Thank you for trying Sticky AMP!!

মুশফিককে তাতিয়ে দেয় ভারতের দর্শকেরা

মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
>

প্রতিপক্ষ কখনো দুর্বল হয়, কখনো হয় প্রবল। হয় প্রিয়-অপ্রিয়ও। কিছু প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাঠে নামাটা যেন নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতা। আবার কোনো কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে একটু বেশিই পছন্দ করেন খেলোয়াড়েরা। বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রিয় প্রতিপক্ষ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনে আজ জানুন মুশফিকুর রহিমের প্রিয় প্রতিপক্ষের কথা—

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ কে?

উত্তর দিতে খুব বেশি ভাবতে হলো না মুশফিকুর রহিমকে। চট করে বলে দিলেন, 'প্রিয় প্রতিপক্ষ বলতে শ্রীলঙ্কা, ভারত দুটোই।'

একমাত্র দল না হোক, মুশফিকের প্রিয় প্রতিপক্ষের তালিকায় শ্রীলঙ্কার থাকাটা অনুমিতই। আজ থেকে সাত বছর আগে ফিরে যান। ২০১৩ সালের মার্চে গল টেস্টে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে। ডাবল সেঞ্চুরি এরপর তিনি করেছেন আরও দুটি। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিকও একমাত্র মুশফিকই। তবু কোনো কিছু প্রথম করার আনন্দ, প্রথম স্মৃতি—এগুলোর আলাদা মূল্য থাকেই। মুশফিক জীবনে যতবার তাঁর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কথা মনে করবেন, ততবারই মনে পড়বে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার কথাও। তা ছাড়া ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করার চেয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা ডাবল সেঞ্চুরিটিই তো বেশি গর্বের হওয়ার কথা।

মজার ব্যাপার হলো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩টি টেস্ট খেললেও ওই একটি ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়া আর কোনো সেঞ্চুরি নেই মুশফিকের। ওয়ানডেতেও দলটার বিপক্ষে তাঁর সেঞ্চুরি মাত্র একটি। দুবাইয়ে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ম্যাচে মুশফিকের ১৪৪ রানের সেই ইনিংসটিই ১৩৭ রানের বড় জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। তবু শ্রীলঙ্কাকে প্রিয় প্রতিপক্ষের মর্যাদা দেওয়ার কারণ মূলত গল টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিটিই।

কিন্তু প্রিয় প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতের কথাও যে বলে রাখলেন তিনি! শুধু বলেনইনি, পরে যোগ করেছেন, 'এখন আসলে অন্যদের তুলনায় ভারতকেই আমার ফেবারিট প্রতিপক্ষ বলা যায়।' রেকর্ডের খাতায় চোখ রাখলে পরিষ্কার হবে প্রতিপক্ষ হিসেবে মুশফিকের ভারতপ্রীতির কারণটাও। টেস্টে তাঁর রানের গড় যেখানে ৩৬.৭৭, সেখানে ভারতের বিপক্ষে সেটি ৫১.৮০। টেস্টে মুশফিকের এর চেয়ে বেশি রানের গড় আছে শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই (৬০.৪২)। ভারতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত ছয়টি টেস্ট খেলে সেঞ্চুরি করেছেন দুটি। যাদের বিপক্ষে খেললেই সাফল্য আসে, সেই দলটা তো মুশফিকের প্রিয় হবেই।

কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিপক্ষদের সারি থেকে ভারতকে আলাদা করে বেছে নেওয়ার কারণ অন্য। মুশফিক বলছিলেন, 'ভারত ফেবারিট কারণ, ভারতের বিপক্ষে খেলাটাই আমার কাছে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়।' সেই চ্যালেঞ্জটা যে শুধু ভারতীয় ক্রিকেটাররাই জানান তা নয়, মুশফিক তাকাচ্ছেন গ্যালারির দিকেও, 'এমনিতেই ভারত বিশ্বের সেরা দলগুলোর মধ্যে থাকে সব সময়। তার ওপর ওদের সঙ্গে খেলার সময় বেশির ভাগ জায়গায় আমাদের বিপক্ষেই দর্শক বেশি থাকে। বেশির ভাগ থাকে ভারতের সমর্থক। সে জন্য ভারতের সঙ্গে খেলতে গেলে অন্য রকম একটা রোমাঞ্চ কাজ করে। খেলার প্রস্তুতির সঙ্গে মানসিক প্রস্তুতিটাও তখন ভিন্ন রকমের হয়।'

যে ভারতকে মুশফিক প্রিয় প্রতিপক্ষের এক নম্বরে রেখেছেন, তাদের বিপক্ষে দুঃস্মৃতিও আছে তাঁর। বলতে পারেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় দুঃস্মৃতিই। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটির কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি কেউই। সুপার টেনে ভারতের কাছে ১ রানের হারা ম্যাচটাতে তীরে এসে বাংলাদেশের তরি ডুবেছিল শেষ ওভারে মুশফিক ভুল শট খেলে আউট হওয়াতেই।

বেঙ্গালুরুর সে ম্যাচে শেষ ওভারে ১০ রান হলেই জিতে যায় বাংলাদেশ। উইকেটে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। হার্দিক পান্ডিয়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে পরপর দুই বাউন্ডারি আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে। পরের বলেই সর্বনাশ! শর্ট বল ছিল, স্লোয়ারও। কিন্তু মুশফিকের পুল শট ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়ে শিখর ধাওয়ানের হাতে। দুর্ভাগ্য, ওভারের শেষ দুই বলেও বাকি ২ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। মুশফিকের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা দূরে থাক, উল্টো ওই দুই বলে পরপর উইকেট দিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ ও মোস্তাফিজ।

সেই দুঃস্বপ্ন কিছুটা ভোলার উপলক্ষ মুশফিক পেয়ে যান গত বছরের শেষ দিকে ভারতে গোলাপি টেস্টের সফরে। দুই টেস্টের সিরিজের আগে ভারতের বিপক্ষে দিল্লি, নাগপুর আর রাজকোটে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলে বাংলাদেশ দল। মুশফিকের ৪৩ বলে অপরাজিত ৬০ রানের সুবাদে যার প্রথমটিতেই জয়, ভারতের বিপক্ষেই এখন পর্যন্ত একমাত্র টি-টোয়েন্টি জয় বাংলাদেশের। বেঙ্গালুরুতে আসতে পারত যে জয়, সেটি না হয় দিল্লিতেই এল; ট্র্যাজেডির নায়ক থেকে এবার তো নায়কই হলেন মুশফিক! ৭ উইকেটের জয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচও তিনি।

দিল্লির এই ম্যাচ মুশফিককে বাড়তি তৃপ্তি দিয়েছে নিশ্চিত। এক বাংলাদেশের মাঠ ছাড়া বিশ্বের সব মাঠেই তো ভারতের সমর্থক বেশি। সবচেয়ে বেশি সন্দেহাতীতভাবেই ভারতে। সেদিক দিয়ে ভারতের মাটিতে ভারতের দর্শকদের সামনে প্রিয় প্রতিপক্ষ ভারতকে হারানোটা মুশফিকের জন্য বিশেষ কিছু হতে বাধ্য।