Thank you for trying Sticky AMP!!

যখন হাতের ফাঁক গলে চলে যায় সেমির স্বপ্ন

মহা গুরুত্বপূর্ণ রোহিতের ক্যাচ শুরুতেই ফেলে দিয়েছেন তামিম। ছবি: প্রথম আলো
>বিশ্বকাপের বেশ কয়েকটি ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশ। দিন শেষে হাতছাড়া করা সুযোগগুলোই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।

১৬৬ ও ১০ এর ব্যবধান কত? ১০৪ ও ৯ এর মধ্যে তফাৎ-বা কত? পাটিগণিতের ভাষায় হিসাবটা সহজ। কিন্তু ক্রিকেটীয় পরিভাষায়? একটি ম্যাচের কিংবা একটি বিশ্বকাপেরও ভাগ্য বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই তফাতগুলো।

‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’, অতি ব্যবহারে কিছুটা ক্লিশেই হয়ে গেছে কথাটা। কিন্তু এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে ব্যবহার না করেও উপায় নেই। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন যে সুতোর ওপর ঝুলেছে ভারত ম্যাচের আগে। এবং সেটা আজকের হারে শেষ হয়ে গেছে, তার পেছনে অন্যতম বড় কারণ ফিল্ডারদের ‘মাখন লাগানো’ হাতের। সহজ সব ক্যাচ ছেড়ে প্রতিপক্ষ দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানদের জীবন দিয়েছেন, সেটিরই ফায়দা তুলে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন তারা।

সবচেয়ে টাটকা উদাহরণটি তো আজকের ম্যাচেই উপস্থিত। ২০১৯ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছেন রোহিত শর্মা। ওয়ানডেতে তিনটি দ্বিশতকের মালিক রোহিত আজকের আগেই এ বিশ্বকাপে করে ফেলেছিলেন তিনটি সেঞ্চুরি। রোহিতের উইকেটের মূল্য তাই অজানা থাকার কথা নয় বাংলাদেশি বোলার-ফিল্ডারদের।

উইকেটে ভালোভাবে জেঁকে বসার আগেই সুযোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার। কিন্তু বাংলাদেশ সুযোগ নিতে পারলে তো! পঞ্চম ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমানের শর্ট বলে পুল করেছিলেন, টাইমিংটা ঠিকমতো হয়নি। ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন তামিমকে। অথচ বুকের ওপর থাকা বলটা মিস করলেন বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফিল্ডার তামিম। মাত্র ৯ রানে থাকা রোহিত এরপর ইচ্ছেমতো ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। তুলে নিয়েছেন এ বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর বেশি দূর এগোতে না পারলেও সর্বনাশ যা করার ততক্ষণে করে দিয়ে গেছেন। জীবন পাওয়ার পর যোগ করেছেন আরও ৯৫ রান।

রোহিতের চেয়েও বড় ক্ষতিটা করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। আজকের মতো নটিংহ্যামের সে ম্যাচেও ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওপেনিং জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচটা হাতে রাখতে পারেননি সাব্বির রহমান। ক্যাচ ছাড়ার সময় মাত্র ১০ রানে থাকা ওয়ার্নার এরপর তাণ্ডব চালিয়েছেন বাংলাদেশি বোলারদের ওপর। প্রথম অস্ট্রেলীয় হিসেবে ওয়ানডেতে দ্বিশতকের দিকে এগোতে থাকা ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত করেছিলেন ১৬৬ রান। এক ক্যাচ ছাড়ার মূল্য হিসেবে অতিরিক্ত ১৫৬ রান গুনতে হয়েছিল বাংলাদেশকে! ম্যাচটাও বাংলাদেশ হেরেছিল ৪৮ রানে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে আছে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি। বাগে পেয়েও সেদিন হারানো যায়নি কিউইদের। অথচ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকমও হতে পারত সেদিন। কেন উইলিয়ামসন যখন মাত্র ৮ রানে, মুশফিকুর রহিম মিস করলেন সহজতম রান আউটের সুযোগটা। সেই উইলিয়ামসন পরে যোগ করেছেন আরও ৩২ রান। ওই একই ওভারে রস টেলকেও স্ট্যাম্পিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন মুশফিক। একটু কঠিন হলেও বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বের করে আনতে হলে এসব সুযোগ কাজে লাগাতেই হয়। ৯ রানে থাকা টেলর শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ৮২ রানে। সে ম্যাচে একটুর জন্য ২ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। স্লো স্কোরিং ম্যাচে উইলিয়ামসন-টেলরের ব্যাট থেকে আসা অতিরিক্ত ১০৫ রানই গড়ে দিয়েছিল ম্যাচের ভাগ্য।

এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা ম্যাচেও দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশি ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত। ডেভিড মিলার যখন ১৬ রানে, ক্যাচ ছেড়েছিলেন সৌম্য সরকার। মিলার পরে যোগ করেছিলেন আরও ২২ রান। এর আগে কুইন্টন ডি ককের ক্যাচও ছেড়েছিলেন মুশফিক, তবে ওই একই বলে ডি কক রান আউট হয়ে যাওয়ার সেটি নিয়ে অত আলোচনা হয়নি।

শুধু ক্যাচিং নয়, বিশ্বকাপে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটাও একদমই মনমতো হয়নি বাংলাদেশের। ভারত ম্যাচের আগে পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বিশ্বকাপে মিস ফিল্ডিং থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান হজম করেছে বাংলাদেশ। বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে ৬০ রান অতিরিক্ত গুনতে হয়েছে। মিস ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রান দিয়েছে কেবল আফগানিস্তান। টুর্নামেন্ট শেষে এ পরিসংখ্যানগুলো নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ক্ষতস্থানে আরেকটু জ্বালা ধরাবে।

আরও পড়ুন

হাত ফসকানোর পরিসংখ্যানটা দেখেছে বাংলাদেশ?