Thank you for trying Sticky AMP!!

বিষের বছরে বলয়ে বন্দী ক্রিকেট

ইতিহাসের পাতায় ২০২০ সাল চিহ্নিত হয়ে থাকবে করোনার বছর হিসেবে। তার মধ্যেও নতুন স্বাভাবিকতায় মাঠে খেলা ছিল। ছিল মাঠ ও মাঠের বাইরে আনন্দ–বেদনার কাব্য। সেসব নিয়েই ফিরে দেখা ২০২০

২০২০। বছরের অঙ্কগুলোর সঙ্গে কী চমৎকারভাবেই না মিলে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচি। বছরটা যে শুরু হয়েছিল দু-দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আবাহন নিয়ে!

২০-২০ বা টি-টোয়েন্টির মেয়েদের বিশ্বকাপটা ভালোয় ভালোয় শেষ হতে পেরেছিল। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে রেকর্ডসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে বিশ্বকাপ জেতে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া কি পারবে বছর শেষের ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে টি-টোয়েন্টি শ্রেষ্ঠত্বের ‘দ্বিমুকুট’ মাথায় তুলতে?

প্রশ্নটা ঠিকঠাক মাথা তোলার আগেই ২০২০ পুরোপুরি বিষময়! প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস থামিয়ে দিল পুরো বিশ্বকেই। ‘খেলা দিয়া কী হইব মানুষের জান যদি না থাকে?’—সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালুর বিখ্যাত উক্তিটাই যেন বদলে গেল মার্চের মাঝামাঝিতে। ১৩ মার্চ সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ভুতুড়ে সেই প্রথম ওয়ানডের পর বাতিল হয়ে গেল সিরিজের বাকি অংশ। এরপর একে একে বাতিল হওয়া ম্যাচের সংখ্যা শুধু বেড়েছেই। আর জেগেছে একটা প্রশ্ন—এ বছর কি আর দেখা মিলবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের?

মে মাসেই এর ইতিবাচক উত্তর খোঁজার ভাবনাচিন্তা শুরু করে দেয় ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। সেটিরই ফসল জৈব-সুরক্ষিত পরিবেশে ক্রিকেট আয়োজন। করোনার ভয়ে নিষিদ্ধ হলো বলে লালা মাখানো। বদলে গেল আরও কিছু নিয়মকানুন। ‘নিষিদ্ধ’ হলেন দর্শকেরা। খেলোয়াড়েরা বাধ্য হলেন লম্বা সময়ে হোটেলকক্ষে বন্দী থাকতে। এত কিছু মেনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে গেল ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দিয়ে ৮ জুলাই সাউদাম্পটনে ‘নির্বাসন’ থেকে ফিরল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এরপর আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়াও গেল ইংল্যান্ডে। মাঠে দেখা মিলল বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীকী হাঁটু গেড়ে বসাও।

তবে এর মধ্যেই জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আইসিসি বাতিল করতে বাধ্য হয় ২০২০ সালের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এক বছর পিছিয়ে গেছে টুর্নামেন্ট। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে ভারতে। ২০২০-এর আয়োজক অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

ইংল্যান্ডের দেখানো জৈব সুরক্ষার পথে এরপর হেঁটেছে আরও কিছু দেশ। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ছাড়া টেস্ট খেলুড়ে বাকি সব দেশই এ সময়ে কিছু না কিছু ম্যাচ খেলেছে। এখন অস্ট্রেলিয়ায় চলছে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তো সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলও দারুণভাবে আয়োজন করে ফেলল। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দর্শক ফিরিয়েছে মাঠে। ইংল্যান্ডের দুই ক্রিকেটার করোনা পরীক্ষায় ‘ফলস পজিটিভ’ হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড সিরিজ বাতিল হওয়াটাই যা একটু ব্যতিক্রম।

বছরটা শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলীয় আধিপত্য দিয়ে। সিডনি টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ২৭৯ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে তাসমান প্রতিবেশীদের ধবলধোলাই করে অস্ট্রেলিয়া। সাদা পোশাকের অস্ট্রেলিয়া বছর শেষেও উজ্জ্বল। অ্যাডিলেডে গোলাপি টেস্টে ভারতকে লজ্জায় লাল বানিয়ে রেকর্ড ৩৬ রানে অলআউট করে দেয় দলটি।

তিন সংস্করণ মিলিয়ে বছরের সর্বনিম্ন স্কোরটা অবশ্য কোহলিদের নয়। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রতিবেশী নেপালের কাছে ওয়ানডেতে ৩৫ রানে অলআউট হয় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ানডেতে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডে আমেরিকানরা ভাগ বসায় জিম্বাবুয়ের রেকর্ডে।

২০২০ সালে ২৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। স্মিথদের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে শুধু ইংল্যান্ড। ৩০টি ম্যাচ খেলেছে রুট-মরগানদের দল। জৈব-সুরক্ষিত পরিবেশে দর্শকশূন্য মাঠেই বড় দুটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন দুই ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড। প্রথম পেসার হিসেবে টেস্টে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন অ্যান্ডারসন, ব্রড ছুঁয়েছেন ৫০০ উইকেটের মাইলফলক।

২০২০ সালে ছেলেদের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতে পেরেছে ১৬১টি। গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ম্যাচ হয়েছে।

বদলে যাক পৃথিবী, বিদায় নিক করোনা, ক্রিকেট ফিরে পাক হারানো সংখ্যাগুলো। এই আশাতেই ২০২১ সালের দিকে চেয়ে থাকা।

যাঁদের হারাতে হয়েছে

  • বাপু নাদকার্নি, সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অলরাউন্ডার। বয়স ৮৬।

  • ওয়াকার হাসান, পাকিস্তানের অভিষেক টেস্ট দলের সদস্য। বয়স ৮৭।

  • এভারটন উইকস, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের বিখ্যাত ‘থ্রি ডব্লু’র একজন। ৯৫ বছর।

  • ব্যারি জারমান, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার। ৮৪ বছর।

  • চেতন চৌহান, ভারতের সাবেক ওপেনার। করোনায় ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যু।

  • ডেভিড ক্যাপেল, ইংলিশ ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার ও বাংলাদেশের মেয়েদের জাতীয় দলের সাবেক কোচ। ব্রেন টিউমারে ৫৭ বছর বয়সে মৃত্যু।

  • ডিন জোন্স, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান ও ধারাভাষ্যকার। আইপিএল চলাকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৯ বছর বয়সে মৃত্যু।

  • জন রিড, নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট জেতানো প্রথম অধিনায়ক ও আইসিসির সাবেক ম্যাচ রেফারি। ৯২ বছর বয়সে মৃত্যু।

  • জন এডরিচ, ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ইংলিশ ওপেনার মারা গেছেন ৮৩ বছর বয়সে।

  • রবিন জ্যাকম্যান, ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার ও ধারাভাষ্যকার। ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু।

সবচেয়ে বেশি রান

টেস্ট ৬৪১ বেন স্টোকস, ইংল্যান্ড

ওয়ানডে ৬৭৩ অ্যারন ফিঞ্চ, অস্ট্রেলিয়া

টি-টোয়েন্টি ৪১৫ মোহাম্মদ হাফিজ, পাকিস্তান

সবচেয়ে বেশি উইকেট

টেস্ট ৩৮ স্টুয়ার্ট ব্রড, ইংল্যান্ড

ওয়ানডে ২৭ অ্যাডাম জাম্পা, অস্ট্রেলিয়া

টি-টোয়েন্টি ১৭লুঙ্গি এনগিডি, দক্ষিণ আফ্রিকা