Thank you for trying Sticky AMP!!

মোহাম্মদ রমজান আলী।

রমজান যখন জফরা আর্চার!

ব্যাক অফ লেংথ থেকে বল বেশ লাফিয়ে ওঠে। গতি কম নয়। প্রায় ৯০ মাইল বেগে যেন আগুনের গোলা ছুটে যায় ব্যাটসম্যানদের দিকে। আগুনের এই গোলা কোনো ফাস্ট বোলার নন, ছোড়েন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঠকর্মী মোহাম্মদ রমজান আলী। ক্রিকেটারদের অনুশীলনে নিয়মিত ডাক পড়ে রমজানের। থ্রো-ডাউন করে ব্যাটসম্যানদের অনুশীলনে সহায়তা করেন তিনি। মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করে এখন পুরোদস্তুর থ্রো-ডাউন বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছেন ৩১ বছর বয়সী রমজান।

ইংলিশ ফাস্ট বোলার জফরা আর্চারও রমজানের মতো ব্যাক অফ লেংথে দুর্দান্ত বোলিং করেন। সেখান থেকেই ভয়ংকর বাউন্সার দেন তিনি। আর্চার যেমন জোরে বল করলেও শরীরী ভাষায় মনেই হয় না জোরে করছেন। রমজানও অনেকটা তা–ই। হেলেদুলে এসেই যেন আগুনের গোলা ছাড়েন তিনি। রমজানের লাইন-লেংথও বেশ ধারাবাহিক। তাই মজা করে হাই পারফরম্যান্স দলের ক্রিকেটাররা রমজানকে ডাকেন আর্চার নামে। কোচ টবি রেডফোর্ডও রমজানের বল ছোড়ার জোর দেখে মুগ্ধ।

মুশফিকের সঙ্গে রমজান

রমজানও পুরো বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলছিলেন, ‘চেষ্টা থাকে সব সময় ভালো লেংথে বল করে যাওয়ার। হার্ড লেংথে বেশি করার চেষ্টা করি। ব্যাটসম্যানরাও যেন দ্রুত উন্নতি করে। এই লেংথে বোলিং করি দেখেই ব্যাটসম্যানরা আর্চার নামে ডাকে। আর্চারও একই লেংথে বল করে তো, তাই।’ গতি দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে পছন্দ করেন রমজান।

চাইলে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল ছুড়তে পারেন। তবে রমজান বললেন, ঘণ্টায় গড়ে ১৪৫ কিলোমিটারেই থাকে তাঁর গতি, ‘চেষ্টা করলে গতি আরও বাড়ানো যায়। কিন্তু অনেক বল করতে হয়। তাই শক্তি জমিয়ে করি। গড়ে তাই ১৪৫-এর আশপাশে থাকে। বেশি করাও লাগে না।’

মিরপুর স্টেডিয়ামের মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করা রমজানের বল ছোড়া শুরু ২০১৩ সাল থেকে। মুমিনুল হককে একদিন খালি হাতে বল ছুড়ে অবাক করে দেন তিনি। তখন স্পিড আর্ম ছিল না। খালি হাতই ভরসা। রমজান বলছিলেন, ‘প্রথমে হাত দিয়ে করতাম। মুমিনুল একদিন বলে, “আপনি তো অনেক জোরে করেন। মাঝে মাঝে আপনি আসবেন। ভালো হবে।” তারপর গামিনিকে বলে কিছু সময় বের করে চলে আসতাম। পরে স্পিড আর্ম আসার পর সেটা দিয়ে চেষ্টা করতে করতে হয়ে গেল।’

স্পিড আর্ম হাতে রমজান।

মুমিনুলের পর একে একে জাতীয় দলের অনেকেই রমজানকে নেটে ডাকা শুরু করেন। বল ছুড়তে ছুড়তে এখন ব্যাটসম্যানদের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা ধরতে পারেন রমজান, ‘উন্নতি হচ্ছে। লাইন-লেংথ বুঝতে পারি এখন। কোন জায়গায় করলে ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করা যায়, তাদের দুর্বল জায়গা কোথায়, এখন এসবই চেষ্টা করছি।’ কদিন আগে সাকিব আল হাসানের নেটেও বল ছুড়েছেন রমজান।

বিকেএসপিতে থাকা অবস্থায় সাকিবকে তিন দিন অনুশীলন করিয়েছেন তিনি, ‘সাকিব ভাইয়ের নেটে তিন দিন কাজ করেছিলাম। ভালো ব্যাটিং করেছেন। গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না অবশ্য। অনেক দিন পর ব্যাটিং করছেন, সে কারণে হয়তো।’

জাতীয় দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা ছিল রমজানের। সিরিজটি না হওয়ায় রমজানের প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে যাওয়া হয়নি। ক্রিকেটারদের কাছে রমজানের কদর বাড়ায় এখন আর মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতে হয় না। একাডেমি আর ইনডোরে বেশি ব্যস্ত থাকেন তিনি। এ ব্যস্ততাটা বেশ উপভোগই করছেন রমজান, ‘নিজের কাছে ভালোই লাগে। একটা সময় ছিল ক্রিকেটারদের কাছে যেতে পারিনি, কথা বলতে পারিনি। এখন তাঁরাই ডাকছেন। কথা বলছেন। ভালো লাগছে।’

জাতীয় দলের অনুশীলনে এখন নিয়মিত মুখ রমজান।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল ছুড়ে যাওয়ার কাজটা সহজ নয়। নিজেকে ফিট রাখতে বিশেষ কিছু ব্যায়াম করতে হয় রমজানকে, ‘কিছু কাজ তো করাই লাগে। জিম করি। হাত–পায়ের কিছু কাজ করি। একজন বোলার ৮-১০ ওভার বল করলে এমনিই শক্তি চলে যায়। আমি সারা দিনে তিন-চার ঘণ্টা টানা করে যেতে পারছি। দেখা যায় দিনে ৫০০-৬০০ বল ছুড়ি।’

এবারের আইপিএলে বাংলাদেশ থেকে রবিউল করিমকে থ্রোয়ার হিসেবে নেওয়া হয়। আবাহনী ও বিপিএল দল ঢাকা ডায়নামাইটসের থ্রোয়ার ছিলেন তিনি। ক্রিকেটাররাও রবিউলকে নেটে চাইতেন। জাতীয় দলের কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনের সহায়তায় আইপিএল দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের থ্রোয়ার হিসেবে কাজের সুযোগ পান রবিউল। বিসিবির আরেক থ্রোয়ার বুলবুলও আইপিএলের ডাক পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আইপিএলে যাওয়া হয়নি বুলবুলের। কে জানে, রমজানও হয়তো একদিন আইপিএলে যাবেন বল ছুড়তে!