট হচ্ছেন দ্রুত। নিষেধাজ্ঞার জন্য দলের বাইরে থাকা ব্যাটসম্যানটি এই ১২ মাসে খেলেছেন ১০ ম্যাচ। ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে সেভাবে স্বীকৃত না হলেও পাঁচ সিনিয়রের বাইরে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গত এক বছরে সাব্বিরই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। অন্যভাবে বলা যায়, সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু পর্বতসম আশার প্রতিদানে তিনি মূষিক প্রসব করেছেন—স্ট্রাইক রেট ৯২.৩০ হলেও এই ১০ ম্যাচে তাঁর গড় ১৬!

নাসির হোসেনের অবস্থা আরও শোচনীয়। ৫ ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং গড় ৩.৮০! অথচ এই নাসিরকেও একসময় দেখা হয়েছে ‘ফিনিশার’ হিসেবে। ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে মোটামুটি স্বীকৃত ১০ ব্যাটসম্যানের মধ্যে গত এক বছরে ইমরুল কায়েসের ব্যাটিং গড় মোটামুটি মানের। ৩ ম্যাচে ৩৩.৩৩। স্ট্রাইক রেটও খারাপ না (৭৯.৩৬)। কিন্তু দল থেকে বাদ পড়েছিলেন বাজে পারফরম্যান্সের জন্য। এশিয়া কাপে ওপেনারদের ব্যর্থতায় ডাক পেয়েছেন সৌম্য ও ইমরুল। সৌম্য সরকারও বাদ পড়েছিলেন বাজে ফর্মের জন্য। গত ১২ মাসে ১ ম্যাচে ৮ রান করা সৌম্য কিংবা ইমরুল পারবেন তো দলের ভার কাঁধে তুলে নিতে?

নইলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। চোটজর্জর সিনিয়রেরা আর কত? ‘ব্যাকআপ’ খেলোয়াড়েরা এসব সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারলে কখনো তামিম-সাকিব হতে পারবেন না।