Thank you for trying Sticky AMP!!

আবার হতাশ করলেন মুশফিক

মুশফিকের ‘আত্মহত্যায়’ শুরুর হাসি ম্লান বাংলাদেশের

‘সে মজা করছে, তাই না?’

মার্ক নিকোলাসের কণ্ঠে অবিশ্বাস। যা ঘটেছে তা বিশ্বাস করা আসলেই কঠিন। মাত্রই পঞ্চাশ পেয়েছেন এক ব্যাটসম্যান। তাঁকে পেশাদার বলে অনেক স্তুতি বাক্য খরচ করলেন ধারাভাষ্যকার। এক বল পরই তাঁর এমন শট দেখে অবিশ্বাস না করে উপায় কী? বল ঘুরছে এমন এক উইকেটে খেলছেন, সেশনের আর মাত্র এক ওভার বাকি, দলকে টানার গুরুদায়িত্ব কাঁধে। এই অবস্থায় মুশফিকুর রহিম রিভার্স সুইপ করে আউট হয়েছেন আজ।

দিনের শুরুতে ইয়াসিরের ব্যাটিং ম্যাচ পরিস্থিতিই ভুলিয়ে দিচ্ছিল। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটিটাও এগোচ্ছিল তরতর করে। প্রথম সেশনটা ওভাবেই কাটিয়ে দেওয়ার আশা জাগিয়েছিলেন ইয়াসির ও মুশফিক। কিন্তু কেশব মহারাজের আবির্ভাবে খোলসে ঢুকলেন দুজন। প্রথম সেশনটা তাই বাংলাদেশের হয়নি। একদিকে মহারাজে ইয়াসিরের বিভ্রান্তি, ওদিকে মুশফিকের ‘আত্মহত্যা’ বাংলাদেশের ভালো শুরুটা ভেস্তে দিয়েছে। মধ্যাহ্নবিরতির আগে ২ উইকেট হারিয়ে সফরকারীরা তুলেছে ৭১ রান। ৭ উইকেট হারিয়ে ২১০ রান তুলেছে বাংলাদেশ।

চমৎকার খেলছিলেন ইয়াসির

দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ভাবা হয়েছিল আজ হাল ধরবেন মুশফিক। ৫ উইকেট পরে যাওয়া দলের ক্ষেত্রে দলের অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যানের ওপরই তো ভরসা করতে হয়। একদিকে ৩০ রানে অপরাজিত মুশফিক। অন্যদিকে এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘হাঁটিহাঁটি পা পা’ করা ইয়াসির। কিন্তু শুরুতে সব আলো কেড়ে নিলেন ৮ রানে গতকাল মাঠ ছেড়ে যাওয়া ইয়াসিরের।

দিনের শুরুতেই হ্যাটট্রিক। ইয়াসির আলীর হঠাৎ স্লিপ, গালি, ব্যাক ওয়ার্ড পয়েন্ট ও পয়েন্ট-মাঠের এই চারটি অবস্থানের পার্থক্য বোঝানোর ইচ্ছা হলো। বৃষ্টি বাঁধা পেরিয়ে দিনের খেলা শুরু হতেই এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান গিনিপিগ বানালেন লিজাড উইলিয়ামসকে। দিনের প্রথম তিনটি বল কখনো স্লিপ ও গালির মাঝখান দিয়ে, কখনো ছুটল ব্যাক ওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে। মন খারাপ করে দ্বিতীয় দিন শেষ করা বাংলাদেশ ড্রেসিংরুম চনমন করে উঠল মুহূর্তেই। নির্বাচক হাবিবুল বাশারের করতালিও আদায় করে নিলেন ইয়াসির।

৪৬ রানে ফিরেছেন ইয়াসির

লিজাডকে ওভাবে তৃতীয় দিনে আমন্ত্রণ জানিয়েও সন্তুষ্ট হননি ইয়াসির। উইলিয়ামসের পরের ওভারের প্রথম বলেই আবার গালি ও ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ব্যবধান বোঝালেন। ডুয়েন অলিভিয়েরের পরের ওভারে স্কয়ার লেগের সীমানার খোঁজও নিলেন। ম্যাচ তখন ওয়ানডেতে রূপ নিয়েছে, ৩৭ বলে ৩১ রান তখন ইয়াসিরের। একটু পর মুশফিকও দুটি চার মারলেন। মহারাজকেও চার মেরে স্বাগত জানালেন ইয়াসির।

১৩৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ ৯ ওভারের মধ্যে ১৮০ রানে পৌঁছে গেল। এরপরই বাংলাদেশের মনে পড়েছে এটা টেস্ট ম্যাচ। পরের ১০ ওভারে এসেছে তাই ১২ রান। এতে আপত্তির কিছু নেই। টেস্ট ক্রিকেট তো এটাই দাবি করে। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পুরোনো রোগটা আবারও ধরা পড়েছে। হয় আক্রমণাত্মক, না হলে অতিমাত্রায় রক্ষণাত্মক—এর বাজে প্রভাবটা আবারও টের পাওয়া গেল। অনেকক্ষণ রান তুলতে না পারার চাপ সামলাতে না পেরেই বিদায় নিলেন ইয়াসির।

উইকেটে স্পিন ধরছে, এমন অবস্থায় ফ্লিক করতে চাইলেন ইয়াসির। কিন্তু টাইমিং ঠিকমতো, বলটা ব্যাটের কানায় লেগে চলে গেল মহারাজের কাছে। সেটাও অনেক নাটক করে ধরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি স্পিনার। প্রথমে বল তাঁর কবজিতে লেগে বাহুতে চলে গেল। জলাভূমিতে মাছ ধরার দৃশ্য মনে করিয়ে দিয়ে সে বলটা কোনোমতে বুকের মধ্যে আটকে রাখলেন মহারাজ। ৪৬ রানে বিদায় নিলেন চমৎকার এক ইনিংসে আশা দেখানো ইয়াসির।

মুশফিককে আউট করার পর হারমারের উল্লাস

১৯২ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে টেনে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল মুশফিকের। ৪২ রানে থাকা মুশফিক সে দায়িত্ব নিয়েছেন বলেই মনে হয়েছিল। মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়েই এগোচ্ছিলেন একটু একটু করে। সেশন শেষ হওয়ার একটু আগে ঘটল অঘটন। সাইমন হারমারকে সুইপ করে ১৩৪ বলে পঞ্চাশের দেখা পেলেন। পরের বলে দেখা পেলেন সৌভাগ্যেরও। তাঁর বিরুদ্ধে জোরালো এলবিডব্লুর আবেদন করেছিলেন হারমার। আম্পায়ার তাতে সারা দেননি। রিভিউ সব আগেই নিয়ে ফেলায় সে সিদ্ধান্ত বদলানোর উপায়ও ছিল না। কিন্তু পরে রিপ্লে দেখাল, রিভিউ থাকলে মুশফিক সে বলে আউট হতেন।

পরের বলেই মুশফিকের সেই মুহূর্ত। প্রায় ফুল লেংথের বলে রিভার্স সুইপ করতে গেলেন। তাতে অফ স্টাম্প উপড়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো ফল মেলেনি। ৫১ রান করে আরও একবার নিজের বিবেচনাবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফিরেছেন মুশফিক।

তাইজুল ও মিরাজ মিলে সেশনের বাকি ৯টি বল কাটিয়ে দিয়েছেন। ২৪৩ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের সব আশা-ভরসা এখন স্পিন জুটির কাঁধে।