Thank you for trying Sticky AMP!!

বিস্ময় উপহার দিয়ে চলেছেন কোচ আফতাব

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার সবার ওপরে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। দলটির সাফল্যে বারবার আসছে কোচ আফতাব আহমেদের নাম। প্রথমবারের মতো প্রধান কোচ হয়েই চমকে দিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান
প্রধান কোচ হিসেবে শুরুটা ভালো হয়েছে আফতাবের। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ‘প্লেয়ার্স ড্রাফট’ হয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। ১০ দিন আগেও আফতাব আহমেদ কাজ করেছেন মোহামেডানের হয়ে। গত তিন মৌসুম তিনি কাজ করছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবের সহকারী কোচ হিসেবে। একজন সহকারী কোচ হিসেবে আফতাবের তখন কাজ ছিল , দল গোছাতে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা। এর মাঝে হঠাৎ শুনলেন, রূপগঞ্জের নিয়মিত কোচ মঞ্জুরুল ইসলাম দায়িত্ব নিচ্ছেন মোহামেডানের। মঞ্জু মোহামেডানে আসার পরও কিছুদিন কাজ করেছেন আফতাব। প্লেয়ার্স ড্রাফটের কদিন আগে প্রস্তাব এল রূপগঞ্জের প্রধান কোচ হওয়ার—আফতাব প্রস্তাবটা লুফে নিলেন।

‘আগে কখনো হেড কোচ হিসেবে কাজ করিনি। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি’—প্রথমবারের মতো প্রধান কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করার সাহসটা এভাবেই দেখিয়েছেন আফতাব। খেলোয়াড়ি জীবনে যেভাবে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতেন, সাহসী সব শটে বল আছড়ে ফেলতেন বাউন্ডারির ওপারে। কোচ হিসেবে যখন চ্যালেঞ্জ এসেছে, সেটি নিতে পিছু পা হয়নি। কোচ হিসেবে তাঁকে প্রথম পরীক্ষা দিতে হলো প্লেয়ার্স ড্রাফটে। খেলোয়াড় নিলামের সেই পরীক্ষা মোটেও সহজ ছিল না, তাঁর কথায় বোঝা গেল,‘ড্রাফটে কীভাবে খেলোয়াড় নেব, সেটির অভিজ্ঞতা এবার প্রথম হলো। ড্রাফটে আগে কখনো বসিনি। মুহূর্তেই এখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যে দল গড়ব ভেবে ড্রাফটে গিয়েছি, সেটির ৭০ শতাংশও পাইনি। আমার ডাক এসেছে অনেক পরে। কাকে নেব, কাকে নেব না, এমন ঝুঁকি নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সত্যি বলতে প্রত্যাশা মতো খেলোয়াড় পাইনি।’

ড্রাফটের পর আফতাব দ্বিতীয় ধাক্কাটা খেলেন ডিপিএল টি-টোয়েন্টিতে। শাইনপুকুর-মোহামেডান—দুই দলের বিপক্ষে হেরে নকআউট পর্বের আগেই বিদায় নেয় রূপগঞ্জ। শুরুতেই হোঁচট খেয়ে নেতিবাচক কথাও শুনতে হয়েছে। টি-টোয়েন্টি লিগে ধাক্কা খাওয়া সেই রূপগঞ্জ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু হতেই ব্যর্থতার সড়ক থেকে ১৮০ ডিগ্রি মোড় নিয়ে উঠে এল সাফল্যের সরণিতে। ১১ ম্যাচে ১০ জয়ে ২০ পয়েন্ট নিয়ে রূপগঞ্জ সুপার লিগে পা রেখেছে পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে থেকে। প্রায় ‘জাতীয় দল’ নিয়ে খেলা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী রূপগঞ্জের চেয়ে ৪ পয়েন্ট পিছিয়ে।

প্রিমিয়ার লিগ এখনো শেষ হয়নি। শিরোপার কাছাকাছি কারা আছে, সেটিও বলার সময় হয়নি। সুপার লিগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্বটা এখনো বাকি। তবে এখনো পর্যন্ত রূপগঞ্জ যেভাবে এগোচ্ছে, কোচ আফতাবের বড় একটা হাততালি প্রাপ্য। প্রথমবারের মতো দায়িত্ব নিয়েই তিনি চমকে দিয়েছেন। যে দলে তারকা ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি নেই, বড় নাম নেই, ডিপিএল টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করতে পারেনি, সেই রূপগঞ্জ এগোচ্ছে ধারাবাহিক জিতে। দলের এই সাফল্যে কটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন আফতাব, ‘খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস খুবই ভালো। সবচেয়ে বড় কথা সবাই শৃঙ্খলাবদ্ধ। আমরা একক কোনো খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। যে ১০ ম্যাচ জিতেছি, আমাদের সাত-আটজন ম্যাচসেরা হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, আমরা এক-দুজনের ওপর নির্ভরশীল নই। খেলছি একটা দল হিসেবে। যখন যার প্রয়োজন, সে অবদান রাখছে। যার যে দায়িত্ব সেটা সে ভালোভাবে পালন করছে। যে পরিকল্পনা করছি, সেটা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করছে। এভাবেই এগোচ্ছি।’


১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগ। শিরোপা জিততে হলে এই পর্বেও ধরে রাখতে হবে ধারাবাহিকতা। আফতাব এ চ্যালেঞ্জটাও নিচ্ছেন, ‘পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে আছে বলে মোটেও আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি না। আবাহনীর বিপক্ষে জেতার পর উত্তরাকেও ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তবু ক্রিকেটে কখন কী হয়, বলা যায় না। দুইয়ে থাকা আবাহনীর চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার পর আমাদের এখন লক্ষ্য,সুপার লিগে যত সম্ভব দ্রুত টানা ম্যাচ জিততে হবে। শিরোপা নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই।’

আফতাবের রূপগঞ্জ যদি শেষ পর্যন্ত শিরোপা না জিততেও পারে, তবে তাঁর এই সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে না। ৩৩ বছর বয়সেই কোচ হিসেবে দেশের শীর্ষ লিগে যেভাবে শুরুটা করেছেন, বাহাবা তিনি পাবেনই। তবে খেলোয়াড়ি জীবনে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পরও যেভাবে সেঞ্চুরি ফেলে আসতেন, কোচ হিসেবে নিশ্চয়ই সেটি করবেন না! কোচিংয়ের ২২ গজে যখন থিতু হয়ে গেছেন আফতাবের চোখ নিশ্চয়ই সেঞ্চুরির দিকে। আর সেটি যদি হয়ে যায় এ অভিষেকেই, তাহলে তো কথায় নেই!