Thank you for trying Sticky AMP!!

রুবেল হোসেন

নাম

মোহাম্মদ রুবেল হোসেন

জন্ম

জানুয়ারি ০১,১৯৯০, বাগেরহাট, খুলনা

ধরন

ডানহাতি ফাস্ট বোলার

অভিষেক

বনাম শ্রীলঙ্কা, জানুয়ারি ১৪,২০০৯

বাংলাদেশে একজন এক্সপ্রেস বোলারের হাহাকার আজীবনের। যার সেই সামর্থ্য ছিল, সেই মাশরাফি বিন মুর্তজা একের পর এক ইনজুরির শিকার হয়ে এখন ১৩০-এর কাছাকাছি গতিতেই ঘোরাফেরা করেন। বাংলাদেশ তাই সেই সময়ে হন্যে হয়ে খুঁজছে একজন সত্যিকারের ফাস্ট বোলার।

এমন সময় মহাসমারোহে আয়োজন করা হলো গ্রামীণফোন পেসার হান্ট। রুবেল তখন ঘরোয়া ক্রিকেটে তৃতীয় বিভাগ লিগে খেলছেন। শুনলে এই প্রতিযোগিতার কথা, সাহস করে নামও দিয়ে দিলেন। এরপর আর দেখে কে! পেসার হান্টে হলেন প্রথম, চোখে পড়ে গেলেন কোচ সারোয়ার ইমরানের। তাঁর হাত ধরেই সুযোগ পেলেন জাতীয় দলের নেটে বোলিং করার। নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন ভরসার কারণে সারোয়ার ইমরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সুযোগ পেলেই।

এই নেটে বোলিং করতে করতেই হঠাৎ করেই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। না ছড়িয়ে উপায় কী, বোলিং অ্যাকশনের সঙ্গে যে লাসিথ মালিঙ্গার বোলিং অ্যাকশনের অনেক মিল! মালিঙ্গা তখন রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে, তাঁর বল সামলাতে সবার রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা। সেই মুহূর্তেই আগমন রুবেলের, নাম তো ছড়াবেই! নেটে রুবেলের বোলিং দেখেই পত্রিকার শিরোনাম হয়ে গেল: এসে গেছে বাংলাদেশের মালিঙ্গা!

অনূর্ধ্ব-১৯ দল হয়ে রুবেল দ্রুতই পৌঁছে গেলেন জাতীয় দলের দোরগোড়ায়। দরজাটা খুলেও গেল একদিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেদিন অভিষেক হলো রুবেলের, নেহাতই আনকোরা, ঘরোয়া ক্রিকেটেও ম্যাচ খেলেছেন হাতেগোনা। তবু সুযোগ পেলেন, কারণ তাঁর দুর্দমনীয় গতি। আর অভিষেক ম্যাচেই জাত চেনালেন নিজের, প্রথমে কিছুটা খরুচে হলেও পরে একে একে চারটি উইকেট তুলে নিয়ে গুটিয়ে দিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপের লেজটুকু।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল ২০১১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সফরের পর থেকে হঠাৎই যেন সব এলোমেলো হয়ে গেল, কোথায় যেন হারিয়ে গেল রুবেলের জাদু। ইনজুরির কবলে পড়ে হারিয়ে গেল তাঁর ‘এক্স ফ্যাক্টর’ গতির ঝড়টাও। অগত্যা, আবারও ধরনা দিলেন কোচ সারোয়ার ইমরানের কাছে, তিনিও বাতলে দিলেন টোটকা। রুবেলের ক্যারিয়ার আবার কক্ষপথে ফেরা শুরু।

প্রমাণও মিলল হাতেনাতে। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২৬ রান দিয়েই তুলে নিলেন ৬টি উইকেট। নামগুলোর ওজনও কম নয়; ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, রস টেলর, গ্রান্ট এলিয়ট, নাথান ম্যাককালাম, কোরি অ্যান্ডারসন, জিমি নিশাম। শুধু এতটুকু শুনেই যদি তুষ্ট হয়ে থাকেন, জেনে রাখা ভালো, এই ছয় উইকেটের মধ্যে রয়েছে একটি হ্যাটট্রিকও! ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কোরি অ্যান্ডারসন, জিমি নিশাম—তিনজনকে পরপর তিন বলে আউট করে বাংলাদেশের মাত্র তৃতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করে নাম লেখালেন ছোট্ট এক তালিকাতে। এই তালিকাতে পরে যুক্ত হয়েছে তাইজুল ইসলাম এবং তাসকিন আহমেদের নামও।

এরপর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু সমস্যার কারণে অনেকটাই ট্র্যাক থেকে সরে যান রুবেল, কিছুদিনের জন্য হাজতবাসও করতে হয়েছিল। তবু তাঁর ওপর ভরসা হারাননি নির্বাচকেরা। বিশ্বকাপে জায়গা করে নেন রুবেল। সেই ভরসার প্রতিদানও দিয়েছেন। সেই দলে গতির ঝড় তোলার জন্য ছিলেন তাসকিন আহমেদও, তবু দলের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বোলার ছিলেন রুবেলই। আর সেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে আইকনিক মুহূর্তগুলোর একটা তো তাঁকে ঘিরেই, দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে অ্যান্ডারসনকে সাজঘরে ফেরানোর পর সেই উন্মত্ত দৌড়, মৌচাকের মতো জমাট বেঁধে ওঠা উল্লাস...ইতিহাসের পাতায় ঢুকে যেতে এর চেয়ে বেশি আর কী-ই বা চাইতে পারতেন রুবেল!

ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেওয়া রুবেলই বিশ্বকাপের পর নিজেই হারিয়ে ফেললেন ছন্দ। পড়তি ফর্মটুকুতেও দলকে যথাসম্ভব সমর্থন দিয়ে গেছেন। মোস্তাফিজুর রহমানের উত্থানের সময়টুকুতে পার্শ্বনায়কের ভূমিকা পালন করে গেছেন নিবিষ্টচিত্তে।

২০১৭ সালের পর থেকে দলের মূল বোলিং আক্রমণের ছবিতে রুবেল অনিয়মিত এক চরিত্র। তবে বিশ্বকাপ ২০১৯ এবং ইংল্যান্ড এই দুটি শব্দ রুবেলকে আবারও জাগিয়ে দিতে পারে। চার বছর আগে চৌদ্দশিক দেখে এসে খলনায়ক থেকে জয়ের নায়ক বনে গিয়েছিলেন। এর চেয়ে বড় দুঃসময় আর কী হতে পারে। সেটা যদি জয় করতে পারেন, মূল একাদশে জায়গা হারানো তো সে তুলনায় কিছুই নয়। রুবেল নিশ্চয়ই আবার কঠিন সময়কে জয় করবেন।

[সকল তথ্য-উপাত্ত এই বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত]