Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্বকাপে ভারত: এত কাছে তবুও কত দূরে!

ভারত ফাইনালে উঠতে না পারায় বিমর্ষ দুই সমর্থক। ছবি: আইসিসি
>বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিল ভারত। তার আগে এ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্মই করেছেন ভারতের ক্রিকেটাররা। কিন্তু ক্রিকেট বুঝিয়ে দিল ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও মাঝে-মধ্যে ফাইনালে ওঠার জন্য যথেষ্ট হয়ে ওঠে না

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রসিকতা চলছে, একদিনের ম্যাচ দুই দিনে হারল ভারত। অনেকে বলছেন, একদিনের ম্যাচে দুদিনে শেষ হওয়ার সুবিধা নিয়ে জিতল নিউজিল্যান্ড।

ভারতীয় সমর্থকদের মনে এখন কী বইছে তা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশের সমর্থকদের কথাই ভাবুন, পয়েন্ট টেবিলে অষ্টম হয়ে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই কাটাছেঁড়া চলছে দলের। এ হয়নি সে হয়নি আরও কত কথা! সে তুলনায় ভারতীয় সমর্থকদের মনে হতাশার সুনামি বয়ে যাওয়ার কথা। এ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলিরা ছিলেন সন্দেহাতীত ফেবারিট। সেটি বিশ্লেষক থেকে যে কোনো ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখেই। এমন দল সেমি থেকে বিদায় নেওয়ার পর বীরেন্দর শেবাগের টুইটের সঙ্গে একমত হবেন সবাই, ‘...এত কাছে তবু কত দূরে!’

সত্যিই, ফাইনালের সুবাস নিতে নিতে হেরেছে ভারত। ইনিংসের শুরুর ৩ ওভারের মধ্যেই ৫ রানে টপ অর্ডার নেই। ৯২ রানে নেই ৬ উইকেট। তারপরেও এই ম্যাচটা গড়িয়েছে শেষ ওভার পর্যন্ত। অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজার সাহসী ব্যাটিং ভারতকে নিয়ে গিয়েছিল জয়ের দ্বারপ্রান্তেই। সে কৃতিত্ব ভারতকে অবশ্যই দিতে হবে। ম্যাচ শেষে কোহলি যে কথাটা বলেছেন, সেটি মাথায় আপনাকে রাখতেই হবে—‘৪৫ মিনিটের বাজে ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে আমাদের ছিটকে ফেলল।’

কোহলির এ ৪৫ মিনিট অবশ্যই ভারতের ইনিংসের। কিন্তু তার আগে? গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচ থেকেই ফেবারিটের মতো খেলেছে ভারত। আজ সেমিতে হারের আগে গ্রুপপর্বে মাত্র এক ম্যাচ হেরেছে তারা। তবে শুধু এ পরিসংখ্যান দিয়েই ভারতে সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট হিসেবে ধরে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। রোহিত শর্মার কথাই ধরুন—বিশ্বকাপে অন্তত ৫টি সেঞ্চুরি আছে, এ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এমন ব্যাটসম্যান ছিলেন মাত্র তিনজন। অথচ রোহিত শর্মা এই এক বিশ্বকাপেই করেছেন ৫ সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড। তবু ফাইনালে উঠতে পারল না ভারত।

অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে দেখুন। এবার বিশ্বকাপে একটি সেঞ্চুরিও না পাওয়ায় অনেকে কোহলির সমালোচনা করছেন। তাঁর মাপের ব্যাটসম্যান অনুযায়ী সমালোচনাই প্রাপ্য। কিন্তু এই নিন্দা ও হতাশার ফাঁক গলে একটি ব্যাপারও চোখ এড়িয়ে গেছে। টানা পাঁচটি ফিফটি তুলে নিয়েছেন কোহলি। এ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি ছাড়া সর্বোচ্চ রানসংখ্যাও (৪৪৩) তাঁর। সেঞ্চুরি ছাড়া ১৯৯২ এবং ২০০৭ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন যথাক্রমে জাভেদ মিয়াঁদাদ ও মাইকেল ক্লার্ক। তাঁদের দল কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কোহলি তাঁর দলকে চ্যাম্পিয়ন বানানো দূরের কথা, টানা পাঁচ ফিফটি নিয়েও ফাইনালে তুলতে পারলেন না।

হতাশা থাকবে ভারতের ওপেনারদেরও। শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা—এ তিনজনের মধ্যে চোটের কারণে ধাওয়ানের বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে আগেভাগেই। লোকেশ রাহুল ধাওয়ানের জায়গা নেওয়ার পরও কমেনি ভারতের ওপেনিং জুটির ধার। সব মিলিয়ে চারবার ন্যূনতম এক শ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছেন ভারতের ওপেনাররা। এ বিশ্বকাপে যে কোনো দলের ওপেনিং জুটি তুলনায় যা সর্বোচ্চ। কিংবা যশপ্রীত বুমরার কথাই ধরুন। ১৮ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি এ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৯ মেডেন নিয়েছেন ‘ডেথ ওভার’ বিশেষজ্ঞ। ভারতকে ফাইনালে তুলতে চেষ্টার কমতি রাখেননি এ পেসার। হ্যাটট্রিক করেছেন মোহাম্মদ শামিও। আর ভারতও সেমিফাইনালে উঠেছে টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবে।

কিন্তু শীর্ষ দল হলে কী হবে, ক্রিকেট তো যে কাউকে কিংবা যে কোনো দলকেই মাটিতে নামাতে পারে। আবার তুলতেও পারে। নিউজিল্যান্ডের কথাই ধরুন। গ্রুপপর্বের শেষ দিকে হারতে হারতে সেমিতে উঠেছে কিউইরা। সে দলটাই কিনা ফাইনালে! ক্রিকেট আসলেই এক গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা!