Thank you for trying Sticky AMP!!

মোসাদ্দেক হোসেন

নাম

 মোসাদ্দেক হোসেন

জন্ম

 ডিসেম্বর ১০, ১৯৯৫, ময়মনসিংহ

ধরন

 ডানহাতি মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান

অভিষেক

 বনাম আফগানিস্তান, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬

ময়মনসিংহ জেলা স্টেডিয়ামের কর্মকর্তা আবুল কাশেম স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেট নিয়ে। ঐতিহ্যবাহী এই শহরটা থেকে বেরিয়ে এসেছেন নানা দিকের নানান তারকা। ক্রিকেটকেও তিনি উপহার দিতে চেয়েছিলেন এমনই এক নক্ষত্র। আর সেই চিন্তা থেকেই মাঠে নিয়ে এলেন নিজের জ্যেষ্ঠ পুত্রকে। বড়ছেলে বলেই হয়তো ডাকনামটাও দিয়েছিলেন বড় কিছুর সঙ্গে মিল রেখে—সৈকত! বড় ভাইয়ের দেখাদেখি মাঠে চলে এল সান-মুনও। গর্ব করে আবুল কাশেম বলতেন, তাঁর ছেলেরা একদিন জাতীয় দলে খেলবে।

ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট, বাংলাদেশের প্রথম ফাইনাল জয়ের নায়ক, ফার্স্ট ক্লাসে রানের ফল্গুধারা ছুটিয়ে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, টেস্ট অভিষেকে নজরকাড়া ব্যাটিং, টেস্ট বাঁচাতে স্বভাববিরুদ্ধ কচ্ছপগতির ইনিংস—ছোট্ট ক্যারিয়ারে মোসাদ্দেক হোসেনের অর্জনের পাল্লা নেহাত হালকা নয়। কিন্তু আফসোস একটাই... জাতীয় দলে মোসাদ্দেক খেললেও সেই দিনটা দেখার জন্য বাবা যে আর পৃথিবীতে নেই!

বাংলাদেশের বর্তমান দলের বেশির ভাগই উঠে এসেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে। মোসাদ্দেকও এর ব্যতিক্রম নন। তবে শুরুটা হয়েছিল বিকেএসপি থেকে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ঢাকা বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। তবে অভিষেকটা হলো একেবারে যাচ্ছেতাই, দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হলেন, পরের ম্যাচেই বাদ পড়লেন দল থেকে। সে বছর আর গোটা মৌসুমেই আর সুযোগ আসেনি। তবে চমক দেখালেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। ব্যাট হাতে মাত্র ৪ ইনিংসে ৯৩.৫০ গড়ে ১৮৭ রান, বল হাতে ৬ ম্যাচে ১১টি উইকেট নিয়ে প্রমাণ করলেন নিজের সামর্থ্য।

পরের বছরই ঘুরিয়ে ফেললেন ভাগ্যচক্র। বরিশাল বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নেমে দুটো সেঞ্চুরি মেরে বসলেন, আর দুটোকেই পরিণত করলেন দ্বিশতকে! ২০১৫ সালে করলেন আরও এক দ্বিশতক, হলেন বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান যার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটি দ্বিশতক রয়েছে। তবে খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার, দীর্ঘ পরিসর ক্রিকেটে সাফল্যের পর তিনি ডাক পেলেন টি-টোয়েন্টি দলে! ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অভিষেকটাও হয়ে গেল বটে, তবে সেটাতে চোখে পড়ার মতো সাফল্য পেলেন না। যথারীতি, চলে গেলেন কোচ হাতুরুসিংহের টি-টোয়েন্টি পরিকল্পনার বাইরে।

তবে আবাহনীর হয়ে ডিপিএলে নজরকাড়া পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখলেন। ৭৭.৭৫ গড়ে ৬২২ রান করলেন ১০৪.৮৯ স্ট্রাইকরেটে, নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে খেললেন ছয়-সাত নম্বরে। অন্তত তিন-চারটি ম্যাচে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখ থেকে বাঁচিয়েছেন দলকে, অনায়াসে তুলেছেন ঝড়। ফলাফলস্বরূপ, সুযোগ পেলেন ওয়ানডে ফরম্যাটে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকটা রাঙালেন ৪৫ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস দিয়ে, পরে বল হাতেও ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে তুলে নিলেন ২টি উইকেটও।

পরের বছর মার্চে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের স্কোয়াডে সুযোগ মিলল মোসাদ্দেকের, তবে মাঠে নামা হলো না। সেই সুযোগ হলো বাংলাদেশের শততম টেস্টে, শ্রীলঙ্কা সফরে। প্রথম ইনিংসেই ৭৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে মন জিতে নিলেন সবার। এরপরও ঠিক থিতু হতে পারলেন না, দ্বিতীয়বার টেস্ট খেলতে নামলেন পরের বছর সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন নেমেছেন, বাংলাদেশ তখন জয়-পরাজয়ের দোলাচলে। চাপের মুখে ব্যাটিং করতে নেমে দলের প্রয়োজনে স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে মোসাদ্দেক হয়ে উঠলেন অভেদ্য এক দুর্গ, ৫৩ বলে কোনো সুযোগ না দিয়ে অপরাজিত রইলেন মাত্র ৮ রান করে। দলও ড্র করতে সক্ষম হলো।

তবে লাভের লাভ তাঁর আর হলো কোথায়! পরের ম্যাচেই তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হলো সাইডবেঞ্চে। এরপর আজ অবধি আর টেস্ট ক্রিকেটে নামা হয়নি তাঁর। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ডাবল সেঞ্চুরি যার নামের পাশে লেখা, সেই ব্যাটসম্যানই কেন আজও জাতীয় দলে থিতু হলেন না, এই রহস্য উদ্‌ঘাটন নেহাত সহজ ব্যাপার নয় বৈকি!

মাঝে বেশ কিছুদিন চোখে ‘ভাইরাল কেরাটাইটিস’ সংক্রমণের জন্য ছিলেন মাঠের বাইরে। চোখের আড়াল হলে মনেরও আড়াল হয়, মোসাদ্দেকও তাই আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন। মাঝে কিছুদিন ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যার কারণেও কিছুদিন সরিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং বিপিএলে পারফর্ম করে আবারও ডাক পেলেন জাতীয় দলে, অতিমানবীয় এক ইনিংস খেলে সেই ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি’র পর দলকে জেতালেন প্রথম শিরোপা। খেললেন বিশ্বকাপ, হয়ে উঠলেন মাশরাফি বিন মুর্তজার অন্যতম সেরা অস্ত্রে। বাংলাদেশের পরম আরাধ্যের ফাইনাল তো জয় হলো তাঁরই অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে!

তামিম ইকবাল প্রায়ই বলেন, মোসাদ্দেকের মস্তিষ্ক নাকি ৪৫ বছর বয়সী কোনো প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বের মতো। মাত্র ২৩ বছর বয়সী যেকোনো তরুণের জন্যই এটা দারুণ এক প্রশংসাবাণী। মোসাদ্দেক কি পারবেন প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপটাকে নিজের পরিণত ক্রিকেটমস্তিষ্ক দিয়ে সাফল্যের রঙে রাঙাতে? সেই সামর্থ্য যে তাঁর রয়েছে, সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার মতো কাউকে অবশ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না!

[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত]