Thank you for trying Sticky AMP!!

মুশফিকের যে রেকর্ডে আনন্দ আছে, থাকছে আফসোসও

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়েছেন মুশফিক। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বাংলাদেশ দলের হয়ে এখন সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা খেলোয়াড়ের নাম মুশফিক। ৬২ টেস্টের মাইলফলকে পৌঁছানোর সময় মুশফিকের বয়স ৩১। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন, এই রেকর্ড যেমন মুশফিককে আনন্দিত করবে, একটা আফসোসও বের হয়ে আসবে তাঁর বুক চিরে


কাল জ্যামাইকা টেস্টে খেলতে নেমে একটা রেকর্ড গড়েছেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ দলের হয়ে তিনিই এখন সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা খেলোয়াড়। মুশফিক পেছনে ফেলেছেন ৬১ টেস্টে খেলা মোহাম্মদ আশরাফুলকে। ৬২ টেস্টে যখন পৌঁছেছেন, মুশফিকের বয়স তখন ৩১। 

এই ৩১ বছর বয়সেই শচীন টেন্ডুলকার খেলে ফেলেছিলেন ১১৪ টেস্ট। ৫৭.৩৯ গড়ে ৩৩ সেঞ্চুরি আর ৩৭ ফিফটিতে তাঁর রান তখন প্রায় ১০ হাজার ছুঁইছুঁই। ব্রায়ান লারা অবশ্য অতটা খেলেননি, তবু সংখ্যাটা মুশফিকের চেয়েও বেশি, ৬৫। জাতীয় দলে থিতু হতেই প্রায় ৪ বছর লেগে যাওয়া সৌরভ গাঙ্গুলীও ৩১ বছর বয়সে ৬৮ টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন।
টেন্ডুলকার-লারা-সৌরভের মতো কিংবদন্তির কথা রাখুন। তাঁরা যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন, তখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মচ্ছব শুরু হয়নি। যদি এই সময়ের খেলোয়াড়দের কথা বলা হয়, সেখানেও টেস্ট খেলায় মুশফিকের এগিয়ে থাকার সুযোগ নেই। তাঁর পরে অভিষেক হওয়া অ্যালিস্টার কুক ৩১ বছর বয়সে খেলে ফেলেছেন ১২৮ টেস্ট, ১০ হাজারের ওপর রান করেছেন। শুধু টেস্টে মনোযোগী কুকের সঙ্গে মুশফিকের তুলনা চলে না। তুলনা চলে না এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে। যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘ক্লান্ত’ হয়ে অবসর ঘোষণা দিয়েছেন, সেই এবিও ৩১ বছর বয়সে ৯৮ টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন।
মুশফিকের অনেক পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা বিরাট কোহলি কিংবা জো রুটের সঙ্গে যে তুলনা করবেন। দুজনই মুশফিকের চেয়ে বেশি টেস্ট খেলে ফেলেছেন। ২০১১ সালে অভিষিক্ত কোহলি খেলেছেন ৬৬টি, ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা রুট সেখানে ৬৯। এমনকি ২৫ বছর বয়সে টেস্ট আঙিনায় পা দেওয়া ডেভিড ওয়ার্নার নানা বিতর্কের মধ্যেও গত সাত বছরে খেলে ফেলেছেন ৭৪ টেস্ট। চোটাঘাতে বারবার ক্যারিয়ার থমকে যাওয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসেরও ৩১ বছর বয়সে ৭৩ টেস্ট খেলা হয়ে গেছে।
যাঁদের কথা বলা হলো, সবাই টেস্ট ক্রিকেটকে ভীষণ গুরুত্ব দিয়েছেন বা দেন। কিন্তু যাঁরা ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগেই টেস্টকে ‘বাতিল’ করে দিয়েছেন, ক্রিস গেইল, মাহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে তুলনা করলেও পিছিয়ে থাকবেন মুশফিক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ক্রিস গেইল ৩১ বছর বছর বয়সে ৮৮ টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন। ৪০ গড়ে তত দিন একটা ট্রিপল সেঞ্চুরিও যোগ হয়েছিল ক্যারিয়ারে। ২৪ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হওয়া ধোনিও বছর ৩১ হতে ৬৭ টেস্ট খেলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে দল টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে ১–এ উঠেছে।
যেভাবে বারবার বয়স প্রসঙ্গে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, মনে হতে পারে মুশফিক বুঝি ইচ্ছে করেই টেস্ট কম খেলেছেন। আসলে তা নয়। বাংলাদেশ দলে যেকজন ক্রিকেটার টেস্ট বলতে অন্তঃপ্রাণ, মুশফিক তাঁদের একজন। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণের প্রতি তাঁর এতটাই ভালোবাসা, অভিষেকে পাওয়া ব্যাগি গ্রিন টুপিটা পরে যাচ্ছেন টানা ১৩ বছর। তাঁর আফসোস একটাই—যে ব্যাগি গ্রিন এতটা ভালোবাসেন, সেটি পরার সুযোগই পান কম।
এখনো বছরে ১০টা টেস্ট খেলা হয় না বাংলাদেশের। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন, এই রেকর্ড যেমন মুশফিককে আনন্দিত করবে, একটা আফসোসও বের হয়ে আসবে বুক চিরে। গত মে মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ বছর পূর্তিতে মুশফিক বলেছিলেন, ‘ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের মতো এত টেস্ট খেলার সুযোগ পাই না। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো যদি টেস্ট খেলার সুযোগ পেতাম, ১২-১৩ বছরে আমার হয়তো ১৩০ বা ১৫০ টেস্ট খেলা হয়ে যেত।’