Thank you for trying Sticky AMP!!

মিরাজ কিছুতেই ভয় পান না কারণ...

>

কোনো কিছুতেই না নেই মেহেদী হাসান মিরাজের। বোলিং আক্রমণের শুরুটা করেন নিয়মিতই। প্রতিপক্ষের মারমুখী ব্যাটসম্যানের সামনে দাঁড়িয়ে। হালে ব্যাটিংয়ের শুরুটাও করলেন। এমন আত্মবিশ্বাস কোথায় পান এই তরুণ?

মিরাজের আত্মবিশ্বাসটা হিমালয়ের মতোই। ফাইল ছবি

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মেহেদী হাসান মিরাজকে বলা হলো, ইনিংসের শুরুতে ক্রিস গেইলের বিপক্ষে বোলিং করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মারকুটে ওপেনারকে আটকাতে হবে। সুবোধ বালকের মতো মিরাজ রাজি। ২০ বছর বয়সী স্পিন অলরাউন্ডারকে এশিয়া কাপের ফাইনালের আগের রাতে বলা হলো, এবার ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতে হবে। জীবনে কখনো ওপেন না করা মিরাজ হয়ে গেলেন তাতেও রাজি!

শুধু রাজিই হন না, মিরাজ কাজটা সফলভাবে করেনও। এই যে যখন যেটি করতে বলা হয়, মিরাজ দুবার না ভেবে রাজি হয়ে যান, এই সাহসটা তিনি পান কীভাবে? এ ধরনের দায়িত্ব নেওয়ার ঝুঁকিও তো থাকে। ঝুঁকিটা ব্যর্থ হওয়ার, ঝুঁকিটা সমালোচনায় পড়ার। আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা মিরাজ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন চ্যালেঞ্জ নিতেই তিনি ভালোবাসেন, ‘সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। কঠিন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ আমি উপভোগ করি। আর পেছন থেকে যখন টিম ম্যানেজমেন্ট সমর্থন দেয়, আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড় সবাই যখন সমর্থন দেয়, আত্মবিশ্বাসটা অনেক বেড়ে যায়। ফাইনালের আগের রাতে যখন আমাকে বলা হয় ওপেন করতে হবে, তখন মাশরাফি ভাই, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) বললেন, পারবি, সমস্যা নেই! তখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেল। তাঁরা আরও কিছু কথা বলেছে, যেটা শুনে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস পেলাম। এই জিনিসটাই, নিজের আত্মবিশ্বাস আর সবার সমর্থন কাজে দেয় ভালো করতে।’

২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে যে বিস্ময় বালককে দেখেছিল বাংলাদেশ, সেই মিরাজ এখন দলের অন্যতম ভরসা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে টেস্টে নিয়মিত হলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিত হতে একটু সময় লেগেছে তাঁর। ২০ বছর বয়সী অলরাউন্ডারের বোলিংয়ে চোখে পড়ার মতো উন্নতি দেখা গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে, এমনকি সবশেষ এশিয়া কাপেও। মিরাজ নিজেই জানালেন বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনতে বেশ কিছু কাজ করেছেন গত কয়েক মাসে, ‘আগের তুলনায় এখন একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করছি। মানসিকভাবে একটু শক্ত হয়েছি। আর বোলিংয়ে কিছু বৈচিত্র্য এনেছি, এগুলো হয়তো কাজে দিচ্ছে। বৈচিত্র্য বলতে, আগে প্রায়ই এক গতিতেই বল করতাম। আগে সিমের পজিশন একটু অন্য রকম ছিল। সিমের গতিপথ পরিবর্তন করেছি। আগে ৪৫ ডিগ্রিতে বল করতাম। এখন ৯০ ডিগ্রিতে করছি। একটু অদলবদল করে বল করছি। গতি পরিবর্তন করে কিছু বৈচিত্র্য এনেছি।’

বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনলেও মিরাজকে টেস্ট ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুই ভূমিকায় দেখা যায়। টেস্টে তিনি উইকেটশিকারি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে লক্ষ্য থাকে তাঁর কৃপণ বোলিং করা। বিশেষ করে ওয়ানডেতে কেন উইকেটশিকারির ভূমিকা পালন করেন না, সেটির বিশদ ব্যাখ্যা করলেন মিরাজ, ‘প্রতিপক্ষ দলের ওপেনাররা যখন রান তাড়া করে খেলে, তখন আমার কাজ থাকে তাদের রান আটকে বল করা। যদি ওদের রান থামিয়ে রাখতে পারি তাহলে আমার যে বোলিং পার্টনার থাকবে, সে উইকেট বের করে নিতে পারবে। ওয়ানডেতে সব সময়ই আমার ভূমিকা থাকে রান থামিয়ে রাখা। হয়তো আমি উইকেট পাচ্ছি না, তবে সতীর্থ বোলাররা উইকেট পাচ্ছে। দিন শেষে কিন্তু দলের সাহায্য হচ্ছে। আমি রান থামিয়ে রাখতে পারলে প্রতিপক্ষ দলে চাপে পড়বে, আর আমাদের অন্য বোলাররা উইকেট পাবে। এটাই আমার চেষ্টা থাকে, এর মধ্যে যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে উইকেট পেয়ে যাই।’

এশিয়া কাপে হঠাৎ ওপেনিংয়ে নেমেছেন। আরেকবার সুযোগ পেলে কি ওপেন করবেন? মিরাজ হাসেন, ‘নিজেও ভাবিনি যে ফাইনালে ওপেন করব। মাশরাফি ভাই ম্যাচের আগের দিন রাতে বলেছেন, যারা সিনিয়র আসছে সবাই অনেক সমর্থন দিয়েছেন। এটা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি, যেকোনো মুহূর্তে আমাকে দলের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় নামতে হতে পারে। আমাকে তাই সব সময়ই মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।’

এই হচ্ছেন মিরাজ, ছোটখাটো গড়নের, বয়সও বেশি নয়। তবে তাঁর সাহস, আত্মবিশ্বাস হিমালয় সমান।