ডিপ মিড উইকেট ও স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে দুজন ফিল্ডার রেখে বোলিং করছিলেন তাসকিন আহমেদ। বাঁহাতি ইমরুল কায়েস খেলছিলেন ৫৯ রানে। মাথা বরাবর বল করে ইমরুলকে পুল শটে বাধ্য করার জন্যই এই পরিকল্পনা। টাইমিংয়ে একটু গড়বড় হলেই ওই দুই ফিল্ডারের যে কারও হাতে ক্যাচ।
তাসকিন বাউন্সার দিলেন। ইমরুলও পুল শট খেলতে গেলেন। কিন্তু বল স্কয়ার লেগে না গিয়ে ইমরুলের গ্লাভস ছুঁয়ে গেল তাসকিনের দিকেই। ফলো থ্রুতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটা তালুবদ্ধ করেন তাসকিন।
রায়ান কুক একাদশের খেলোয়াড়দের জোরালো আবেদনের সামনে একটু সময় নিয়ে আঙুল তোলেন আম্পায়ার। ইমরুল তো অবাক! ক্রিজ ছাড়তেই রাজি নন তিনি। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর কিছুক্ষণ কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রিজ ছাড়েন চোখে মুখে অবিশ্বাস নিয়ে। যেতে যেতে আম্পায়ারকে কি যেন বলছিলেন ইমরুল।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ, তবু উত্তেজনার যেন কমতি নেই। নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে খেলা, তবু কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। দ্বিতীয় দুই দিনের ম্যাচের প্রথম দিনে আজ ইমরুল-মাহমুদউল্লাহ ফিফটি করলেও রানের জন্য কষ্ট করতে হয়েছে তাঁদের।
দিন শেষে ইমরুল বলছিলেন, ‘সবাই সচেতন হয়েছে। সেই সঙ্গে পেশাদারও। যেটা আমাদের ক্রিকেটের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটসম্যানরাও চেষ্টা করেছে উইকেটে থেকে রান করতে। কিন্তু সহজে রান করতে পারেনি, বোলাররা তাঁদের সেই সুযোগ দেয়নি। কষ্ট করে রান করতে হয়েছে।’
রায়ান কুক একাদশের বিপক্ষে ওটিস গিবসন একাদশ করেছে ৮ উইকেটে ২৪৮ রান। তাসকিন আজও ছিলেন বল হাতে উজ্জ্বল। প্রথম দুই দিনের ম্যাচে ৪ উইকেটের পর আজ নিয়েছেন ৩ উইকেট।
প্রথম ম্যাচে ইমরুল বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। তবে আজ নতুন বল সামাল দিয়েছেন বেশ নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং করে। বাজে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন দারুণ সব ড্রাইভে।
মাহমুদউল্লাহও ছিলেন ছন্দে। তাসকিন-খালেদদের বিপক্ষে বেশ কিছু দারুণ শট খেলেছেন। ক্রিজে এসে দ্রুত ৪৪ রান যোগ করেন লিটন দাস। প্রথম দুই দিনের ম্যাচে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, সাইফ হাসান, সৌম্য সরকারদের ফিফটি যেন ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইমরুল বলছিলেন, 'প্রথম ম্যাচটা খেলেছিলাম অনেক দিন পর। মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হচ্ছিল, তারপরও ভালো খেলেছে সবাই। কিন্তু আমি খুব একটা ভালো খেলতে পারিনি। তবে এই ম্যাচে পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ঠিক ছিল। ব্যাটিং যেভাবে করতে চেয়েছিলাম সেভাবেই করতে পেরেছি।'
জাতীয় দলের পেসারদের অধিকাংশই প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করেছেন। সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল আজও। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কিছুটা জড়তা কাজ করলেও পেসারদের দেখে মনেই হয়নি তাঁরা করোনার বিরতি পার করে এসেছেন। ‘বোলিংয়ে সবাই ছন্দে আছে। মনেই হয়নি যে তাঁরা বিরতির মধ্যে ছিল’—বলেছেন ইমরুল।
আজ দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ শেষ হলে কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে শুরু হবে তিন দলের ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট। এরপর করপোরেট টি-টোয়েন্টি আয়োজনের পরিকল্পনা বিসিবির। দীর্ঘ বিরতির পর ধাপে ধাপে ক্রিকেট শুরু করায় বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইমরুল।